<p>বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যারা জনগণের স্বার্থের কথা চিন্তা করে না, যারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করে দিয়েছে, সেই সরকারকে জনগণ ক্ষমতায় দেখতে চায় না।</p> <p>আজ রবিবার দুপুরে তার নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের কালীবাড়িতে মির্জা রুহুল আমিন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী দল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শাখার সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহসভাপতি আল মামুন, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফসহ বিএনপির অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'এই সরকার ২৪ ঘণ্টা শুধু মিথ্যা কথা বলে। সত্য কথা আওয়ামী লীগের গায়ে লাগে, তাই তারা মিথ্যাচার করে। দেশের জনগণকে মিথ্যা বিশ্বাসের জন্য হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের মতো বর্তমান অবৈধ সরকারের তথ্যমন্ত্রী সারাক্ষণ শুধু মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। বর্তমানে এই জাতি একটি ক্রান্তিলগ্ন পার করছে। আগামী নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে এই দেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানুষের অধিকার থাকবে কি থাকবে না এবং মানুষ ভোট দিতে পারবে কি পারবে না। তাই সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে, জনগণকে একত্রিত করে ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে নিয়ে আসতে হবে।'</p> <p>'বিএনপি চায় এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়' উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বিএনপির সোজা কথা, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে আর ঠুঁটো জগন্নাথ সেই সংবিধান বাতিল করতে হবে। এবং নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও মানুষের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তায় বিএনপির ১০ দফার আন্দোলন চলমান রয়েছে। তাই সমস্ত অন্যায় ও অবৈধ শক্তিকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে শান্তি ও সমৃদ্ধির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সকলকে শপথ গ্রহণ করতে হবে।'</p> <p>ফখরুল বলেন, 'এই দেশের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। কিন্তু ফসল উৎপাদনে কৃষকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জমিতে সেচ দিতে গেলে বিদ্যুৎ থাকে না, বাজারে দিন দিন সারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে বাজারে ফসল বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। এভাবে সর্বক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো অর্থনৈতিক ঘাটতি নেই। তারা দিনদিন উন্নতি করে যাচ্ছে, যাদের টিনের ঘর ছিল তাদের এখন পাঁচতলা বাড়ি হয়েছে।'</p> <p>তিনি আরো বলেন, 'দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী যিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাঁকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেওয়ার চক্রান্ত করে তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি দেশে আসতে পারছেন না। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গুম করে ফেলা হয়েছে, ঠাকুরগাঁওয়ে ৯ জন নেতা প্রাণ দিয়েছেন ১৪-এর নির্বাচনে। মিথ্যা মামলা দিয়ে সারা দেশের মানুষকে আওয়ামী লীগ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে। আজকে সাংবাদিকসহ কেউই সত্য কথা লিখতে পারে না, সত্য লিখলেই তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া হয়।'</p> <p>'সরকারের সমালোচনা রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়, সরকারের ভুল ধরিয়ে দেওয়াই গণতন্ত্র' উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, 'কিন্তু সরকার সেটাও করতে দেয় না। যখন সারা দেশের মানুষ ও জাতিসংঘ বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রাখা যাবে না, ঠিক তখন সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, এই আইন বাতিল হবে না। কারণ তারা জানেন, এই আইন বাতিল হলে তারা জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারবেন না। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। মেধা থাকলেও এখন সরকারি চাকরি হয় না, সেখানেও দলীয়করণ।'</p> <p>তিনি বলেন, 'এই সরকার জনগণের সরকার নয়। দেশে গণতন্ত্র না থাকায় আজকে অনেকেই এই সরকারের সমালোচনা করেন। আওয়ামী লীগ ১৯৭৫-এ বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল, এখন আবার ভিন্ন আঙ্গিকে চেহারা পাল্টিয়ে ছদ্মবেশে একদলীয় বাকশাল করার চেষ্টা করছে। ভয় দেখিয়ে, গুলি করে, নির্যাতন করে মানুষকে জেলে দিয়ে তারা গণতন্ত্র ও মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করে  দিয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে সাংবাদিকসহ সবাইকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে।'</p> <p>নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, '২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা সেই তত্ত্বাবধায়ক আইন বাতিল করে। সে সময় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক আইন বাতিল করে দেশে স্থায়ীভাবে অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা হলো, রাজনীতিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। পরবর্তী সময়ে তা-ই ঘটে, আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক আইন বাতিল করে ২০১৪ সালে যে নির্বাচন দিয়েছে সে নির্বাচনে দেশের মানুষ অংশগ্রহণ করে নাই।'</p> <p>বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, 'পরেরবার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন করেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার আশ্বাস দিলে পরবর্তী সময়ে আবারও বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু নির্বাচনের সময় তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসে, তারা সারা দেশে নির্যাতন, হামলা-মামলা দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে এবং নির্বাচনের আগের রাতেই ভোট চুরি করে।'</p>