<p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা (একনেক) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ বুধবার, যা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম সভা। এর আগে সর্বশেষ একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল চলতি বছরের ২ জুলাই।</p> <p style="text-align:justify">পরিকল্পনা কমিশনের একনেক উইং সূত্রে জানা গেছে, একনেকে অনুমোদনের জন্য পাঁচটি প্রকল্প উত্থাপন করা হবে। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে তিন হাজার ৪৫৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা।</p> <p style="text-align:justify">প্রকল্পগুলোর মধ্যে তিনটি সংশোধিত এবং দুটি নতুন প্রকল্প রয়েছে। যদিও শতাধিক প্রকল্প একনেকের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পুনঃ যাচাইয়ের জন্য ১৩টি প্রকল্প ফেরতও পাঠানো হয়েছে। রীতি অনুযায়ী সব সময় একনেক সভা পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা পরিবর্তন করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">প্রথমবারের মতো তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে এই সভা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনে সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে তা অবগত করবেন।</p> <p style="text-align:justify">জানা গেছে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পেরিয়েছে এরই মধ্যে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা (একনেক) অনুষ্ঠিত হয়নি। এ ছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব সত্যজিত কর্মকারের বিদায়ের পর আর কোনো সচিব না আসায় কর্মকর্তারাও রয়েছেন দ্বিধায়। এমন অবস্থায় একনেক সভায় কোন কোন প্রকল্প তোলা হবে সেটা নিয়েও ছিল সিদ্ধান্তহীনতা।</p> <p style="text-align:justify">পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম একনেক সভাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সভায় প্রস্তাবিত এবং চলমান প্রকল্প নিয়ে বিশেষ নির্দেশনা আসতে পারে। একই সঙ্গে নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু নির্দেশনা আসতে পারে। কী ধরনের প্রকল্প গুরুত্ব পাবে এমন প্রশ্নে তাঁরা জানান, বর্তমান সরকারের কাছে গুরুত্ব পেতে পারে জনবান্ধব প্রকল্প। যেগুলোতে সরাসরি জনগণ উপকৃত হবে এমন প্রকল্পই বেশি গুরুত্ব পাবে।</p> <p style="text-align:justify">পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বশেষ গত ২ জুলাই শেখ হাসিনা সরকারের শেষ একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের উন্নয়নে গত ৯ নভেম্বর একনেকের সভায় ৪৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপর অনুষ্ঠিত একনেকের প্রায় সব সভায় কমপক্ষে ১০টি প্রকল্প পাস হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম একনেকে অনুমোদনের জন্য যেসব প্রকল্প উত্থাপন করা হবে তার মধ্যে রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের ‘বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।</p> <p style="text-align:justify">সংশোধিত প্রকল্পটির ব্যয় ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ৫৭০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। কার্য তালিকায় থাকা দ্বিতীয় প্রকল্প হলো ‘দুটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দরপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং দুটি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দরপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন প্রকল্প’। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। নতুন এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। </p> <p style="text-align:justify">একনেক সভার কার্য তালিকায় থাকা তৃতীয় প্রকল্পটি হলো, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ‘মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) দ্বিতীয় সংশোধিত তথ্য আপা নামক প্রকল্প। প্রকল্পটির ব্যয় ১৬৩ কোটি ১০ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৭৪৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।</p> <p style="text-align:justify">কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। নতুন এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে ইউনিসেফ অনুদান হিসেবে ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা দেবে। বাকি ২৯৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা সরকার দেবে।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ‘লাঙ্গলবন্ধ মহাষ্টমী পুণ্যস্নান উৎসবের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটি। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১৪৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। </p> <p style="text-align:justify">এদিকে গত ১৪ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকারের নিয়োগ বাতিল করা হয়। ফলে সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী। সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, জিডিপি বাড়ানোর চেয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানো এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। প্রকল্প যাচাই-বাছাই করাও খুব প্রয়োজন। কারণ এখানে অনেক বিশৃঙ্খলা রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেগুলো আবার পর্যালোচনা করা হবে, ছাঁটাই করা হবে।</p>