<p>ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না—এ নিয়ে কিছুদিন ধরে জোর আলোচনা হচ্ছে। এমনকি গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিষয়টি জোরালোভাবে আলোচনায় আসে। তবে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না করার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। </p> <p>ছাত্ররাজনীতির ব্যাপারে কালের কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সিন্ডিকেট সদস্য, ছাত্রনেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।</p> <p>তাঁরা জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হচ্ছে না। তবে প্রচলিত যে ছাত্ররাজনীতি রয়েছে, সেখান থেকে তাঁরা বেরিয়ে আসতে চান। এ জন্য ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতিতে বড় ধরনের যৌক্তিক সংস্কার আনা হবে। চালু করা হবে ডাকসুসহ হল সংসদ নির্বাচন।</p> <p>ঢাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করছি। আলোচনা এখনো চলমান। সবার মতামতের ভিত্তিতে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। বিভিন্ন মহল বিভিন্ন সময় যেমন বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আসে, ঠিক তেমনি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে।</p> <p>অনেকে আবার সরাসরি নিষিদ্ধ চাচ্ছেন না অনেকে ডাকসু, হল সংসদ নির্বাচন চালু করতে বলছেন। অনেকে ছাত্ররাজনীতির সংস্কারের কথা বলছেন। আমরা সবার কথা শুনে, সবার মতামত নিয়ে এরপর এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেব।’</p> <p>গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্রিয়াশীল ১০টি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এতে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), ছাত্র ফেডারেশন (গণসংহতি), গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা অংশ নেন।</p> <p>বৈঠকে নেতারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ না করে তা সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন। এ সময় তাঁরা দ্রুত ছাত্রসংসদ নির্বাচন চালু করার দাবি জানান।</p> <p>কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা যে ৯ দফা দাবি দিয়েছিলেন, সেগুলোর মধ্যে একটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।</p> <p>ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি বন্ধ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে একদল শিক্ষার্থী। তবে বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা বলছেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ না করে এটি সংস্কার করার প্রয়োজন। তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যে ভীতি রয়েছে, তা কেটে যাবে।</p> <p>ঢাবির কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. সিদ্দিকুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এটাকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তারা বলেছে এর একটি যৌক্তিক সমাধান হওয়া দরকার, বন্ধ নয়।’</p> <p>অধ্যাপক মো. সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘দেড় দশকে ছাত্ররাজনীতির দানবীয় যে চরিত্র আমরা দেখেছি, এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ও উপমহাদেশের বাস্তবতায় ছাত্ররাজনীতি একেবারে নিষিদ্ধ করা কোনো সমাধান নয়। যারা ছাত্ররাজনীতি করবে, তারা যেন জবাবদিহির মধ্যে থাকে। সে জন্য হল সংসদ নির্বাচন, ডাকসু নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। ছাত্ররা যেন কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি না করে, কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য যেন ছাত্ররাজনীতি ব্যবহার না হয়। এ জন্য একটি যৌক্তিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে ছাত্ররাজনীতি অব্যাহত থাকতে পারে।’</p> <p>ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলন এবং সর্বশেষ এই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তৈরি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি থমকে যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি পিছিয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি রাজনৈতিক চর্চা না থাকে, তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চর্চা থাকবে না। এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ ধারা, সুস্থ চিন্তার রাজনীতি দরকার। ছাত্ররাজনীতি হতে হবে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক, এই রাজনীতির মাধ্যমে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হতে হবে।’</p> <p>ঢাবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির কার্যক্রম থাকবে শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিতের জন্য, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি বা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য। প্রশাসনিক কোনো কাজ বা নিয়ন্ত্রণ আরোপের কোনো কাজ ছাত্রসংগঠন করতে পারবে না৷ এ ছাড়া ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিযোগিতা থাকবে, কোনো পেশিশক্তির প্রতিযোগিতা থাকবে না। এই প্রাথমিক সংস্কার যদি ছাত্ররাজনীতিতে করা যায়, তাহলে ছাত্ররাজনীতির আমূল পরিবর্তন হবে।’</p>