<p style="text-align:justify">প্রতিবছর মৌসুমের শেষে সংকটে অস্বাভাবিক দাম বাড়ে পেঁয়াজের। ৪০-৫০ টাকার পেঁয়াজ হয়ে যায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। সংকট মোকাবেলায় সরকারকে বিপাকে পড়তে হয়। তাই পেঁয়াজ সংকট কাটাতে ও নষ্ট হওয়া রোধ করতে দেশব্যাপী ঘর নির্মাণ প্রকল্প চলছে।</p> <p style="text-align:justify">যার সুফল মেলায় তিন গুণ করা হচ্ছে পেঁয়াজের ঘর নির্মাণ। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পেঁয়াজের ঘর নির্মাণ করতে পারলে পেঁয়াজ সংকটের সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।</p> <p style="text-align:justify">পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে দেশের তিনটি বিভাগের সাত জেলার ১২ উপজেলায় কৃষকদের ৩০০টি পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণ মডেল ঘর নির্মাণের জন্য ২৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি তিনটি অ্যাসেম্বল সেন্টার নির্মাণসহ মোট তিন হাজার ৯৪০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করার কথা ছিল।</p> <p style="text-align:justify">প্রকল্পটির কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়নকাল ছিল ২০২১ সলের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।</p> <p style="text-align:justify">বর্তমানে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় এবং প্রকল্পটি খুবই সময়োপযোগী হওয়ায় প্রকল্পটির সংশোধন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাবে আরো নতুন ৬০০ মডেল ঘর বাড়িয়ে মোট ৯০০টি মডেল ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে ১৮ উপজেলায়। পাশাপাশি তিনটি অ্যাসেম্বল সেন্টার নির্মাণসহ মোট ১০ হাজার ২০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।</p> <p style="text-align:justify">প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল না বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্তই রাখা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত প্রতিবছর মোট উৎপাদনের প্রায় ২৫-৪০ শতাংশ পেঁয়াজ সঠিক সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। পেঁয়াজ ঘরের এই মডেল ব্যবহারের ফলে পেঁয়াজ নষ্টের পরিমাণ ৩-৭ শতাংশে নেমে এসেছে। গত বছরে পরীক্ষামূলকভাবে আটজন কৃষক মডেল ঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখলে দেখা যায়, মাত্র গড়ে ৩ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে এবং সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এবার ২২০টি ঘরে পেঁয়াজ রাখা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">আশা করা যায়, কৃষকরা এবার আরো বেশি উপকৃত হবেন।</p> <p style="text-align:justify">পেঁয়াজ ঘরে কেমন সুফল পাচ্ছেন জানতে চাইলে ফরিদপুরের কৃষক আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে সনাতন পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে ১০০ মণের মধ্যে ৩০ থেকে ৩২ মণ নষ্ট হয়ে যেত। গত বছর এই মডেল ঘরে ১৪০ মণ পেঁয়াজ রেখে ১৩৪.৫ মণ বিক্রি করতে পেরেছিলাম, মাত্র ৪ শতাংশ নষ্ট হয়েছে। এ বছরও ৩১০ মণ পেঁয়াজ রেখেছি। আশা করছি গত বছরের মতো এ বছরও অনেক লাভবান হতে পারব।’</p> <p style="text-align:justify">আমজাদ হোসেনের মতোই ইয়াসিন মোল্লা ও গোলাম মোস্তফা এই মডেল ঘরে পেঁয়াজ রেখে অনেক লাভবান হয়েছেন। তাঁরা বলেন, এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ রেখে পেঁয়াজের পচন অনেক কম হয়েছে। পেঁয়াজ নিয়ে টেনশন করতে হয় না। আবার বাজার বুঝে পেঁয়াজ বিক্রি করে ভালো দামও পাচ্ছি।’</p> <p style="text-align:justify">প্রকল্প পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, এরই মধ্যে প্রায় ২৪৫টি সংরক্ষণাগার তৈরি হয়ে গেছে, যার ফলে কৃষকরা এরই মধ্যেই সুবিধা পাওয়া শুরু করে দিয়েছেন। পেঁয়াজ ঘরের সফলতা দেখে মন্ত্রণালয় আরো ৬০০টি পেঁয়াজ ঘর বাড়িয়ে দিয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৯.৯ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর পেঁয়াজ উৎপাদন ছিল ৩৪.৫৭ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা হলো ২৮ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন পর্যাপ্ত হলেও প্রতিবছর ৩০-৪০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা যায় এবং ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছর প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়।  </p> <p style="text-align:justify">প্রকল্প পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘পেঁয়াজের মৌসুমের শুরুতে এক থেকে দেড় মাস প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন আমাদের খাওয়া হয়ে যায়। ফলে চাহিদার অবশিষ্ট ২০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ সংরক্ষণের প্রয়োজন দেখা যায়। ৯০০টি মডেল ঘরে ৯ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। ২০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ সংরক্ষণে দুই লাখ পেঁয়াজ ঘর প্রয়োজন। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে ঘর তৈরি করার আগ্রহ তৈরি করা হচ্ছে। তাঁরা এরই মধ্যে অনেক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ঘর তৈরি করার জন্য। পরবর্তী সময়ে তাঁরা তাঁদের বেনিফিটের জন্যই ঘর তৈরি করে সংরক্ষণ করবেন।</p> <p style="text-align:justify">কৃষি-অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. জাহাঙ্গীর আলম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভালো ফলন হওয়া সত্ত্বেও যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিবছর প্রায় ২৯-৩০ লাখ টন পেঁয়াজের প্রয়োজন হলেও আমাদের উৎপাদন অনেক বেশি। সুতরাং পেঁয়াজ নষ্ট রোধ করা গেলে আমাদের আর আমদানি করতে হবে না।’</p> <p style="text-align:justify">জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। আমাদের উৎপাদন হয় প্রায় ৩৫ থেকে ৩৬ লাখ টন। কিন্তু আমাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ বিভিন্ন পর্যায়ে পচে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে ভোগের জন্য প্রায় ২৫ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ থাকে না। ফলে প্রতিবছর পাঁচ থেকে ছয় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।’</p>
