<p style="text-align: justify;">রাজশাহী ও খুলনার প্রান্তিক অঞ্চলে চালানো এক জরিপে শিশুদের শিক্ষার দুরবস্থা ফুটে উঠেছে। পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী এক হাজার ৫৩৩ জন শিশুর ওপর চালানো জরিপে দেখা গেছে, তাদের একটা অংশ বাংলা ও ইংরেজি বর্ণ পর্যন্ত পড়তে পারে না। সারা দেশে পরিচালিত সরকারি এক জরিপেও দেখা গেছে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী বর্ণমালা পর্যন্ত ভুলে গেছে।</p> <p style="text-align: justify;">শিক্ষা খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব, শিক্ষকদের মান ও প্রশিক্ষণে ঘাটতি এবং পাঠদানে অনীহার কারণে এমন পরিস্থিতি।</p> <p style="text-align: justify;">এ থেকে উত্তরণে সরকারকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">২০২২ সালের জুন-জুলাই মাসে বেসরকারি সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘নাগরিক কর্তৃক মূল্যায়ন’ নামে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। আর্থিক সহায়তায় ছিল অক্সফাম আইবি আইএস। ‘এডুকেশন আউট লাউড’ প্রকল্পের মাধ্যমে চালানো এই জরিপে কারিগরি সহযোগিতায় ছিল স্ট্রিট চাইল্ড-ইউকে।</p> <p style="text-align: justify;">জরিপে দেখা গেছে, পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ইংরেজি বর্ণ পড়তে পারে না ১৬.৭৮ শতাংশ ছেলে ও ১৫.২২ শতাংশ মেয়ে। গড়ে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজি বর্ণ চেনে না।</p> <p style="text-align: justify;">ইংরেজি গল্প পড়তে পারেনি ৮৪.৮৫ শতাংশ ছেলে ও ৮২.৮৬ শতাংশ মেয়ে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ইংরেজি শব্দ চিহ্নিত করতে পেরেছে ২৪.১০ শতাংশ ছেলে ও ২৩.৬৬ শতাংশ মেয়ে।</p> <p style="text-align: justify;">জরিপের মাধ্যমে করোনা-পরবর্তী শিক্ষার্থীদের শিখন স্তরের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। কোনো না কোনো সময় বিদ্যালয়ে পড়া ৭৫১ জন ছেলে ও ৭৮২ জন মেয়ে শিশুর ওপর জরিপটি করা হয়। এটি বিদ্যালয়ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের জরিপ নয়। পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী প্রান্তিক শিশুদের বাড়িতে গিয়ে এই মূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বইয়ের বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে জরিপটি করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">জরিপে গ্রেডভিত্তিক মূল্যায়নকৃত শিশুর তথ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করা হয়েছে প্রথম শ্রেণির ১৮.৩৩ শতাংশ এবং তৃতীয় শ্রেণির ১৭.৮৬ শতাংশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। সবচেয়ে কম মূল্যায়ন করা শিশুর সংখ্যা ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির। খুলনা জেলার ৩৬টি গ্রাম ও রাজশাহী জেলার ৫২টি গ্রামে জরিপ করে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">জরিপ অনুযায়ী, ১০.২৮ শতাংশ ছেলে ও ৮.৭১ শতাংশ মেয়ে বাংলায় বর্ণ পড়তে পারেনি। বাংলায় গল্প পড়তে পারেনি ৬১.৯৫ শতাংশ ছেলে ও ৫৩.১৪ শতাংশ মেয়ে। গণিতে একক অঙ্ক শনাক্ত করতে পারেনি ১৪.১৯ শতাংশ ছেলে ও ১৩.০৬ শতাংশ মেয়ে। ভাগ করতে পারেনি ৯৫.৮৫ শতাংশ ছেলে ও ৯৭.২০ শতাংশ মেয়ে।</p> <p style="text-align: justify;">ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার মান উন্নত করতে না পারলে কোনো অর্জনই যথাযথভাবে নিশ্চিত করা যাবে না। তাই শিক্ষাকে আরো এগিয়ে নিতে কাজ করা জরুরি।’</p> <p style="text-align: justify;">স্ট্রিট চাইল্ড ইউকের প্রগ্রাম ম্যানজার ইমতিয়াজ হৃদয় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হলেও এসডিজি-৪ বাস্তবায়নে এই খাতে আরো কাজ করা প্রয়োজন। তাই সরকারের পাশাপাশি এনজিওসহ সবার অংশগ্রহণে শিক্ষা খাতকে আরো এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে।’ </p> <p style="text-align: justify;">শিক্ষাবিদ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক মঞ্জুর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি সব গবেষণাতেই দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, দক্ষতা ও যোগ্যতায় ঘাটতি রয়েছে, তাদের হয়তো কাজ করার আগ্রহ নেই এবং জবাবদিহিরও ঘাটতি আছে। পর্যালোচনা করে সামগ্রিকভাবে এসব বিষয় থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ নিতে হবে।’</p> <p style="text-align: justify;">প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনাকালীন দুই বছরে পাঠদানে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে, শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি ক্লাস করানো, দুর্বল শিক্ষার্থীদের বাড়তি যত্ন নেওয়া, অনলাইনে বিভিন্ন ক্লাসের কনটেন্ট তৈরি করে দেওয়া এবং শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন করা। ফলে শিক্ষার্থীরা অনেকাংশেই তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছে।’</p> <p style="text-align: justify;"><strong>এনসিটিবির এলএলএস-২০২২ জরিপ</strong></p> <p style="text-align: justify;">জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ‘এলএলএস-২০২২’ জরিপে দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতির সময় দেশের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা ২০২০ ও ২০২১ সালে অটো পাসের মাধ্যমে পরবর্তী দুটি শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে সরাসরি পাঠ গ্রহণে বঞ্চিত হওয়ায় এসব শিক্ষার্থীর বিভিন্ন বিষয়ে নানা ধরনের শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এমনকি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী বর্ণমালা পর্যন্ত ভুলে গেছে। ফলে তারা বর্তমান শ্রেণিতে পাঠ গ্রহণের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না।</p> <p style="text-align: justify;">প্রতিবেদনে বলা হয়, ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি করতে পারে না দ্বিতীয় শ্রেণির ৯৫.৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। দুই সংখ্যার যোগ ও বিয়োগ করতে পারে না ৭৩.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।<br />  </p>