<p style="text-align:justify">দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ও তাৎক্ষণিক আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল আর্থিক সেবা। শুধু অর্থ পাঠানোই নয়, অনেক নতুন সেবাও মিলছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা বিতরণ, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ (রেমিট্যান্স) বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ মাধ্যমটি।</p> <p style="text-align:justify">তবে গত জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কয়েক দিন ইন্টারনেট বন্ধ এবং ধীরগতির বড় প্রভাব পড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়েও। এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমেছে ২১ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।</p> <p style="text-align:justify">কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। আর আগের মাস জুনে এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে জুনের তুলনায় জুলাই মাসে লেনদেন কমেছে ৩২ হাজার ৯১২ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ২১ শতাংশেরও বেশি।</p> <p style="text-align:justify">প্রতিবেদন বলছে, জুলাই মাসে এমএফএসগুলোতে জমা (ক্যাশ ইন) হয়েছে ৩৫ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। আর আগের মাস জুনে এমএফএসগুলোতে জমা (ক্যাশ ইন) হয়েছিল ৪৩ হাজার ৫৬২ কোটি।</p> <p style="text-align:justify">সেই হিসাবে জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে ক্যাশ ইন কম হয়েছে আট হাজার ২২৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়েছে ৪০ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। তার আগের মাসে এমএফএসের মাধ্যমে উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়েছিল ৫১ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে জুনের তুলনায় জুলাই মাসে ক্যাশ আউট কম হয়েছে ১১ হাজার ২৪০ কোটি টাকা।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে দুই হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, যা জুন মাসে ছিল তিন হাজার ২২৩ কোটি টাকা।</p> <p style="text-align:justify">সে হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ কমেছে প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা। একইভাবে কমেছে রেমিট্যান্স আহরণ। যেখানে জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে প্রবাসীরা ৯৯৪ কোটি টাকা পাঠিয়েছিলেন; সেখানে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৭১৪ কোটি টাকা। কমেছে প্রায় পৌনে দুই শ কোটি টাকা।</p> <p style="text-align:justify">তবে লেনদেন কমলেও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে হিসাবসংখ্যা। চলতি বছরের জুলাই মাসে হিসাবসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৮৫৬-এ। জুন মাসে হিসাবসংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার ২০৬। সে হিসেবে হিসাবসংখ্যা বেড়েছে সাত লাখ ৯ হাজার ৬৫০টি। নিবন্ধিত এসব হিসাবের মধ্যে পুরুষ গ্রাহকের হিসাব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ২৩৩ এবং নারী গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৭১ লাখ আট হাজার ৪৮০টি। এসব হিসাবের মধ্যে শহরের হিসাবসংখ্যা হলো ১০ কোটি ৯৮ লাখ দুই হাজার ৬৫৯ এবং গ্রামের হিসাবসংখ্যা হলো ১২ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৪।</p> <p style="text-align:justify">২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালুর মধ্যে দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংসেবার বেশির ভাগই বিকাশের দখলে। এরপর ‘নগদ’-এর অবস্থান।</p> <p style="text-align:justify">লেনদেন ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টির মতো ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেওয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। পোশাক খাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন। যার ফলে দিন দিন নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে। এ প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।</p>