ঠাকুরবাড়ির নাম শুনলেই আমাদের মাথায় প্রথমেই আসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। তবে এর প্রতিষ্ঠাতা ঠাকুর পরিবারের আরেক ঠাকুর—নীলমণি ঠাকুর। ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির দেওয়ান ও উড়িষ্যার কালেক্টরের সেরেস্তাদার হিসেবে কাজ করতেন নীলমণি ঠাকুর। কর্মজীবনে বিপুল ধনসম্পদ অর্জনের পর পারিবারিক বিরোধের কারণে তিনি ভাইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।
আরো পড়ুন
পাঁচ বছরে নিহত ১৫৭ বাংলাদেশি, টানাপড়েনে শুরু সীমান্ত সম্মেলন
বিবাদের ফলে তিনি কলকাতার মেছুয়াবাজারের জোড়াসাঁকো এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। এখানেই তিনি এক বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ করেন, যা আজ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি নামে পরিচিত।
ঠাকুরবাড়ির গুরুত্ব শুধু রবীন্দ্রনাথের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বহু প্রজন্ম ধরে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজসংস্কার ও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে ঠাকুর পরিবার। তাঁদের হাত ধরেই প্রচলিত হয়েছিল বিভিন্ন উৎসবের নতুন নতুন রূপ।
আরো পড়ুন
অপারেশন ডেভিল হান্ট : পটিয়ায় যুবলীগ নেতা সজিব গ্রেপ্তার
তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল দুর্গাপূজা। ১৭৮৪ সালে নীলমণি ঠাকুর প্রথমবারের মতো জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন।
একসময় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির নিচ দিয়ে একটি গোপন সুড়ঙ্গপথ ছিল, যা গঙ্গার দিকে চলে গিয়েছিল। এটি ব্যবহারের উদ্দেশ্য পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, তবে বলা হয় যে দ্বারকানাথ ঠাকুরের ব্যাবসায়িক লেনদেন এবং বিপদকালীন সময়ে পালানোর জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল।
ব্রিটিশ শাসনের সময় এই সুড়ঙ্গপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৮৮০ এর দশকে কলকাতায় যখন প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয়েছিল তখন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতেও জ্বলেছিল।
আরো পড়ুন
যেভাবে স্থানীয় নির্বাচন চায় সংস্কার কমিশন
৭ মে ১৮৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের বহু সময় এখানে কাটে। এখানেই তিনি তাঁর প্রথম কবিতা, গান ও নাটক রচনা করেন।
ঠাকুরবাড়ির অন্য সদস্যরাও শুধু সাহিত্য বা শিল্প-সংগীতেই নয়, সমাজসংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথের বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং দাদু দ্বারকানাথ ঠাকুর সমাজের নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথও এই আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যান এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত।
বর্তমানে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ঠাকুর পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যবহৃত সামগ্রী, চিত্রকর্ম, পাণ্ডুলিপি এবং ফটোগ্রাফ সংরক্ষিত রয়েছে। এটি এখন একটি সংগ্রহশালা হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এটি শুধু পর্যটনকেন্দ্র নয়, বরং একটি শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্র হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে হলে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি অবশ্যই একবার ঘুরে আসা উচিত।