<p>বিশ্বের উন্নত সাত দেশের জোট জি৭, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়া গত শুক্রবার সমুদ্রপথে রপ্তানি করা রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের মূল্য ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নির্ধারণ করে দেয়, যা গত সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এ মূল্য মানবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া।</p> <p>জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া যদি পশ্চিমাদের বেঁধে দেওয়া দামে তেল বিক্রি না করে উৎপাদন কমিয়ে দেয় তাহলে ভবিষ্যতে তেলে জোগানে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তবে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ সরাসরি তেল আমদানি করে না, তাই রাশিয়ার তেলের দর বেঁধে দেওয়ার প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার আশঙ্কা নেই।</p> <p>বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশ যেহেতু রাশিয়া থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল আমদানি করছে না, তাই রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দেওয়ার প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার সম্ভাবনা নেই। ’</p> <p>সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অবস্থানে রাশিয়া। তেল রপ্তানি থেকে রাশিয়ার আয় কমানোই পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য।</p> <p>জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দেশ সরাসরি রাশিয়ার তেল না কিনলেও এতে কিছু প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন যদি রাশিয়া পশ্চিমাদের বেঁধে দেওয়া দামে (৬০ ডলারে) অপরিশোধিত তেল বিক্রি করতে রাজি হয় তাহলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কিছুটা কমবে। এই সুবিধাটি বাংলাদেশও পাবে। আর যদি রাশিয়া নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি না করে উৎপাদন কমিয়ে দেয় তাহলে জোগানে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এতে দাম কিছুটা বেড়েও যেতে পারে। ’</p> <p>ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া প্রতিদিন ৫০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে। এর অর্ধেকের বেশি রপ্তানি হয় ইউরোপে। কিন্তু রাশিয়া বলে দিয়েছে, তারা পশ্চিমাদের বেঁধে দেওয়া দাম মানবে না এবং যেসব দেশ ওই দাম অনুসরণ করতে চায় তাদের রাশিয়া তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।</p> <p>জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে চাপের মধ্যে ফেলার জন্যই পশ্চিমারা রাশিয়ার তেলের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটা আমি মনে করি পশ্চিমারা খুব ভালো একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে আর তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ’</p> <p><strong>বিশ্ববাজারে কী প্রভাব পড়বে</strong></p> <p>জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশগুলোর গঠিত জোট ওপেক প্লাস গত রবিবার একটি বৈঠক করেছে। নতুন বিধির কারণে তেলের বাজার যেন নষ্ট না হয়, তা কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। ওপেক প্লাস ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ দিনে ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এই পরিমাণ তেল বিশ্বের মোট তেলের চাহিদার প্রায় ২ শতাংশ।</p> <p>ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারের জ্বালানি নীতিমালাবিষয়ক বিশ্লেষক ফিলিপ লসবার্গ মনে করেন, এসব বিধিতে রাশিয়া ছাড়া প্রতিটি তেল উৎপাদনকারী দেশই লাভবান হবে। তাঁর মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই মূলত এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে রাশিয়া যদি আরো ট্যাংকার কেনার মধ্য দিয়ে কিংবা অন্য কোনো কৌশলে আরো বেশি তেল রপ্তানি করে ফেলতে পারে, তবে বাকি বিশ্ব ও তেলের বাজার কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা এখন দেখার বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।</p> <p><strong>রাশিয়ার তেল কিনছে ভারত ও পাকিস্তান</strong></p> <p>গত ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর পর থেকে রাশিয়ার জ্বালানিসহ নানা বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা দিলেও চীন, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল কিনছেই। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেল কেনায় মূল্যসীমা (প্রাইস ক্যাপ) বসিয়ে দেওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত ও পাকিস্তান রাশিয়ার কাছ থেকে তেলসহ অন্যান্য জ্বালানি কেনার ঘোষণা দিয়েছে। দুই দেশের কারো ক্ষেত্রেই মূল্যসীমা মানার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।</p>