<p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="সব অপকর্মের মূলে তিন কর্তা" height="240" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/30/1732913278-fef753cabf783c29492e53fa16f28530.jpg" style="float:left" width="400" />আর সদস্য হিসেবে যুক্ত হন ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রকনুল হক ও সমাজসেবা শহর কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দিন। এ সময় অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপকর্মে জড়িত হন সমাজসেবার তিন কর্মকর্তা।</p> <p style="text-align:justify">এর মধ্যে গঠনতন্ত্রবহির্ভূত পদ সৃষ্টি, নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও অপরিকল্পিতভাবে ১১টি প্রকল্প গ্রহণ ছিল অন্যতম। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>গঠনতন্ত্রবহির্ভূত পদ সৃষ্টি</strong></p> <p style="text-align:justify">কমিটির দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর একটি নিয়োগপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন এই তিন কর্মকর্তা। এ সময় স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার গঠনতন্ত্রবহির্ভূত পদ সৃষ্টি করে উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল), ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর (ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারি) ও প্লাম্বার পদ তৈরি করা হয়।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বড়পর্দায় আমার কাজ করা উচিত : তিশা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/30/1732942900-22beb6857a8117b79d4cc141a8783f11.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বড়পর্দায় আমার কাজ করা উচিত : তিশা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2024/11/30/1452239" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এই পদগুলোতে তিন কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠজনদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের আপন ভাতিজা মো. সাকিলকে সহকারী হিসাবরক্ষক ও সাকিলের স্ত্রী নুসরাত আলমকে হিসাবরক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align:justify"><strong>৫৮ লাখ টাকার অধিক আত্মসাৎ</strong></p> <p style="text-align:justify">সলিমুল্লাহ এতিমখানার নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি নিয়মমাফিক অডিট বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে দেখতে পায়, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রিত চক্রটি ৫৮ লাখ চার হাজার ২০৯ টাকা আত্মসাৎ করেছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আইনজীবী সাইফুল হত্যায় ৩১ জনের নামে মামলা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/30/1732942684-91293e122223f0c091e4ed4e50bfc7a2.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আইনজীবী সাইফুল হত্যায় ৩১ জনের নামে মামলা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/30/1452237" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">অডিট রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ১ মে থেকে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত দৈনিক আদান-প্রদানকৃত বই নং-৫৮ চলমান ছিল। কিন্তু হিসাবরক্ষক নুসরাত আলম যোগদানের পর চলমান বই বন্ধ করে নতুন একটি ক্যাশবুক ব্যবহার শুরু করেন। যার কোনো নাম্বার না দিয়ে পেটি ক্যাশ নামে নামকরণ করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">তার এই হিসাব বইয়ে ৩০ আগস্ট ২২ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮৪ টাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২১ লাখ ৭০ হাজার ৪০৯ টাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর এক লাখ ৫০ হাজার ৫২৬ টাকার হিসাবে গরমিল পাওয়া যায়। এ ছাড়া এতিমখানায় সহায়তা দেওয়া অর্থের মধ্যে হিসাব বই নং-৯২৩-এ ৮১ হাজার ৯০০ টাকা, বই নং-৯২৪-এ ১২ হাজার ৫০০ টাকা, বই নং-৯২৫-এ ৩৮ হাজার টাকা,</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৯ বস্তা টাকা, চলছে গণনা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/30/1732942302-159be76d00b44e1345cdf9508349497f.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৯ বস্তা টাকা, চলছে গণনা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/30/1452236" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">বই নং-৯২৭-এ ২৩ হাজার টাকা, বই নং-৯২৯-এ এক লাখ ২২ হাজার ২০০ টাকা, বই নং-৯৩০-এ এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা, বই নং-৯৩৪-এ পাঁচ হাজার টাকা, বই নং-৯৩৩-এ চার হাজার ২০০ টাকা, বই নং-৯৪২-এ এক লাখ ৮০ হাজার ৭০০ টাকা, বই নং-৯৪৩-এ এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা, বই নং-৯৪৪-এ এক লাখ এক হাজার টাকা, বই নং-৯৪৫-এ ৬৪ হাজার টাকা, বই নং-৯৪৮-এ দুই লাখ ২৬ হাজার ৯৯০ টাকা, বই নং-৯৪৯-এ ৩১ হাজার ৪০০ টাকা জমা দেওয়া হয়নি। এভাবে এই চক্রটি ৫৮ লাখ চার হাজার ২০৯ টাকা আত্মসাৎ করে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>প্রকল্পের খরচে গরমিল</strong></p> <p style="text-align:justify">আব্দুল্লাহ আল মামুনকে তত্ত্বাবধায়ক পদে নিয়োগ দেওয়ার পর কমিটি সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে ১১টি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই ১১টি প্রকল্প করতে কমিটি খরচ দেখিয়েছে ৪০ লাখ দুই হাজার ১৫৫ টাকা। তবে ১১টি প্রকল্পের জন্য কমিটি বাজেট দিয়েছিল ৬২ লাখ ২১ হাজার ৬৬৫ টাকা, কিন্তু বাজেট ও খরচের হিসাব বিবরণীতে কমিটি সব প্রকল্পের বাজেট দেখালেও একটি প্রকল্পের কোনো বাজেট দেখায়নি।</p> <p style="text-align:justify">সেটি হলো বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ইট, বালু, সিমেন্ট, রড, কাঠসহ অন্যান্য মালপত্র ক্রয় প্রকল্পের বাজেট। হিসাব বিবরণীতে সরাসরি এই প্রকল্পের খরচ হিসেবে ১২ লাখ চার হাজার ৮৬২ টাকা দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া সবগুলো প্রকল্পের মধ্যে শুধু অফিস ভবনের প্রধান গেট তৈরি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রকল্পে যে বাজেট দেখানো হয়েছিল সে একই খরচ দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া বাকি সব প্রকল্পে বাজেটের কম খরচ দেখানো হয়েছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বেড়েছে খুন-ডাকাতি-অপহরণ, তবে চুরি-ধর্ষণ-নারী নির্যাতন কমেছে" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/30/1732941458-c577cfcb5363ae5edc9009e638570524.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বেড়েছে খুন-ডাকাতি-অপহরণ, তবে চুরি-ধর্ষণ-নারী নির্যাতন কমেছে</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/30/1452232" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">দুটি প্রকল্পের হিসাব বিবরণীতে দেখা যায়, মালপত্র ক্রয়ের যে খরচ দেখানো হয়েছে তার থেকে ছয় গুণ বেশি মিস্ত্রির খরচ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে বালক হোস্টেলের প্রাচীর ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে নির্মাণ এবং গেস্টরুম তৈরি প্রকল্পের মালপত্র ক্রয়ের খরচ দেখানো হয়েছে মাত্র ৮৪ হাজার ১১ টাকা। সেখানে মিস্ত্রি খরচ দেখানো হয়েছে চার লাখ ১০ হাজার ৩০০ টাকা। একইভাবে অফিস ভবন, সামনের রাস্তা মেরামত সংস্কার কাজ প্রকল্পের মালপত্র ক্রয়ের খরচ দেখানো হয়েছে মাত্র ১৯ হাজার ৭৪ টাকা। সেখানে মিস্ত্রি খরচ দেখানো হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ৩০০ টাকা।</p> <p style="text-align:justify"><strong>শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন</strong></p> <p style="text-align:justify">কমিটির এসব প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এতিমখানার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত শুরু করে তত্ত্বাবধায়ক কমিটি। কমিটির তিন সদস্যের নির্দেশে আব্দুল্লাহ আল মামুন এতিমখানার ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর লালবাগ থানায় মামলা করেন। এ ছাড়া মামলার আগে ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর সকাল ১১টায় ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রেপ্তার করানো হয়।</p> <p style="text-align:justify">নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহর চতুর্থ বংশধর ও এতিমখানার বর্তমান সভাপতি খাজা আলী মাদানী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক কমিটি ষড়যন্ত্র করে এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এর ফলে স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সাবেক কমিটির তিন সদস্যসহ তাদের স্বজনদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। আশা করি, আদালত থেকে আমরা ন্যায়বিচার পাব।’</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। আর ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রকনুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।</p>