<p style="text-align:justify">দেশে সাধারণ ভোজ্য তেলের চেয়ে বাড়তি পুষ্টিগুণসম্পন্ন হাই ভ্যালু   তৈলজাত ফসল পেরিলার বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে (খরিপ-২) বাংলাদেশে চাষযোগ্য একমাত্র অভিযোজিত তৈলজাতীয় ফসল এটি। তাই এর বাণিজ্যিক উৎপাদনে ভোজ্য তেলের আমদানিনির্ভরতা কমানো সম্ভব বলে আশা করছেন গবেষকরা।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা বছরে ২৪ লাখ টন। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তৈলজাত ফসল মোট আবাদ হয় দেশের ১০ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত বীজ দিয়ে চার লাখ ৯১ হাজার টন তেল উৎপাদন সম্ভব। রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে দেশে ২৫ লাখ সাত হাজার টন সয়াবিন ও পামতেল আমদানি করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">আমদানিনির্ভরতা কমানোর জন্য বাংলাদেশের কৃষিতে তৈলজাত ফসল উৎপাদন, চাষ বৃদ্ধি ও জাত উন্নয়ন প্রয়োজন। তবে প্রধান ফসল বোরো ধান এবং তৈলজাত অধিকাংশ ফসলের উৎপাদন একই মৌসুমে হওয়ায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বৃদ্ধি কষ্টসাধ্য।  </p> <p style="text-align:justify">তবে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) গবেষণাকৃত তৈলজাত ফসল ‘সাউ পেরিলা’ খরিপ-২ বা বর্ষা মৌসুমের ফসল হওয়ায় এর চাষ ধানের চাষে কোনো প্রভাব না ফেলেই তৈলজাত ফসলের চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বৃদ্ধিতে সক্ষম।</p> <p style="text-align:justify">ফসলটি নিয়ে গবেষণা করা পিএইচডি ফেলো আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার জানান, ‘আমরা জরিপ করে দেখেছি খরিপ-২-এর ফসল আমনের আবাদযোগ্য জমি না কমিয়েই এক লাখ হেক্টর জমিতে সাউ পেরিলার আবাদ করা সম্ভব। এতে তৈলজাত ফসলের মোট ফলন বাড়বে, পাশাপাশি কমে যাবে তেলের আমদানির পরিমাণ।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="তেল আমদানি কমাবে ‘সাউ পেরিলা’" height="163" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12.December/kk--1a-01--12-2024.jpg" width="1000" /></p> <p style="text-align:justify">শেকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেনের তত্ত্বাবধানে ২০০৭ সাল থেকে এর ধারাবাহিক গবেষণা শুরু হয়। দেশে এর চাষাবাদের উপযোগিতা নিরূপণের পর ২০২০ সালে ‘সাউ পেরিলা-১’ নামে জাতটি নিবন্ধিত হয়। ফসলটি গোল্ডেন পেরিলা নামেও সুপরিচিত।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশে বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্যের দিকেও ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। খাদ্যমানের বিবেচনায় পেরিলা তেল অন্যান্য  তৈলজাত ফসলের চেয়ে এগিয়ে।</p> <p style="text-align:justify">ড. তারিক হোসেন জানান, পেরিলায় রয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ লিনোলিনিক এসিড, যা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের প্রধান উৎস। এটি হার্টের জন্য খুবই উপকারী। এই বীজ থেকে ৪০ শতাংশ তেল আহরণ করা যায়।  প্রাপ্ত ফ্যাটি এসিডের ৯১ শতাংশ অসম্পৃক্ত, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া মস্তিষ্ক ও ত্বকের জন্যও উপকারী। এ তেলে প্রাপ্ত আমিষের পরিমাণ ২৫ শতাংশ।</p> <p style="text-align:justify">পানি জমে থাকে না এমন উচু জমিতে খরিপ-২ মৌসুমে এ ফসলের চাষ করা হয়। ১৫ থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে বীজ বপন করে প্রয়োজনীয় চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করে হেক্টরপ্রতি সর্বোচ্চ ১.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। এ ফসলে রোগের পরিমাণ অন্যান্য তেল ফসলের চেয়ে কম হওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যার খরচও কম বলেছেন কৃষক ও গবেষকরা। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদেশ থেকে আমদানি করা পেরিলা তেল দেশে লিটারপ্রতি দুই হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">অধ্যাপক ড. তারিক হোসেন বলেন, ‘এ বছর কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) প্রায় চার মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের কাজ করছে। সাউ পেরিলা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে এ বীজ আগামী বছর দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের মাঝে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০২১ সাল থেকে দেশের অধিকাংশ জেলায় সাউ পেরিলার চাষ হয়ে আসছে। আমরা প্রতিটি কৃষকের কাছ থেকে ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি।’</p> <p style="text-align:justify">তবে তেলটি উচ্চমূল্যের হওয়ায় মধ্যবিত্তের নাগালে আনতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার বলে জানান ড. তারিক। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এই স্বাস্থ্যনিরাপদ তেল বাণিজ্যিক উৎপাদন করে দেশে সরবরাহ ও বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করতে পারে বলে অভিমত দেন তিনি।</p>