<p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ চলে গেলেও আওয়ামী লীগের মানসিকতার মানুষগুলো এখনো রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের পতন হতে এক মাস লাগলেও আপনাদের আরো আগেই দমন করে ফেলা হবে। অনেকে ১৬ বছর বললেও আমি বলব, ৫৩ বছর ধরে এই দেশে জঞ্জাল জমেছে। ৫৩ বছরের জঞ্জাল কিভাবে এক মাসে পরিবর্তন করব তা আমাদের জানা নেই। তবে একটা জিনিসের পরিবর্তন হয়েছে সেটা হলো এমন বন্যা পরিস্থিতিতে কেউ এবার ত্রাণের টাকা মেরে খায়নি। আবার সরকারি অফিস-আদালতগুলোতে ঘুষ আদান-প্রদান বন্ধ হয়েছে। আমরা এই ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন চেয়েছিলাম।’<br />  <br /> মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠের মুক্তমঞ্চে কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনে নিহতদের উদ্যমকে ধারণ করে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে মতবিনিময়সভায় এসব কথা বলেন তিনি।<br />  <br /> তিনি বলেন, ‘দেশের আগামীর কাঠামোগত সংস্কার কিভাবে হবে, সেটি আমরা ২১ জন যারা সরকারে বসেছি- সেটা আমরা ঠিক করব না। সেটি নির্ধারণ করবেন আপনারা। সেটি নির্ধারণ করবে এ দেশের জনগণ। তাই আমরা জনগণের সঙ্গে কথা বলার জন্যই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যাচ্ছি। আগামীর বাংলাদেশ কেমন করতে চান তা শোনার জন্যই আমরা যেখানে এসেছি। শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনই নয়, অন্যান্য সংগঠন ও সাধারণ মানুষ যারা আছে সবার কথাই আমরা শুনব।’<br />  <br /> ভারতের সঙ্গে এ দেশের মানুষ চোখে চোখ রেখে কথা বলবে উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সঙ্গে এ দেশের মানুষের কথা হবে চোখে চোখ রেখে। কথা হবে মাথা উঁচু করে। বাংলাদেশের মানুষকে কথা বলতে হবে সম্মান দিয়ে। ভারত এত দিন একটি দলের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু এখন আর তা হবে না। ভারতকে এখন কথা বলতে হবে এ দেশের জনগণের সঙ্গে।’<br />  <br /> তিনি আরো বলেন, ‘রাজনীতি করা না করা মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়, কিন্তু সবার মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা থাকাটা জরুরি। গত সরকার ছিল নতজানু সরকার, কারণ তারা জনগণের সরকার ছিল না। এ দেশের জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, আমরা আর নতজানু হবো না।’<br />  <br /> যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের সময় যারা শহীদ হয়েছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। অনেকে ফ্যাসিবাদের সুযোগ নিয়ে চাঁদাবাজি করছে। তাদের স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনাদের পরিণতিও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো হবে। বাংলাদেশের তরুণদের এই শক্তি সমুন্নত থাকবে। তরুণরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমুন্নত থাকলে আর কোনো স্বৈরাচারী সরকার ফিরে আসতে পারবে না।’<br />  <br /> আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বেশি কিছু চায় না। বাংলাদেশে মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ বিলাসিতা চায় না। যে মৌলিক অধিকার রয়েছে, সেগুলো নিশ্চিত হয়ে শান্তিতে-সুখে বসবাস করতে চায়।  কিন্তু একটা দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের শাসনের জাঁতাকলে আমরা এমনভাবে পৃষ্ট হয়েছি যে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিতে গেলেও ১০ বার ভাবা লাগত। গান গেয়ে অনেকটা জেল খাটতে হয়েছে। কবিতা লিখে অনেকটা জেল খাটতে হয়েছে। আজ আমরা এতটুকু স্বস্তিতে অন্তত আছি, এখন আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। কেউ আমাদের আজ বিরক্ত করছে না। র‍্যাব বলে, পুলিশ বলে, ডিবি বলে আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে না।’</p> <p>মতবিনিময়সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আগামীর বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাস, কোনো চাঁদাবাজ থাকতে দেওয়া হবে না। আগামীর বাংলাদেশ হবে জনগণের বাংলাদেশ। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে।<br />  <br /> তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনাকে হটাতে পেরেছেন ছাত্র-জনতা। এটা আমাদের প্রাথমিক বিজয়। আমাদের পরিপূর্ণ বিজয় এখনো আসেনি। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ফ্যাসিস্ট সিস্টেম পরিপূর্ণভাবে হটানো পর্যন্ত আমাদের পূর্ণ বিজয় নেই। আমরা দেখেছি ৫ তারিখের পর সারা দেশে চাঁদাবাজি চলছে, এসবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ছাত্র-জনতা। যেভাবে শেখ হাসিনাকে সরিয়েছি, সেভাবেই চাঁদাবাজ হটানো হবে।’</p> <p>মতবিনিময়সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা ও কুমিল্লার সমন্বয়ক বক্তব্য দেন আবদুর কাদের, রুবেল হোসাইন, মাহি খান, নিয়ন মনির, মাহি তাজওয়ার ওহি, জিয়াউদ্দিন আয়ান, কাজী মহিবুর রহমান, ইয়াসিন আরাফাত হিমু প্রমুখ। এ সময় বক্তারা ‘কুমিল্লা’ নামে কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণার দাবি জানান।</p>