<p style="text-align:justify">জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, ‘বিশ্ব গণমাধ্যমে কোটা আন্দোলনের শিরোনাম হয়েছে। সরকারপ্রধানকে স্বৈরাচার বলছে, যা যৌক্তিক বলে মনে করি। এসব শক্তিশালী গণমাধ্যম অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এটার সঙ্গে আমি একমত।’ </p> <p style="text-align:justify">আজ বুধবার বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।</p> <p style="text-align:justify">জি এম কাদের বলেন, ‘বিশ্ব গণমাধ্যম তো এমনিতে লেখেনি। আমরা এটার বিপক্ষে সব সময় ছিলাম। এই ধরনের অবস্থার সৃষ্টি জন্য আমরা এত সংগ্রাম করিনি। এত মানুষ মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেয়নি। এ রকম স্বাধীন দেশ আমরা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ, যেখানে বৈষম্যহীন একটা সমাজ হবে।’</p> <p style="text-align:justify">বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী মাঠে নামিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ রাদের রাজনীতি রক্ষা করার চেষ্টা করছে। যা বেআইনি ও অগণতান্ত্রিক। দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা না দিয়ে রাষ্ট্র বাহিনী আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক হয়ে নির্বিচারে মানুষ মারছে। তারা ক্ষমতা ধরে রাখার অপকৌশল নিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল হাজারো জনতার ক্ষুব্ধ মনের বহিঃপ্রকাশ। তাদের সন্তানদের রক্ষায় অভিভাবকরা যখন মাঠে নেমেছেন, তখনি সাধারণ মানুষও একাত্মতা ঘোষণা করেছে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচারভিত্তিক একটা সমাজ ,আইনের শাসন হবে। এটা এখন হচ্ছে না, একনায়কতন্ত্র চরমভাবে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা চালু হয়েছে। জামায়াত-বিএনপি বিষয়গুলো হলো অত্যন্ত স্পষ্ট একটি বিষয়। এটার সঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনেক ধরনের অনুভূতি জড়িত আছে। এটা আমি আমাদের দলীয় ফোরামে আলাপ-আলোচনা করে দলীয় সিদ্ধান্ত হবে।’</p> <p style="text-align:justify">জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে প্রশাসনিক অর্ডারে নিষিদ্ধ করা ঠিক নয়। জনগণ তাদের জন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষতিকারক মনে করলে তারা বয়কট করবে। একসময় সেই রাজনৈতিক দল বিলীন হয়ে যাবে। জোর করে কিছু করলে তাদের যদি গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক কাঠামো থাকে তাহলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এতে করে অস্বাভাবিক রাজনীতির বীজ বপন হতে পারে।’</p> <p style="text-align:justify">জি এম কাদের বলেন, যারা মারা গেছেন, তাদের কেউ সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেনি। সরকার চেষ্টা করেও তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেনি। আমার প্রশ্ন, তাহলে নির্বিচারে গণহত্যা করা হলো কেন?</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, নির্বিচারে এ জন্যই বলছি, তারা যদি সন্ত্রাসী দমন করতে চায় তাহলে আগে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে হবে। তারপর না হয় তাদের প্রতিহত করার প্রশ্ন আসে। কিন্তু‘ বহুতল ভবন থেকে, হেলিকপ্টার থেকে যখন গুলি করা হয়, তখন নিচে কে সন্ত্রাসী, কে ভালো মানুষ, কে শিশু, কে পথচারী তারা কিভাবে বুঝবে?</p> <p style="text-align:justify">তার মানে হলো, তারা এটাকে একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে দমন নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের মতামত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি থেকে দেশ এখনো উদ্ধার হয়নি।</p> <p style="text-align:justify">জি এম কাদের বলেন, ‘সরকার এবং সরকারি দল রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। রাষ্ট্র আমাদের সবার। রাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সম্পদ। এরা রাষ্ট্রকে রক্ষা করবে, জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করবে। সেখানে সরকারকে রক্ষার জন্য তাদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, প্রতিরক্ষাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যারা দেশ ও জনগণকে রক্ষা করবে তারাই জনগণের দিকে বন্দুক তাক করেছে। সরকার গদি রক্ষার জন্য যেটা করছে, তা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি করেছে।’</p> <p style="text-align:justify">বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে দাবি করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। আবারও জনগণ মাঠে নামবে, মানুষ মারা যাবে। একসময় বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে সন্ত্রাসী জাতি হিসেবে চিহ্নিত হবে। আমি মনে করি, এ থেকে উত্তরণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">জি এম কাদের বলেন, ‘আমার জীবনে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম দেখেছি। কিন্তু এমন সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে এ রকম আন্দোলন হয় আগে দেখিনি। দীর্ঘদিন থেকে মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে, মানুষ নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। সব বৈষম্যের প্রতিবাদ জানাতে ছাত্রদের সঙ্গে জনগণ মাঠে নেমেছে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘সংঘর্ষের শুরু থেকে বিএনপি-জামায়াত বলে বলে যতবার সরকার যেভাবে প্রচার করুক না কেন, আমি ঢাকায় দেখেছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। জনগণ সরকারের এ কথা গ্রহণ করেনি। এটি জনগণের সংগ্রাম। বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টির কেউ থাকলে তারা ব্যক্তিগতভাবে আন্দোলনে গিয়েছিল।’</p> <p style="text-align:justify">কোটা আন্দোলন নিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘কোটা আন্দোলনে নির্বিচারে যাদের গুলি করেছে। হত্যাকারীদের নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া মানুষকে হয়রানি, মামলা-মোকদ্দমায় ফেলা হচ্ছে। মামলা দেওয়া হলো একজনকে পঙ্গু করে দেওয়া। মামলা হলে আদালতে যাওয়া, জামিন নেওয়া, মামলা মোকাবেলা করাসহ নানা সমস্যা জর্জরিত হয়ে ছাত্ররা নিঃস্ব হয়ে যাবে। আমি ছাত্রদের নামে মামলা দেওয়ার ঘটনাটি ঘৃণার সঙ্গে প্রতিবাদ করি। আওয়ামী লীগও একসময় বিএনপি দ্বারা এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তখন জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম।’</p> <p style="text-align:justify">জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় এই নেতা বলেন, ইন্টারনেট পরিষেবা পুরোপুরি চালু না হওয়ায় সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারছে না। এতে তথ্য আদান-প্রদান বিঘ্নিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। আবার দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা স্বজনদের খোঁজ নিতে পারছেন না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাস আয় না পাঠানোর হুমকি দিচ্ছে, যা দেশের জন্য খুবই ভয়াবহ। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমনে ছাত্ররা যোগাযোগ করতে পারছেন না বিদেশের সঙ্গে। ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু না হলে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।</p> <p style="text-align:justify">এ সময় বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ সব নিহতকে বীর সেনা উল্লেখ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন জি এম কাদের।</p>