<p style="text-align:justify">আর্থিক অনিয়মে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ সংকটে পড়া সাত ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা চেয়েছে। অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে এমন ১০টি ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিতে রাজিও হয়েছে। তাদের এই ঋণে গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।</p> <p style="text-align:justify">কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ধার পেলেই কি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে সফলতা ও ব্যর্থতা দুই ধরনের উদাহরণই রয়েছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="দুর্বৃত্তায়নের সহযোগী ছিল প্রশাসন, আচরণ রাজনৈতিক কর্মীর মতো" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/17/1731810651-31a0cd439c1b65a1f6f2bc32d7e1ae79.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>দুর্বৃত্তায়নের সহযোগী ছিল প্রশাসন, আচরণ রাজনৈতিক কর্মীর মতো</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/17/1447533" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">একদিকে আছে পদ্মা (সাবেক ফারমার্স), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও বিডিবিএল। যেসব ব্যাংকের নামের পরিবর্তন, আর্থিক সহায়তা ও পর্ষদ পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু উন্নতি হয়নি। আবার অন্যদিকে রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল)।</p> <p style="text-align:justify">ব্যাপক অনিয়ম-জালিয়াতি ও অর্থপাচারে জড়িতে হয়ে পড়ায় ১৯৯১ সালের ৫ জুলাই বৈশ্বিকভাবে ধসে পড়ে ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল কমার্স (বিসিসিআই)। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডসহ বেশ কিছু দেশের আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রক বিসিসিআইয়ের সম্পদ জব্দ করে এবং এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংক হিসেবে গণ্য করা হয় ইবিএলকে। পক্ষান্তরে এখনো খুঁড়িয়ে চলছে পদ্মা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও বিডিবিএল।</p> <p style="text-align:justify">তারল্য সহায়তা পেতে ৯টি ব্যাংক এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। এগুলোর মধ্যে একাধিক ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণের হার ৮০ শতাংশের ঊর্ধ্বে। রয়েছে মূলধন ঘাটতি। পাশাপাশি চলতি হিসাব ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এসব ব্যাংকের পক্ষে ধারের টাকায় ঘুরে দাঁড়ানো বেশ কঠিন হবে।</p> <p style="text-align:justify">অত্যধিক দুর্নীতির শিকার ব্যাংকগুলোতে স্বাভাবিক গতি নাও ফিরতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে এত ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। দেশের কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করার বিষয়েও মত দিয়েছেন অনেকে।</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক এমডি ও জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার আনিস এ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দেশে আসলে এত ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। অডিট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু ব্যাংক আসলেই মার্জ করে দেওয়া উচিত। তবে এই কাজটা সময়সাপেক্ষ। অন্তত দুই বছর প্রয়োজন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আগের সরকার ব্যাংক মার্জারের উদ্যোগ নিলেও তা পরিকল্পিত ছিল না। তাই সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন বর্তমান সরকার যদি মার্জের কথা ভাবে, তাহলে এই প্রক্রিয়ার জন্যই আলাদা একটি টাস্কফোর্স গঠন করা দরকার।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আজ ১৭ নভেম্বর, দিনটি কেমন যাবে আপনার?" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/17/1731810097-032b2cc936860b03048302d991c3498f.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আজ ১৭ নভেম্বর, দিনটি কেমন যাবে আপনার?</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2024/11/17/1447531" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এরই মধ্যে তারল্য সহায়তার অংশ হিসেবে ছয় হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার গ্যারান্টি সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা প্রদানে গ্যারান্টি প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে সবল ব্যাংকগুলো থেকে তারা তারল্য সহায়তা পাচ্ছে, যার একটা ইতিবাচক প্রভাব পুরো খাতে পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে যে ব্যাংকগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে, সেগুলোর ক্যাশ-ফ্লো ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, গ্রাহকের চাহিদা মেটানোর পরও ওই ব্যাংকগুলোতে দিনশেষে উদ্বৃত্ত তারল্য থাকছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ব্যাংকগুলোর ওপর গ্রাহকরা আস্থা ফিরে পাচ্ছেন।</p> <p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় আটটি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল এস আলম গ্রুপ। এগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল তারা। এই আটটি ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। তবে এর মধ্যে ছয়টি ব্যাংকের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তাদের অনেক শাখায় লেনদেন করার মতো নগদ টাকা নেই। আমানতকারীদের চাপে পড়েছেন শাখা কর্মকর্তারা।</p> <p style="text-align:justify">গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। এর মধ্যে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা আটটিসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে নতুন করে পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্ষদ পুনর্গঠন করা অন্য তিন ব্যাংক হলো আইএফআইসি, ইউসিবি ও এক্সিম ব্যাংক। </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ঢাকার তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/17/1731810628-30e62fddc14c05988b44e7c02788e187.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ঢাকার তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/17/1447532" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দখলে ছিল আইএফআইসি ব্যাংক, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংকের দখলে ছিলেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।</p> <p style="text-align:justify">গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে এগুলোসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নামে-বেনামে টাকা বের করে নেওয়ায় তীব্র তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে ব্যাংকগুলোয়। দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাবেও ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। তবে হিসাব ঋণাত্মক হলেও লেনদেন অব্যাহত রাখার সুযোগ দিয়েছিলেন সাবেক পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। টাকা ছাপিয়ে দেওয়া সেই বিশেষ সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনো ইতিহাস নেই বাংলাদেশে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেলেই পরবর্তী সময়ে তার পারফরম্যান্স যত খারাপই হোক, ব্যাংক সরকারি সহায়তায় বাঁচিয়ে রাখা হয়।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এরই মধ্যে আমানত-বীমা স্কিমের মাধ্যমে ৯৫ শতাংশ আমানতকারীর আমানত সুরক্ষিত করা হয়েছে। তার পরও শতভাগ আমানতকারীর কথা ভেবে কঠিন সিদ্ধান্তের দিকে যেতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এমন সহায়তা সব সময় দেওয়া হবে না।</p> <p style="text-align:justify">এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘তারল্য সংকটে থাকা কিছু ছোট ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগ মালিকানা এখন সরকারের অধীনে। তাই সরকারের ক্ষেত্রে একীভূত করা সহজ হবে। তবে বাস্তবতা বুঝে আমরা কাজ করব। ব্যাংক একীভূত হলেও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা ৯টি ব্যাংকের অডিট করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছি। আমরা তিনটি করে ব্যাংকের অডিট করব। এ প্রক্রিয়ার শুরুতেই ইসলামী ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত থাকবে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এসব ব্যাংকের প্রতিটি ঋণ অডিট করা হবে এবং সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করা হবে।’ বর্তমানে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর নিট ডিপোজিট ইতিবাচক রয়েছে বলেও জানান তিনি।</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোনো দুর্বল ব্যাংক ও তার মাধ্যমে বাংলাদেশে ঘুরে দাঁড়ানোর উদাহরণ বিরল। এর জ্বলন্ত প্রমাণ আমাদের সামনে পদ্মা, বিডিবিএল, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মার্জ করে দেওয়া উচিত।’</p>