<p>গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য একটি অভিশাপ। ওসমান পরিবার আজকে পালিয়ে গেছে। তারা নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। শামীম ওসমান ত্বকী হত্যার পেছনে জড়িত রয়েছেন। তখন নারায়ণগঞ্জে যতগুলো খুনের ঘটনা ঘটেছে, এর মাস্টারমাইন্ড ছিলেন শামীম ওসমান। আমার প্রশ্ন, কিভাবে তিনি পালিয়ে গেলেন? কিভাবে কারা তাকে সহযোগিতা করেছে? এই শামীম ওসমানকে অনতিবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। ওসমান পরিবার যেভাবে লুটপাট করে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল, তারা কি ভোগ করতে পেরেছে? সুতরাং তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে, যদি কেউ লুটপাট করতে চান, দুর্নীতি করতে চান, দখলদারি করতে চান, তাদের অবস্থা কিন্তু শামীম ওসমানের মতো হবে।’</p> <p>নারায়ণগঞ্জে আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন কুখ্যাত শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে। শামীম ওসমান এর আগে বোরকা পরে পালিয়েছিলেন। এবারও বোরকা পরে পালিয়েছেন। উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রাশেদ প্রশ্ন করেন, তাহলে তিনি পুরুষ, নাকি মহিলা? প্রতিউত্তরে নেতাকর্মীরা মহিলা বলে উল্লেখ করেন। </p> <p>তিনি বলেন, ‘শামীম ওসমান এত দিন বলত, আমি বীর পুরুষ, খেলা হবে। কিন্তু খেলতে পারে নাই। খেলার আগেই আউট হয়ে গেছে। এই নারায়ণগঞ্জে যারা দুর্বৃত্ত ছিল, যারা সন্ত্রাসী ছিল, যারা লুটেরা ছিল তারা খেলার আগেই মাঠ ছেড়ে পালিয়েছে। আমরা যারা সংগ্রাম করেছি, দেশ এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করেছি, আমরা আসলেই মাঠে খেলেছি। সুতরাং এখন থেকে খেলা হবে স্লোগান শামীম ওসমানের স্লোগান হতে পারে না। ও খেলতে পারে না, ও কাপুরুষ। ও দুইবার বোরকা পরে পালিয়েছে। কিন্তু এ গণ অধিকার পরিষদ তাদের কোনো পালানোর ইতিহাস নাই।’ </p> <p>সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি দক্ষিণপাড়া দশপাইপ এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে ‘রাষ্ট্র সংস্কারে তারুণ্যের ভাবনা শীর্ষক মতবিনিময়সভা এবং মহানগর কমিটি ঘোষণা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।</p> <p>রাশেদ বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। ২০১৮ সালে আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলন সফল করেছিলাম। আজকের এই গণ-অভ্যুত্থানের বীজ, সেই বীজ কিন্তু আমরাই বপন করেছিলাম। সেই বীজ আজকে বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। আমরা ২০১৮-২৪ সাল পর্যন্ত একটানা লড়াই করেছি। এই লড়াই করতে গিয়ে আমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়েছে। এ গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের ১১ জন শহীদ হয়েছে। আমাদের অসংখ্য ভাই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। এ ভাইদের রক্তের কারণেই আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। শুধু গণ পরিষদ নয়, বিএনপির ৪২২ জন্য শহীদ হয়েছেন। ছাত্রশিবিরের ১৫২ জন শহীদ হয়েছেন। ছাত্রদলের প্রায় শতাধিক শহীদ হয়েছেন। তাদের নেতৃবৃন্দরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, আহত হয়েছেন। এখন আমাদের সময় এসেছে সবাই একসঙ্গে কাজ করার। সুতরাং এ বাংলাদেশে ঐক্য এবং সংহতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই বাংলাদেশে হানাহানি, বিদ্বেষ, হিংসা, দুর্নীতি, ঘুষ এগুলো থাকতে পারে না।’</p> <p>অনুষ্ঠানে প্রকৌশলী আরিফ ভূইয়াকে সভাপতি, রুহুল আমিনকে (রাহুল) সাধারণ সম্পাদক ও রাকিব মাহমুদ কালামকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৪৪ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে এর সদস্য সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন নবগঠিত মহানগর কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী আরিফ ভূঁইয়া।</p> <p>দপ্তর সম্পাদক শাহিন হাওলাদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সম্পাদক আবু হানিফ, উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও দপ্তর সমন্বায়ক শাকিল উজ্জামান, গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান মিল্কি, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নাহিদ প্রমুখ।</p> <p>রাশেদ খাঁন আরো বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার শহীদদের সরকার। এই সরকারকে আমরা বসিয়েছি। সুতরাং এই সরকারকে আমাদের নজরদারিতে রাখতে হবে। এই সরকার কী করে সেটি আমাদের দেখতে হবে। এই সরকার যদি ব্যর্থ হয় তাহলে এ গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাবে। সুতরাং এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এই সরকারকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। ড. ইউনুস শুধু আমাদের জন্য গর্বের বিষয় না। তিনি পৃথিবীর জন্য গর্বের বিষয়। এরকম একজন মানুষ আমরা পেয়েছি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তার আশপাশে এমন কিছু মানুষ রয়েছে, যারা তার সুনাম নষ্ট করছে। নিয়োগ বাণিজ্য করছে। আওয়ামী লীগের ডিসি নিয়োগ দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের এসপি নিয়োগ দিচ্ছে। ড. ইউনুসের আশপাশের মানুষ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে।’</p> <p>রাশেদ বলেন, ‘পূজা উপলক্ষ্যে প্রতিমা ভাঙচুর করা, এগুলো ইন্ডিয়ান ‘র’-এর ষড়যন্ত্র। তারা হিন্দু ভাইদের নামিয়ে দিয়েছে ৮ দফা দাবিতে। কেউ যদি রাজনীতির কারণে হয়রানির শিকার হয়, হিন্দুরা কি আওয়ামী লীগ করে নাই? এখন যদি কোনো হিন্দু রাজনীতি করার কারণে হয়রানির স্বীকার হয়, সেই কি ঐ সংখ্যালঘুর কারণে হয়রানির স্বীকার হয়েছে? সেতো আওয়ামী লীগের হয়ে নির্যাতন করেছে। সুতরাং আজকে যদি সে রাজনীতির কারণে, জনগণের ওপর অত্যাচার করার কারণে গ্রেপ্তার হয় তবে কেনো আপনারা বলছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে?’ </p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমাদের হিন্দু ভাইদের বলব, আমরা আপনাদের সঙ্গে রয়েছি, পাশে রয়েছি। যতদিন পর্যন্ত দুর্গাপূজা শেষ না হয়, ততদিন আপনারা প্রত্যেকটা মন্দির পাহারা দিবেন। ইন্ডিয়ান ‘র’ ষড়যন্ত্র করবে, ভারত ষড়যন্ত্র করবে, প্রতিমা ভাঙচুর করবে এবং আমাদের সম্মান নষ্ট করার চক্রান্ত করবে। এটি আমরা হতে দেব না। এ দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ একটি চক্রান্ত করার চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনা চট করে বাংলাদেশে ফিরে আসতে চায়। আমরা শেখ হাসিনাকে চট করে বাংলাদেশে ফিরতে দেব না। আমরা শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে চাই, তবে সেটি বন্দি চুক্তি অনুযায়ী। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকেই ফিরিয়ে আনতে হবে এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’ </p> <p>রাশেদ বলেন, সেনাবাহিনীর হাতে ৬২৬ জন আশ্রয় নিয়েছিল, তারা কোথায়? সেই তালিকা কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না। সেই তালিকা অনতিবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে।</p>