মহনবী (সা.)-এর মায়ের ইন্তেকাল যেমন ছিল

মুফতি নূরুল আলম
মুফতি নূরুল আলম
শেয়ার
মহনবী (সা.)-এর মায়ের ইন্তেকাল যেমন ছিল

আমেনা বিনতে ওহাব মহানবী (সা.)-এর সম্মানিত মা। তাঁর পিতার নাম ওহাব ইবনে আবদে মানাফ। তাঁর বংশধারা হলো—আমেনা বিনতে ওহাব বিন আবদে মানাফ বিন জুহরা বিন কিলাব বিন মুররা। কিলাব পর্যন্ত গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পিতা আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের বংশের সঙ্গে মিলে যায়।

বিয়ের আগে তাঁর জীবনযাপন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না।

বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মা আমেনা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে গর্ভে ধারণ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) পূর্ণ ৯ মাস তাঁর মা আমেনার গর্ভে ছিলেন। কিন্তু অন্য নারীরা সাধারণত ব্যথা, বমি ইত্যাদি যেসব বিষয়ের সম্মুখীন হন, তিনি এগুলোর কোনো কিছুরই অভিযোগ করেননি।

মা আমেনা গর্ভবতী থাকা অবস্থায়ই তাঁর স্বামী আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুত্তালিব মারা যান। এ কারণে তিনি গভীরভাবে শোকাহত হন।

নবীজি (সা.)-এর বাবা আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার সময় পাঁচটি উট, জমিনের কিছু অংশ, একজন দাসী, যার নাম উম্মে আইমান ইত্যাদি ছাড়া কোনো কিছু রেখে যাননি। হস্তি বাহিনীর ঘটনার ৫০ বছর পর (প্রসিদ্ধ মতে) ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার মা আমেনা এই বরকতময় সন্তান প্রসব করেন।

কিন্তু হাদিসবিশারদ, তাফসিরবিদ ও ইতিহাস গবেষকদের মতে, মহানবী (সা.) ৮ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন। সাইয়েদা আমেনাকে স্বপ্নযোগে যে সংবাদ দেওয়া হয়েছিল তা তিনি চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করলেন। তিনি দেখলেন, নবজাতক মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর হাত ও হাঁটুতে ভর করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। হাতের আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে তর্জনী আঙুল দিয়ে তাসবিহ পাঠ করার মতো ইশারা করছেন। মা আমেনা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিবের কাছে পুত্রসন্তান প্রসবের সংবাদ পাঠালেন।

দাদা আবদুল মুত্তালিব নাতির জন্মের সংবাদ পেয়ে দ্রুত চলে এলেন। অতঃপর আমেনা ‘তাঁর গর্ভকালীন স্বপ্ন ও মুহাম্মাদ নাম রাখার নির্দেশ’ ইত্যাদি তাঁর শ্বশুরের কাছে বললেন। দাদা আবদুল মুত্তালিব শিশু মুহাম্মাদ (সা.)-কে নিয়ে কাবা চত্বরে চলে গেলেন।

বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে আল্লাহর কাছে দোয়া ও শুকরিয়া আদায় করলেন এবং শিশুর নাম রাখলেন মুহাম্মাদ (সা.)। লোকেরা তাঁকে এই নাম রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি চাই, যেন আসমানে আল্লাহ তাআলা এবং জমিনে সব মানুষ তার প্রশংসা করুক।’

আর মা আমেনাই মুহাম্মদ (সা.)-কে সর্বপ্রথম দুধ পান করান। তিনি তাঁকে সাত দিন পর্যন্ত স্তন্যদান করেন। অতঃপর হালিমা সাদিয়া (রা.) শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে নিজ গোত্রে ফিরে যান। এখানেই রাসুল (সা.)-এর বক্ষবিদারণের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনার পর হালিমা সাদিয়া (রা.) নবী (সা.)-কে মক্কায় মা আমেনার কাছে অর্পণ করেন। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত নবীজি (সা.) মা আমেনা ও তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন।

একদিন মা আমেনা তাঁর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এবং ছেলেকে মামাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ইয়াসরিবের বনি আদি ইবনে নাজ্জার গোত্রে যেতে চাইলেন। শ্বশুর আবদুল মুত্তালিবও তাঁকে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। তিনি মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর দাসী উম্মে আইমানকে সঙ্গে নিয়ে ইয়াসরিবে যান। সেখানে প্রায় এক মাস অবস্থান করেন। রাসুল (সা.) ইয়াসরিবে অবস্থানের সময় ইহুদি সন্ন্যাসীরা তাঁকে দেখেছিল এবং তাদের একজন তাঁর দিকে তাকিয়ে তাঁকে বলেছিল : হে বালক, তোমার নাম কী? তিনি জবাব দিলেন, ‘আহমদ’। তখন সে সন্ন্যাসী তাঁর পিঠের দিকে তাকিয়ে বলল, এই বালক এই উম্মতের নবী।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মা ও মামাদের বিষয়টি জানান। এতে মা আমেনা অত্যন্ত ভয় পান। তিনি রাসুল (সা.)-কে নিয়ে ইয়াসরিব থেকে বের হয়ে মক্কার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু মক্কা পর্যন্ত পৌঁছার আগেই আল আবওয়া নামক স্থানে মা আমেনা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি অনুভব করলেন যে তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। তিনি দাসী উম্মে আইমানকে তাঁর সন্তানের ব্যাপারে অসিয়ত করে যান।

এ সময় তিনি নিম্নোক্ত বাক্যগুলো আবৃত্তি করেন : ‘জীবন মাত্রই মরতে হবেই। প্রত্যেক নতুন বস্তুই একদিন না একদিন পুরাতন ও নষ্ট হয়ে যাবেই। বস্তু যত বড় বড়ই হোক না কেন, তা একদিন না একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবেই। আমিও মারা যাব, কিন্তু আমার স্মৃতি অবশিষ্টই থেকে যাবে। আমি ভালো কিছু রেখে যাচ্ছি। এবং পূতঃপবিত্র সন্তান জন্ম দিয়েছি।’ এরপর মা আমিনা মারা যান এবং যেখানে মারা যান সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়।

তথ্যঋণ : তাবাকাতে ইবনে সাআদ : ১/৪১; সুবুলুল হুদা : ১/৩৯৫ ও সিরাতে মোস্তফা : ১/৫৩।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আজকের নামাজের সময়সূচি, ২১ মার্চ ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ২১ মার্চ ২০২৫

আজ শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১, ২০ রমজান ১৪৪৬
ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহরের সময় শুরু ১২টা ৯ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ২৭ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ১৩ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ২৭ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ৪৯ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ২ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৬টা ১০ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

আল্লাহর ভালোবাসা লাভের আমল

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
আল্লাহর ভালোবাসা লাভের আমল

বান্দার সৌভাগ্যের মূল ভিত্তি হলো, আল্লাহর ভালোবাসা। যার অন্তরে মহান আল্লাহর ভালোবাসা আছে, তার আত্মা প্রশান্ত হয়। তার অন্তরে হিদায়াতের আলো প্রজ্বলিত হয়। তার দুনিয়া ও আখিরাত সাফল্যমণ্ডিত হয়।

তাই তো নবীজি (সা.) মহান আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধির দোয়া করতেন। তিনি দোয়া করতেন—‘হে আল্লাহ! আমি আপনার ভালোবাসা, আপনার প্রেমিকদের ভালোবাসা এবং সেই আমলের ভালোবাসা চাই, যা আমাকে আপনার মহব্বতের নিকটবর্তী করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৩৫)

কারণ আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসে তখন আসমানের অধিবাসীরাও তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যদি কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন জিবরাইল (আ.)-কে ডাক দেন এবং বলেন, নিশ্চয়ই আমি অমুক লোককে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাস।

তিনি বলেন, তখন জিবরাইল (আ.) তাকে ভালোবাসেন। অতঃপর তিনি আকাশমণ্ডলীতে ঘোষণা দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুক লোককে ভালোবাসেন, সুতরাং আপনারাও তাকে ভালোবাসুন। তখন আকাশবাসীরা তাকে ভালোবাসে। তিনি বলেন, এরপর দুনিয়াতে তাকে নন্দিত, সমাদৃত করা হয়।
(মুসলিম, হাদিস : ৬৫৯৮)

এই হাদিসটি দেখলে পবিত্র কোরআনের সেই আয়াতটি মনে পড়ে যায়, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং সত্ কাজ করে, পরম করুণাময় অবশ্যই তাদের জন্য (বান্দাদের হৃদয়ে) ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৯৬)

বর্তমান যুগে চারদিকে ফিতনা ছড়িয়ে পড়েছে, মানুষের মধ্যে গাফিলতি জেঁকে বসেছে, দুনিয়াবি আকর্ষণে মানুষের মনে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া এবং তাঁর মহব্বত অর্জনের উপায় অনুসন্ধান করা।

নিম্নে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের কিছু উপায় তুলে ধরা হলো—

কোরআন তিলাওয়াত : পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত এবং তা নিয়ে গবেষণা মানুষকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করে। তাই আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এটি একটি কল্যাণময় কিতাব, তোমার কাছে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তারা এর আয়াতগুলোর প্রতি চিন্তা-ভাবনা করে, আর জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ২৯)

ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল আমল করা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ...আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে...। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

নিজের ইচ্ছার চেয়ে আল্লাহর ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দেওয়া : নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যায়, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে—(১) আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে সর্বাধিক প্রিয় হওয়া, (২) কাউকে কেবল আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, (৩) কুফরে ফিরে যাওয়া এতটাই অপছন্দ করা, যেমন—আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৬)

আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলি সম্পর্কে জানা : আল্লাহর গুণবাচক নাম সম্পর্কে জানা এবং সেগুলোর অর্থ ও গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করা। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৮)

আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের কথা স্মরণ করা : কারণ আমাদের যা কিছু আছে, সব তাঁরই দেওয়া, ভালোবাসার উপযুক্ত একমাত্র তিনিই। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে যে কোনো নিয়ামত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫৩)

আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্য গ্রহণ করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসরণ করে থাকে, তাই তোমাদের প্রত্যেককে দেখা উচিত কাকে সে বন্ধু বানাচ্ছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৮)

মন্তব্য

বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে না পারলে করণীয়

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
শেয়ার
বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে না পারলে করণীয়

যেসব নারী-পুরুষ অতিশয় বার্ধক্যের কারণে দুর্বল বা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুশয্যায় উপনীত, তাদের জন্য রোজা না রাখা বৈধ।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো। নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।

আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সত্ কাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩-১৮৪)

মাসআলা : রোজা রাখতে অক্ষম বৃদ্ধ ব্যক্তি রোজার পরিবর্তে ফিদিয়া আদায় করবেন।

(কামুসুল ফিকহ : ৪/৪৫০)

বৃদ্ধের সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া হয়েছে, এই পরিমাণ বৃদ্ধ যে তার মধ্যে একেবারে ক্ষমতা নেই এবং মৃত্যুর নিকটবর্তী পৌঁছে গেছে, বয়সের কোনো সীমা নেই। শক্তি থাকা এবং না থাকাটাই বিবেচ্য। যতক্ষণ পর্যন্ত রোজা রাখতে পারে যদিও না কি কষ্টের সঙ্গে হয়, রোজা রাখবে। কাজা রোজা ধারাবাহিকভাবে রাখা প্রয়োজন নেই।

পৃথক করে রাখবে ফিদিয়া দেওয়া ওই সময় পর্যন্ত যথেষ্ট নয়; যতক্ষণ পর্যন্ত একেবারে রোজা রাখার ক্ষমতা হারিয়ে না ফেলে, কোনোভাবেই রোজা রাখতে পারে না।

রোজার ফিদিয়ার পরিমাণ

রোজার ফিদিয়া হচ্ছে, একজন মিসকিনকে দুই বেলা ভরপেট খাবার খাওয়ানো। মালেকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবের বেশির ভাগ আলেমের মতে, খাদ্যদানের মাধ্যমে রোজার ফিদিয়া আদায় করবে।

তবে হানাফি মাজহাব মতে, খাবারের পরিবর্তে প্রতি রোজার জন্য সদকাতুল ফিতর পরিমাণ দ্রব্য বা মূল্য দিলেও ফিদিয়া আদায় হয়ে যাবে।

সদকাতুল ফিতিরের পরিমাপ হলো এক কেজি ৬৫০ গ্রাম গম, আটা বা তার মূল্য অথবা তিন কেজি ২৭০ গ্রাম জব, খেজুর, পনির ও কিশমিশ বা তার মূল্য গরিবকে দান করা।

(রদ্দুল মুহতার : ৫/১৪৪)

মাসআলা : ফিদিয়া আদায় করার পর সুস্থ হলে ভাঙা রোজাগুলো কাজা করতে হবে। আগের ফিদিয়া প্রদান যথেষ্ট হবে না। তবে ফিদিয়া আদায়ের কারণে তার সওয়াব আমলনামায় থেকে যাবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৬৫)

মাসআলা : ফিদিয়া আদায় করার মতো কোনো সম্পদ না থাকলে তাওবা-ইস্তিগফার করবে। সেই সঙ্গে এই নিয়ত রাখা যে ‘আল্লাহ তাআলা সচ্ছলতা দান করলে ফিদিয়া আদায় করে দেব।’ অসচ্ছল অবস্থায় মারা গেলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কারণ সাধ্যের বাইরে বান্দার ওপর আল্লাহ কোনো কিছু চাপিয়ে দেন না। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৪৯, আপকে মাসায়েল : ৪/৬০২)

মাসআলা : প্রশ্ন—রমজান মাসের ফিদিয়ার টাকা যদি রমজান আসার আগেই অগ্রিম দেওয়া হয়, তাহলে কি ঠিক হবে?

উত্তর : রমজান শুরু হওয়ার আগে ফিদিয়া দেওয়া ঠিক নয়। রমজান শুরু হওয়ার পর দেবে। রমজান মাস শুরু হওয়ার পর বাকি সামনের দিনের ফিদিয়াও একসঙ্গে দিতে পারবে। এর বিপরীতে সদকায়ে ফিতর রমজান মাস আসার আগেও দেওয়া বৈধ; বরং কয়েক বছরের সামনের ফিতরও দিতে পারবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৩৬)

মাসআলা : জাকাতযোগ্য খাতে ফিদিয়া দিতে হবে। (রাদ্দুল মুহতার : ২/৭৯, ৮৫৪)

মাসআলা : ফিদিয়ার অর্থ কোনো এতিমখানায় প্রদান করা যাবে। নাবালেগ নিঃস্ব এতিমের পেছনে ব্যয় করার জন্য তার অভিভাবককে অর্থ দেওয়া জায়েজ আছে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/২৫৮, রাদ্দুল মুহতার : ২/৮৫)

 

মন্তব্য

সবচেয়ে লম্বা সময় রোজা রাখছেন যেসব দেশের মুসলিমরা

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
সবচেয়ে লম্বা সময় রোজা রাখছেন যেসব দেশের মুসলিমরা
সংগৃহীত ছবি

মহিমান্বিত রমজান মাসে রোজা পালন করছেন বিশ্বের শত কোটি মুসলিম। সৌর বর্ষপঞ্জির হিসাবের বিবেচনায় চান্দ্রবর্ষপঞ্জিতে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ দিন কম হওয়ায় রোজার সময়সীমায় পরিবর্তন হয়। আর প্রতি ৩০ বছরের মধ্যে গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমের মধ্যে রমজান মাস ঘূর্ণায়মান থাকে। মূলত অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ এবং নিরক্ষরেখা থেকে দেশের অবস্থান অনুসারে রোজার সময়সীমায় এ তারতম্য হয়।

সবচেয়ে বেশি সময় রোজা রাখবেন যারা

এবার সবচেয়ে বেশি সময় রোজা রাখবেন গ্রিনল্যান্ডের নুউক ও আইসল্যান্ডের রেকজাভিক অঞ্চলের মুসলিমরা। তারা প্রায় ১৭ ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় রোজা রাখছেন। তা ছাড়া ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি, সুইডেনের স্টকহোম, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো, কানাডার অটোয়া শহরের মুসলিমরা প্রায় ১৭ ঘণ্টা রোজা রাখছেন। 

যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিসের মুসলিম বাসিন্দারা ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা রোজা রাখছেন।

এদিকে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ, ইতালির রোম, স্পেনের মাদ্রিদ শহরের বাসিন্দারা প্রায় ১৫ ঘণ্টা রোজা রাখছেন।

সবচেয়ে কম সময় রোজা রাখবেন যারা

এবার সবচেয়ে কম সময় রোজা রাখছেন চিলির পুয়ের্তো মন্ট ও নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে অবস্থানরত মুসলিমরা। তারা ১২ ঘণ্টা বা এর চেয়ে বেশি সময় রোজা রাখবেন।

এদিকে আর্জেন্টিনার বুয়েনেস এইরেস ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের মুসলিমরা ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় রোজা রাখছেন।

ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়া, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে ও জিম্বাবুয়ের হারারে শহরের মুসলিমরা ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা রোজা রাখবেন।

সূত্র : আলজাজিরা

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ