<p style="text-align:justify">বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অর্থনীতি, রাজনীতি, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনের ন্যূনতম যতটুকু দরকার ততটুকু সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। কারণ নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমবে।’</p> <p style="text-align:justify">আজ শুক্রবার যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন ও আজকের প্রেক্ষিত: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। যশোর জেলা বিএনপি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপি মহাসচিব জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকে ‘একদিনের বিষয় নয়’ মন্তব্য করে বলেন, ‘বিএনপি দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই করে গেছে। দলের ৬০ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে। ২০ হাজারের বেশি মানুষ খুনের শিকার হয়েছেন। বিএনপির সাতশ’র বেশি মানুষকে গুম করা হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে মানুষের রাজপথে নেমে আসার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় মানুষ রাস্তায় নামতে সাহস পায়নি। কথা বলতে পারেনি। এখন সেই সুযোগ পাচ্ছে। হাজারো মানুষ প্রাণ দিয়েছে পরিবর্তন ও নির্বাচনের জন্য।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘যদি তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বলতো বিপ্লবী সরকার গঠন করেছি, তাহলে সকল ক্ষেত্রে আমূল সংস্কারে আপত্তি ছিল না। কিন্তু তারা তো নিজেরাই বলেছে, এটা সাংবিধানিক সরকার।’</p> <p style="text-align:justify">মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরাও সংস্কার চাই। সেই সংস্কার হতে হবে টেকসই। সেই সংস্কারে জনগণের কল্যাণ আছে কি না তা বিবেচনা করতে হবে। সংবিধান পরিবর্তনের জন্য কনস্টিটিউশনাল অ্যাসেম্বলি লাগবে। সেটা তো রাজনৈতিক সরকারই করবে।’</p> <p style="text-align:justify">অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-জনতার প্রতি স্যালুট জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা শেষ গোলটা করেছে; যার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘জাতির সামনে বিরাট ক্রান্তিকাল। এখন প্রয়োজন ঐক্য। সব মত ও পথের দল, মানুষের ঐক্যের মাধ্যমে সমাজের এমন রূপান্তর ঘটাতে হবে যাতে একটি মূল্যবোধভিত্তিক দেশ গড়া যায় ‘</p> <p style="text-align:justify">চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদের আত্মাহুতি আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল। যেমন ঊনসত্তরে শহীদ আসাদ, নব্বইয়ে ডা. মিলনের আত্মাহুতি আন্দোলনের বিজয় এনে দিয়েছিল। এই অভ্যুত্থানে জয়ী হওয়ার মধ্যে দিয়ে নতুন দেশ বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি সশস্ত্রবাহিনী দিবসে বেগম খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর প্রশংসা করে বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) ক্যান্টনমেন্টে যাওয়ায় দেশে খুশির বন্যা বয়ে গেছে। যারা তাকে সেখানে নিয়ে গেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ জানাই। এটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। এই ঘটনা নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এটা কোনো ছোট বিষয় না। এটাকে ভিত্তি করে জাতীয় ঐক্য তৈরি করে দেশকে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে এক আলোচকের সমালোচনার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি সরকারের আমলে নিবন্ধন পাওয়া কয়েকটি মিডিয়ার মালিক তাদের প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিয়েছিল, এটা সত্যি। কিন্তু অসংখ্য মিডিয়া ফ্যাসিবাদী সরকার বন্ধ করে দেয়। তখন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বানিয়ে কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। আয়নাঘরে রেখে মানুষকে বছরের পর বছর নির্যাতন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো ফোকলা বানিয়ে ফেলেছে। এখন দেশটাকে পুনর্গঠন করতে হবে। তরুণরাই এই কাজে নেতৃত্ব দেবেন। তবে অবশ্যই প্রবীণদের প্রজ্ঞাকে পাথেয় করতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নার্গিস বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই রায়চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।</p> <p style="text-align:justify">নিতাই রায়চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পলায়ন অনিবার্য ছিল। তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে, একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। তারা বাহাত্তর-পরবর্তীকালে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল, হাসিনাও একই পথ অনুসরণ করে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। আসলে তারা কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতো না। তারা কোনো গণতান্ত্রিক দল ছিল না। তারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও অংশ না নিয়ে পালিয়েছে, চব্বিশেও পালিয়েছে। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অপরাধ তারা বাংলাদেশের আত্মাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">বিএনপি জেলা কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, মানবাধিকারকর্মী বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক, ক্রীড়া সংগঠক চিন্ময় সাহা, সরকারি কৌঁসুলি শেখ মোহায়মেন, কওমি মাদ্রাসা পরিষদ খুলনা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মান্নান, পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রতন দাস, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান, ব্যবসায়ী নেতা শ্যামল দাশ, চিকিৎসক এসএম রবিউল ইসলাম, কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবাদত হোসেন প্রমুখ।</p> <p style="text-align:justify">এসময় মঞ্চে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব, অ্যাডভোকেট কাজী মুনিরুল হুদা, সাবিরা নাজমুল মুন্নি, সিঙ্গাপুর বিএনপির সাবেক সভাপতি কামরুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন খোকন প্রমুখ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামীকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।</p>