<p>রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণা, স্মারক প্রদান এবং আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। </p> <p>মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শিক্ষক সুখরঞ্জন সমাদ্দারের স্ত্রী চম্পা সমাদ্দারকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব।</p> <p>এদিন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন কমিটির সভাপতি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শিক্ষক সুখরঞ্জন সমাদ্দারের স্ত্রী চম্পা সমাদ্দার স্মৃতিচারণা করেন। এতে আলোচক ছিলেন লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী ও রাবি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর এম সাদেকুল ইসলাম। </p> <p>অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর সালেহ হাসান নকীব ও বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান ও কোষাধ্যক্ষ মো. মতিয়ার রহমান। </p> <p>অনুষ্ঠানে আলোচক ও অতিথিবৃন্দ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে জাতির অত্যন্ত মেধাবী সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা অত্যন্ত বেদানাদায়ক ঘটনা। স্বাধীন একটি দেশের জন্য এই বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা হতে পারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বুদ্ধিজীবীদের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের ভূমিকা ছিল সাহসী। পরবর্তী সময়ে এই হীন হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধান হয়নি। ফলে আজও অনেক কিছুতে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। এই অস্পষ্টতা দূর করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঠিক রূপায়ণ প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ কোনো দলবিশেষের নয়, বরং সমাজের সব স্তরের জনমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তব রূপায়ণের প্রয়াস।</p> <p>প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড জাতির জন্য ছিল অপূরণীয় ক্ষতি। কিন্তু নির্মম এই হত্যাকাণ্ডসহ পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলির যে বয়ান এতকাল আমরা পেয়েছি তা সর্বাংশে সত্যনিষ্ঠ ছিল না। ইতিহাসের সঠিক উপস্থাপনের জন্যই একান্ত প্রয়োজন এসব ঘটনার সুষ্ঠু অনুসন্ধানের মাধ্যমে এর রহস্য উদ্ঘাটন করা।’<br /> তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের যে ইতিহাস পেয়েছি তা খণ্ডিত ও সুবিধাভোগীদের জন্য লেখা। এসব ইতিহাসে আমরা জনমানুষের প্রত্যাশা ও ভূমিকার সঠিক উপস্থাপন পাই না। আমাদের ইতিহাসের এই খণ্ডিত অবস্থা থেকে বেরিয়ে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস বিনির্মাণ জরুরি যাতে করে আগামী প্রজন্ম তাদের পূর্ব প্রজন্মের ঘটনাবলির সঠিক চিত্র পায়। এ জন্য প্রয়োজন সুযোগ-সুবিধার অন্বেষা থেকে বেরিয়ে সবার অংশীদারির মাধ্যমে সত্যনিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠা।’</p> <p>আইন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম সন্ধি ও রাউফু ইসলাম ইতু অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এর আগে সকাল ৮টায় উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।</p> <p>এ সময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান, কোষাধ্যক্ষ মো. মতিয়ার রহমান, সিন্ডিকেট সদস্য, অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতি, প্রক্টর প্রফেসর মো. মাহবুবর রহমান, ছাত্র-উপদেষ্টা ড. মো. আমিরুল ইসলাম, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদারসহ বিশিষ্ট শিক্ষক ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>এই কর্মসূচিতে আরো ছিল বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত, সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা ও সন্ধ্যা ৬টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে নাটক এবং  জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি স্মারক, গ্রাফিতি ও পোস্টার প্রদর্শনী।</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাড়াও ইনস্টিটিউট, বিভাগ, আবাসিক হল ও অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে।</p>