<p>নগরজীবনে ট্রাফিক জ্যামের বিকল্প খুঁজতে মোটরসাইকেল এখন বড় অবলম্বন। গ্রামাঞ্চলেও দ্রুত বাহন হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে এই বাহন। পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং ও ই-কমার্স ডেলিভারিসহ বাণিজ্যিক প্রয়োজনেও মোটরসাইকেলের কদর এখন তুঙ্গে। তাই বাড়ছে হেলমেটের ব্যবহার।</p> <p>ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাইড শেয়ারিং সম্প্রসারিত হওয়ার পর থেকে মোটরসাইকেল ও হেলমেটের বিক্রি বেড়েছে। সেই সঙ্গে আইনের প্রয়োগও অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। চালকের পাশাপাশি আরোহীরাও হেলমেট ব্যবহারে বাধ্য হওয়ায় পণ্যটির বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে। দেশের বাজারের প্রতিটি হেলমেট আমদানি করা। বাইকারদের দিন দিন মানসম্মত হেলমেটের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। মূলত চীন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হয় হেলমেট।</p> <p>রাজধানীর নতুনবাজার ১০০ ফিট এলাকায় বাইকারদের খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের হেলমেট বিক্রয়কারী শোরুম ‘বাইকার ভাই’। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হরেক রকমের ব্র্যান্ড ও নানা রঙের হেলমেট রয়েছে। এসব হেলমেটের নিরাপত্তা ইস্যুতেও রয়েছে প্রযুক্তির সর্বশেষ ছোঁয়া। এই শোরুমে ২০ থেকে ২২ ধরনের ব্র্যান্ডের হেলমেট রয়েছে। সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে শুরু করে ৬২ হাজার টাকার হেলমেটও এই শোরুমে বিক্রি হয়।</p> <p>শোরুমের মালিক মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘বর্তমানে হেলমেটের বাজার চাঙ্গা। বাইকারদের পছন্দই হলো ব্র্যান্ডের হেলমেট। তাই আমাদের শোরুমে ব্র্যান্ডের ও উন্নতমানের হেলমেট বিক্রি করে থাকি। ইউরোপের এলএসটু, কেওয়াইটি ও ক্যাবার্গ ব্র্যান্ডের হেলমেট বাজারে চলছে। স্পেনের এমটি হেলমেট ও থাইল্যান্ডের বিলমোলা হেলমেট ছাড়াও এসএমকে, ইউহি, নেক্স এই ব্র্যান্ডের হেলমেটগুলো এখন খুবই জনপ্রিয়। পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে ব্র্যান্ডের হেলমেটগুলো এখন বাজারে বেশি চলছে। ’</p> <p>রাজধানীর মিরপুরে ৬০ ফিট এলাকায় ব্র্যান্ডের হেলমেট বিক্রয়কারী শোরুম ‘গিয়ারএক্স বাংলাদেশ’। এই শোরুমের বিক্রয়কর্মী মো. নাঈম বলেন, ‘দুই বছর আগের তুলনায় হেলমেট বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে। আমরা শুধু ব্র্যান্ডের হেলমেট বিক্রি করি। এখন দৈনিক ১০ থেকে ১৫টি হেলমেট বিক্রি হয়, আগে পাঁচ-ছয়টি হেলমেট বিক্রি হতো। বর্তমান বাজারে কেওয়াইটি ও বিলমোলা এই দুটি ব্র্যান্ডের হেলমেট বেশি বিক্রি হচ্ছে। কেওয়াইটি হেলমেটের দাম ৯ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। বিলমোলা হেলমেটের দাম সাত হাজার ৯০০ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। ’ দেশে হেলমেটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেক অসাধু ব্যবসায়ী চীন থেকে নিম্নমানের হেলমেট আমদানি করে বাজারে কম দামে বিক্রি করছেন। পুলিশের মামলার ভয়ে রাইড শেয়ারিংয়ে জড়িত ব্যক্তিরা কম দামে এসব নিম্নমানের হেলমেট কিনছেন। ফলে হেলমেট ব্যবহারেও চালক ও আরোহীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না।</p> <p>সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘এগুলো শুধু ট্রাফিক পুলিশের জরিমানার হাত থেকে মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীদের রক্ষা করে, কিন্তু কোনো নিরাপত্তা দেয় না। বাজারে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় নিম্নমানের হেলমেট পাওয়া যায়, যার কারণে কম দামে পেয়ে ক্রেতারা এসব নিম্নমানের হেলমেট কিনছেন। ’</p> <p>কয়েক বছর ধরে চীন থেকে ভালো মানের হেলমেট আমদানি করছে স্টেলথ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বছরে দুই লাখ বিভিন্ন মডেলের হেলমেট আমদানি করছে। দেশের বাজারে স্টেলথ ব্র্যান্ড নামে বাজারজাত করছে। স্টেলথ লিমিটেডের পরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘মানুষের সচেতনতা এবং আইনের বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে বাজারে হেলমেটের চাহিদা বেড়েছে। দেশের বাজারের চাহিদার শতভাগ আমদানিনির্ভর। বছরে ১৮ লাখ হেলমেট আমদানি করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আসে চীন থেকে। ভারত, ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকেও হেলমেট আসে। দেশের বড় ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা বড় পরিসরে হেলমেট আমদানি করছে। এ ছাড়া ছোট পরিসরে আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হেলমেট আমদানি করে। ’ বর্তমানে দেশে হেলমেটবাজারের আকার কত কোটি টাকার—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা হেলমেট আমদানি করি, তাদের কোনো সংগঠন না থাকায় দেশে হেলমেটের বাজার কত কোটি টাকার সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব বা তথ্য নেই। ’</p> <p>বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৯০৫। এর মধ্যে ২০২১ সালেই তিন লাখ ৭৫ হাজার ২৫২টি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন হয়েছে। ২০১০ সালে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৫৫ হাজার ৫১৪।</p> <p>বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও সাবেক সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মোটরসাইকেল যেহেতু দুই চাকার বাহন, তাই এটিতে ঝুঁকি অনেক। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সাধারণত মানুষের মাথায়, পা ও হাতের কনুইয়ে বেশি আঘাত লাগে। তাই হেলমেট ব্যবহার করলে দুর্ঘটনা ঘটলেও ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। চালক ও আরোহীর জীবন বাঁচানোর জন্য হলেও হেলমেট পরতে হবে। কিন্তু নিম্নমানের হেলমেট কার্যকরী হবে না। মানসম্মত ও ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। ’</p>