<p>সম্প্রতি দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপহারের বাস উধাও’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় ক্যাম্পাসে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উধাওয়ের সঙ্গে জড়িত চক্রটি মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তির দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা।</p> <p>জানা যায়, ২০১২ সালের ১২ মার্চ তারিখে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে এ কে এম ছায়াদত হোসেন বকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ৫২ সিটের একটি বাস উপহার হিসেবে প্রদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মু আবদুল জলিল মিয়ার হাতে বাসটির চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন ছায়াদত হোসেন বকুল। সেসময় বাস উপহার প্রদানের ছবি ও প্রেস রিলিজ জনসংযোগ দপ্তর থেকে প্রচারও করা হয়।</p> <p>গত ৩০ এপ্রিল ছায়াদত হোসেন বকুলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে বাসটি ফেরত চাওয়া হলে সদ্য পদত্যাগকারী ভিসি প্রফেসর ড. হাসিবুর রশীদ উপহারের বাসটি ফেরত প্রদানের অনুমতি দেন এবং রেজিস্ট্রার চিঠি দিয়ে গাড়িটি ফেরত নিতে বলেন। তবে অভিযোগ ওঠে কাউকে না জানিয়ে বা কোনো প্রকার হস্তান্তরের চিঠি ইস্যু না করে বাসটি ক্যাম্পাস থেকে বের করা হয়েছে। কে বা কারা বের করেছে তার সঠিক উত্তর দিতে দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।</p> <p>জানতে চাইলে পরিবহনপুল ও রেজিস্ট্রার অফিস থেকে বলা হয়েছিল, বাস ফেরত দেওয়া হয়েছে কিন্তু ভুলে হস্তান্তরের কোনো ডকুমেন্টস গ্রহণ করা হয় নাই। অথচ, এ নিয়ে নিউজ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। ২৪-০৫-২০২৪ তারিখের একটি স্বাক্ষর দেখিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাস হস্তান্তরের চিঠি আবিষ্কার করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, সংবাদ প্রকাশের পর তড়িঘরি করে পূর্বের স্বাক্ষর করা কাগজটি ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে স্বাক্ষরকারী একই ব্যক্তি কি না তার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কারণ, বাস চেয়ে আবেদনপত্র আর হস্তান্তর পত্রের স্বাক্ষরের কোনো মিল নেই। এখন বাস গ্রহণ ও হস্তান্তরের স্বাক্ষরে মিল না থাকায় বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবহনপুলের এক কর্মকর্তা জানান, সাবেক ভিসির পিএ আবুল কালাম আজাদ বাস হস্তান্তরের এই চিঠি জমা দিয়েছে। এই কর্মকর্তাই নানা ছলেবলে সাবেক ভিসিকে দিয়ে বাস হস্তান্তরের নামে বাসের মালিককে কিছু টাকা দিয়ে বাকি টাকা কয়েকজনে মিলে আত্মসাৎ করেছেন।</p> <p>আবেদনপত্র ও হস্তান্তর চিঠির স্বাক্ষরে অমিল বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কাছে জানতে চাওয়া হলে প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’</p> <p>পরিবহন পুলের উপসহকারী প্রকৌশলী (অটো মোবাইল) মো. সরফরাজ আলম বলেন, ‘বাসটি হস্তান্তর করার দায়িত্ব ছিল আমার। যেদিন ছুটিতে ছিলাম সেই দিন কে বা কারা বাস নিয়েছে আমি জানি না। এ বিষয়ে খোঁজে নিতে গেলে ওপর থেকে অনেকেই চাপ দিতে থাকে। কালের কণ্ঠ পত্রিকায় নিউজ করার পর গত রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) উপাচার্যের দপ্তরের পিএ টু ভিসি (সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা) মো. আবুল কালাম আজাদ আমার কাছে হস্তান্তরের চিঠিটি জমা দিয়ে যায়।’</p> <p>মো. সরফরাজ আলমের কথার প্রক্ষিতে কালের কণ্ঠকে ভিসির পিএ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি কেন হস্তান্তর চিঠি জমা দেব? আমি জমা দেওয়ার কে? যাদের দায়িত্ব ছিল তারা জমা দিছে, এটা তাদের ব্যাপার।’</p> <p>বাস প্রদানকারী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়াদত হোসেন বকুলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।</p> <p>বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী সিফাত আহসান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের উপাহারের বাস কিভাবে ফেরত দিল? কেন ফিরত দিল? যারা এই বাসের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে তাদের তদন্তের মধ্যে বিচারের আওতায় এনে জবাবদিহি এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’</p>