<p>বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবীর রিজভী বরেছেন, ‘শেষ দিন পর্যন্ত তিনি চেষ্টা করেছেন, দরকার হলে এক-দুই লাখ লোককে হত্যা করে হলেও টিকে থাকতে হবে। কিন্তু সেটি আর তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।’ </p> <p>সিলেট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত এ টি এম তুরাবের বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন তিনি।</p> <p>বাংলাদেশ কবজায় রাখতে চায় বাংলাদেশ, মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সেটাই মেনে নিয়েছিলেন। উনি জনগণকে কৃতদাস করে রাখতে চান তার ক্ষমতার জন্য। আর এটার গ্যারান্টি পেয়েছিলেন দিল্লির কাছ থেকে। দিল্লির কাছ থেকে গ্যারান্টি নিয়েই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন।’</p> <p>রুহল কবীর রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচন করে মনে করেছিলেন, তিনি অদ্বিতীয়। তাকে আর কেউ ধরা-ছোঁয়ার মধ্যে পাবে না। আল্লাহ তো সব সময় দেখেন। অনেক সময় দড়ি ছেড়ে দেন, তারপর যখন দড়ি টান দেন তখন মানুষ বুঝতে পারে তার ক্ষমতা কত কম।’</p> <p>তিনি শেখ হাসিনার দুঃশাসনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘সারা বাংলাদেশকে লাশের দেশে পরিণত করেছিল হাসিনা সরকার। শিশু, কিশোর, তরুণ-এদেরও রক্ত পান করে শেখ হাসিনা আবারও ভেবেছিল ক্ষমতায় টিকে থাকবে। কিন্তু একের পর এক নিজেদের আত্মদান, ত্যাগ, আত্মাহুতি দিয়ে যেভাবে ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনাকে ঘিরে ধরেছিল শেখ হাসিনা তা টেরই পায়নি।’ </p> <p>শিক্ষার্থীদের আত্মদানের কারণে শেখ হাসিনাকে পালাতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব বাধা উপেক্ষা করে বাচ্চা ছেলেরা যখন নিজের জীবন দিচ্ছে একের পর এক আর সেই জীবন দেওয়ার পর তার লাশ রেখে তার সহকর্মী আরেক শিশু-কিশোর এগিয়ে গেছে তাদের জীবন দেওয়ার জন্য। এই আত্ম উৎসর্গ, এই আত্মদান বাংলাদেশে এক উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছে। আর এই উজ্জ্বল অধ্যায়ে শেখ হাসিনাকে অবশেষে পালাতে হয়েছে।’</p> <p>ছাত্র-জনতার এ আত্মদান বৃথা যেতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আজকে এই শেখ হাসিনাকে যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে ১৬ বছর ধরে, এখনো তারা দিয়ে যাচ্ছেন। গোটা পৃথিবীর মানুষ বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার আমলে একভাবে দেখেছে এখন আরেকভাবে দেখছে।’</p> <p>সীমান্তে বিসিএফের গুলি করে হত্যার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বারবার বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ কি মানুষ না? দেখামাত্রই আপনি সীমান্তে গুলি করে হত্যা করেন। আপনি ঠাকুরগাঁ, বালিয়াগাঙ্গিতে গুলি করে জয়ন্ত কুমারকে হত্যা করলেন। কয়েক দিন আগে ১ সেপ্টেম্বর এই বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজারে স্বর্ণা দাসকে গুলি করে হত্যা করলেন।’</p> <p>বাংলাদেশের নানা আন্দোলনকে ভারতের নীতি-নির্ধারকরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে কোথাও মারামারি হয়। তখন আওয়ামী লীগের কোনো নেতা তার নাম যদি ধনঞ্জয় হয় কিংবা সুকুমার হয়, এইটাকে দিল্লি এবং ভারতের বিভিন্ন পলিসি মেকাররা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার খেতাব দেন।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আজকে যে বাংলাদেশের নাগরিক জয়ন্ত, স্বর্ণা দাসকে আপনার বিএসএফ গুলি করে হত্যা করল- এটাকে কী নাম দেবেন আপনারা? এটাকে এখন কী বলবেন আপনারা? এখন তো তার পরিচয় সে বাংলাদেশি, বেআইনিভাবে সীমান্ত পার হচ্ছিল।’ </p> <p>বাংলাদেশি মানুষকে পাখির মতো মেরে ফেলার অধিকার ভারত রাখে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশ থেকে শিশু-কিশোরের ঘাতক, অপরাধী এবং হাজার, লাখ, কোটি টাকা লুটকারী চোরেরাকে দিল্লি পুনর্বাসন করে। আর সীমান্তের বাংলাদেশিদের দেখামাত্র গুলি চালায়, সে হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, বৌদ্ধ হোক-তার বেঁচে থাকার অধিকার নেই।’</p> <p>ভারত বাংলাদেশকে তাদের ইচ্ছামাফিক চালাতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা বাংলাদেশের চারিদিকে এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে, যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে তারা কবজার মধ্যে রাখতে চায়, মুঠোর মধ্যে রাখতে চায়। ওরা (বাংলাদেশ) আমাদের কথার বাইরে যাবে কেন? আমরা যা বলল-তাই করবে। আমরা যাকে যেভাবে স্বীকৃতি দেবো বাংলাদেশ তা-ই মানবে।’ </p> <p>শেখ হাসিনা এসব মেনেই ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সেটাই মেনে নিয়েছিলেন। কারণ উনি নিজের জনগণকে কৃতদাস হিসেবে রাখতে চান তার ক্ষমতার জন্য। আর এটার গ্যারান্টি পেয়েছিলেন দিল্লির কাছ থেকে। দিল্লির কাছ থেকে গ্যারান্টি নিয়েই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন।’ </p> <p>তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মানুষের নির্বাচন, ভোটের অধিকার, তার বেঁচে থাকার অধিকার সব কিছুকে পদদলিত করে- তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার শোনার ক্ষমতা চাই, আমার সোনার হরিণ চাই। এটাই ছিল শেখ হাসিনার নীতি। আর এই নীতি তিনি বাস্তবায়ন করেছেন রক্তাক্ত পন্থায়, বর্বরোচিতভাবে।’ </p> <p>এর আগে তিনি সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। সাংবাদিক তুরাবের মাকে সান্তনা দেওয়ার পাশাপাশি দোয়া চেয়ে বলেন, ‘তাদের এই অবদানের জন্য আজকে আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারছি। শান্তিতে ঘুমাতে পারছি। স্বাধীন একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে, স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ইনশাল্লাহ তাদের এই অবদান এ দেশের মানুষ কোনো দিন ভুলবে না। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’</p>