<p>জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রশিবিরের আত্মপ্রকাশের ঘটনায় মধ্যরাতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীরা। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য হত্যাকাণ্ডে ভূমিকার জন্য শিবিরকে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে দাবি জানানো হয়।</p> <p>মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দিনগত রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে মিছিলটি বের হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে মিছিলটি শেষ হয়। পরে সেখানে তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। </p> <p>এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘এক নদীর দুই তীর, ছাত্রলীগ আর শিবির,’ ‘শেখ হাসিনা আর নিজামী, গণহত্যার আসামি’, ‘ফ্যাসিস্টের দুই দিক, ছাত্রলীগ আর শিবির’, ‘কবিরের খুনিরা, ক্যাম্পাসে থাকবে না’, ‘১২৩৪ গণহত্যাকারীরা ক্যাম্পাস ছাড়।’</p> <p>সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নূরে তামিম স্রোতের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইজা মেহজাবিন। বক্তব্যে ফাইজা বলেন, ‘১৯৭১ সালের গণহত্যার সহযোগী সংগঠন জামায়াত-শিবির। শেখ হাসিনার সরকারের হাতে যেমন ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে হত্যার খুনের দাগ রয়েছে, তেমনি ৭১ এর গণহত্যার রক্তের দাগও জামায়াত-শিবিরের হাতে লেগে রয়েছে। এই গণহত্যার দায় তারা অস্বীকার করতে পারে না। ৮০ এর দশকেও ছাত্রশিবির একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিকৃষ্টতম কার্যক্রম চালিয়েছে।’</p> <p>ফাইজা আরো বলেন, ‘ছাত্রশিবির অতীতে ক্যাম্পাসের সাধারণ মুক্তমনা শিক্ষার্থীদের রগ কেটে দমন ও প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। আবারও তারা পুনর্বাসিত হওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আমরা বারবার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে প্রতিহত করে এসেছি। ফলশ্রুতিতে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ছাত্রশিবিরকেও এ দেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। কারণ তাদের হাতে রক্তের দাগ ছিল, এখনো আছে এবং যতদিন তারা তা স্বীকার করবে না ততদিন পর্যন্ত তাদের হাতে রক্তের দাগ লেগে থাকবে।’</p> <p>সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রসংঘ নাম ধারণ করে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্য ৯ মাস শত শত মানুষ যুদ্ধ করেছে তাদের চেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে ওই সময় নানান রকমের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল তারা কারা ছিল তার থেকে আমাদের কাছে বড় হিসেব হলো কোন সংগঠন ছিল। আজ ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে আপনি সেই সংগঠনের আদর্শকে ধারণ করে এখানে রাজনীতি করতে আসছেন। যে সংগঠন বাংলাদেশকে কোনোদিন চায়নি, স্বাধীনতাকে চায়নি, সে সংগঠন স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না।’</p> <p>সামিয়া আরো বলেন, ‘সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে দাঁড়িয়ে কোনোভাবেই একটি ছাত্র সংগঠন ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে পারে না। ধর্মকে ব্যবহার করে অন্য ধর্মের ওপর দাঙ্গা করবেন, অন্য ধর্মকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করবেন, নানা ধরনের নিপীড়ন করার চেষ্টা করবেন সেই রাজনীতি কোনোভাবেই জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।’</p> <p>এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪, এই দুই সালকে যারা অস্বীকার করবে তাদেরকে কখনোই জনগণ ক্ষমা করবে না। আমরা আজ প্রশাসনের সঙ্গে করা মিটিংয়ে বলেছি, ৩৫ বছরের আগের ঘটনা সব সংগঠন আবার এটা নিয়ে ভাববে। কিন্তু আজ দেখলাম, শিবির যে প্রেস রিলিজ দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে সেখানে মিথ্যাচার করেছে। </p> <p>অমর্ত্য রায় আরো বলেন, ‘কবির, দিপু হত্যা, হুটহাট সশস্ত্র আক্রমণগুলো নিয়ে শিবির কখনো ক্ষমাপ্রার্থী হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা কখন মিছিল করে? ১৫ জুলাই রাতে মেয়েরা মিছিল বের করেছিল যখন ছাত্রলীগ সশস্ত্র আক্রমণ করেছিল। ঠিক একি রকম মেয়েরা মিছিল বের করেছিলো ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে। ছাত্রশিবিরকে ক্যাম্পাস থেকে তাড়ানোর জন্য। আমরা দেখতে পাই মেয়েদের মিছিল কাদের বিরুদ্ধে বের হয়? বের হয় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে, বের হয় ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে। </p> <p>তিনি বলেন, ‘ছাত্র শিবিরকে কোনোদিন দেখিনি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে আন্দোলন করতে। কোনোদিন কি ওরা শ্রমিক হত্যা নিয়ে আন্দোলন করেছে? করে নাই। তারা সবসময় শাহবাগ আর শাপলা ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত। এরকম বিভাজনের রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ। যে রাজনৈতিক দলের হাতে রক্তের দাগ রয়েছে সেই সংগঠনকে রাজনীতি করতে হলে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে। সেটা সামাজিক বিচারও হতে পারে, আইনি বিচার হতে পারে। এজন্য তাদেরকে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদেরকে ক্যাম্পাসে আসতে হবে।’</p>