সাহরির সময় কোরআন তিলাওয়াত

মাওলানা বেলাল হোসাইন (কাতিব)
মাওলানা বেলাল হোসাইন (কাতিব)
শেয়ার
সাহরির সময় কোরআন তিলাওয়াত

রমজান মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান। ইতিহাস সাক্ষী, আমাদের পূর্বসূরি মনীষীরা রমজানে অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় কোরআন তিলাওয়াতকে অধিক অগ্রাধিকার দিতেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আল-বুখারি (রহ.), যিনি হাদিস সংকলনে অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করলেও কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি গভীর অনুরাগ পোষণ করতেন।

ইমাম বুখারি (রহ.) শুধু হাদিস সংকলনে ব্যস্ত ছিলেন না, বরং কোরআনের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা ছিল।

পবিত্র রমজান মাসে তাঁর তিলাওয়াতের পরিমাণ ছিল অভূতপূর্ব। ইতিহাসবিদ আল্লামা খতিবে বাগদাদি (রহ.) বলেন, ইমাম বুখারি (রহ.) প্রতিদিন সাহরির সময় কোরআনের অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতেন এবং প্রতি তিন রাত অন্তর সাহরির সময় একবার কোরআন খতম করতেন। এ ছাড়া দিনের বেলায় একবার পূর্ণ কোরআন খতম করতেন, এবং ইফতারের সময় আরেকবার কোরআন খতম করতেন। (তারিখে বাগদাদ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৩১)

এর পেছনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল—

১. ইফতারের সময় দোয়া কবুলের মুহূর্ত।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৪৩)

২. কোরআন খতমের পর দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা। বিভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে যে যখন কেউ কোরআন খতম করে, তখন তার দোয়া কবুল হয়। (আল মুজামুল কাবির, হাদিস : ৬৭৩; আত-তিবইয়ান ফি আদাবি হামালাতিল কোরআন, পৃষ্ঠা-১৫৯)

ইমাম বুখারি (রহ.) এই দুটি বরকতময় সময়কে একত্র করে ইফতারের মুহূর্তে কোরআন খতম করতেন, যেন তাঁর দোয়া অধিকতর কবুল হয়।

ইমাম বুখারি (রহ.)-এর জীবন আমাদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি শুধু হাদিস সংকলনের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেননি, বরং কোরআন তিলাওয়াতের প্রতিও রেখেছেন বিশেষ যত্ন। আমাদের জন্য এটি এক বড় শিক্ষা—আমাদের ব্যস্ততার মধ্যেও কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখা উচিত।

বিশেষত রমজান মাসে কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এটি শুধু আত্মার পরিশুদ্ধিই ঘটায় না, বরং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যমও বটে।

ইমাম বুখারি (রহ.)-এর উদাহরণ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে রমজান মাস শুধু রোজা রাখার জন্য নয়, বরং কোরআনের মাস হিসেবে এটিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করাও আবশ্যক।

আমাদের পূর্বসূরি মনীষীরা কোরআনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন, বিশেষত রমজান মাসে তাঁরা অন্যান্য নফল ইবাদতের চেয়ে কোরআন তিলাওয়াতকে অধিক গুরুত্ব দিতেন। তাই আমাদেরও উচিত কোরআনকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া, এর তিলাওয়াতকে জীবনের অপরিহার্য অংশ বানানো এবং বিশেষত রমজান মাসে অধিক পরিমাণে তিলাওয়াতের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি সাধন করা। কেননা কোরআনই আমাদের সত্য পথের দিশারি এবং পরকালের সাফল্যের চাবিকাঠি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের কোরআনময় রমজান অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মৃত প্রিয়জনদের জন্য যেসব আমল করবেন

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
মৃত প্রিয়জনদের জন্য যেসব আমল করবেন

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এই মাসে মহান আল্লাহ জান্নাতের দরজা খুলে দেন, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন। তাই মুমিনের উচিত এই মাসে মৃত প্রিয়জনদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। তাদের কথা স্মরণ করা, যারা একসময় আমাদের সঙ্গে রমজানের দিনগুলো কাটিয়েছে।

সেই প্রিয় মা, প্রিয় বাবা, প্রিয় ভাই-বোন, কলিজার টুকরা সন্তান-সন্ততি, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে স্মরণ করা, যারা একসময় আমাদের জীবনের অংশ হয়ে ছিল।

তাদের সান্নিধ্য একসময়কে আনন্দময় ও অর্থবহ করত, আমাদের অনুভূতি ও মনকে উজ্জীবিত করত। কিন্তু আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত বিধানে তাদের সময় ফুরিয়ে গেছে, তারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। স্বপ্নের মতো হারিয়ে গেছে, রেখে গেছে অনেক মধুর স্মৃতি, যা এখনো আমাদের মনে কেবল তাদের জন্য ভালোবাসা ও হাহাকার জাগিয়ে তোলে।

মাগফিরাতের এই মাসে তাদের ভুলে গেলে চলবে না, যারা একসময় আমাদের সঙ্গে রমজানের আনন্দ ভাগ করে নিত। সাহরিতে ইফতারে আমাদের পরম যত্নে ইবাদতের তাগিদ দিত। স্মরণ করা উচিত আমাদের সেই পূর্ব পুরুষদের, যাঁদের রক্ত আমাদের শিরা-উপশিরায় বইছে। সেই মহা মনীষীদের, যাঁদের ত্যাগ, চোখের পানি ও রেখে যাওয়া জ্ঞানের আলোয় আমাদের পর্যন্ত ইসলাম পৌঁছেছে।

পূর্ববর্তীদের জন্য দোয়া করা প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে : হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই, যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে, তাদেরকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি জিনিস চলতে থাকে : সদকায়ে জারিয়া; এমন জ্ঞান, যা মানুষ উপকৃত হয়; আর নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪১১৫)

নিম্নে পবিত্র রমজানে মৃতদের জন্য করণীয় কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো—

সদকা : উল্লিখিত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, মৃতদের ইসালে সওয়াব করার একটি উত্তম পদ্ধতি হতে পারে সদকা। কারো সামর্থ্য থাকলে দান-সদকার মাধ্যমে মৃত আত্মীয়দের ইসালে সওয়াব করা যেতে পারে।

দোয়া : উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন নেক সন্তানের কথা উল্লেখ করেছেন, যে তার জন্য দোয়া করে। তাই পবিত্র রমজানে মৃতদের জন্য আমরা খুব বেশি বেশি দোয়া করতে পারি, বিশেষ করে সাহরি ও ইফতারের সময় তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দোয়া করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন।

কোরআন তিলাওয়াত : মাকিল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের মৃতদের জন্য সুরা ইয়াসিন পাঠ করো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১২১)

অতএব, রমজান যেহেতু কোরআনের মাস, এ মাসে আমরা মৃত আত্মীয়দের ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতে পারি। কিন্তু মৃতদের জন্য অর্থের বিনিময়ে কাউকে দিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করানো উচিত নয়।

ওমরাহ : বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এক মহিলা এসে বলল, ‘আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন, কিন্তু তিনি হজ আদায় করেননি। তাঁর পক্ষে কি আমি হজ আদায় করব?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তাঁর পক্ষে তুমি হজ আদায় করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৯২৯)

তাই কারো সামর্থ্য থাকলে পবিত্র রমজানে মৃতদের ইসালে সওয়াবের নিয়তে ওমরাহ পালন করা যেতে পারে।

মন্তব্য
প্রতিদিনের আমল

জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দোয়া

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দোয়া

পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কথা বলা হয়েছে। এ রকম একটি আয়াত হলো- 

رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

অর্থ: হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (সুরা : আলে ইমরান, ১৬)
 

মন্তব্য
হাদিসের বাণী

জুমা ও রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
জুমা ও রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ

মহান আল্লাহ বিভিন্ন উপলক্ষে তাঁর প্রিয় বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, এক জুমা ও পরবর্তী জুমা এবং এক রমজান ও পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে মুমিনের গুনাহ মাফ করা হয়। হাদিস শরিফে এসেছে, 

الصَّلَوَاتُ الخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إلى الجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إلى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ ما بيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الكَبَائِرَ.

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহের মাফ করা হয়। যখন ওই বান্দা কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।

’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

 

মন্তব্য

জুমার দিন যে সময় দোয়া কবুল হয়

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
জুমার দিন যে সময় দোয়া কবুল হয়

ইসলামে জুমার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কোরআনে জুমার দিন দ্রুত মসজিদে গমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিন নামাজের আজান হলে তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাবিক্রি বন্ধ কোরো, তা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝো।

এরপর নামাজ শেষ হলে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯-১০)

জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো— 

১. জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা

আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনজির (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো—এক. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। দুই. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন।

তিন. এই দিনে আদম (আ.)-কে মৃত্যু দিয়েছেন। চার. এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা কিছুই প্রার্থনা করবে তিনি তা দেবেন। যতক্ষণ সে হারাম কিছু প্রার্থনা করবে না। পাঁচ. এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে।
’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮৯৫)

২. জুমার নামাজ আদায়

সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করল, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে না যায়, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

৩. জুমার দিন গোসল করা

জুমার দিন গোসল করা ও আগে আগে মসজিদে যাওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তাঁর জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

৪. মসজিদে প্রথমে প্রবেশ করা

জুমার দিন মসজিদে আগে প্রবেশ করা ও মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার বিশেষ গুরুত্ব আছে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, অতঃপর প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল, এরপর যে ঢুকল সে যেন মুরগি কোরবানি করল, আর যে এরপর ঢুকল সে ডিম সদকা করল। অতঃপর ইমাম খুতবার জন্য এলে ফেরেশতারা আলোচনা শোনা শুরু করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৪১)

৫. জুমার দিন দোয়া কবুল হয়

জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আসরের পর অনুসন্ধান কোরো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১০৪৮)

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান কোরো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)

৬. সুরা কাহাফ পাঠ

জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)

৭. গুনাহ মাফ হয়

সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

৮. দরুদ পাঠ

জুমার দিন নবীজি (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে? তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ