<p>জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (ইউনিডিও) উদ্যোগে দেশব্যাপী প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত দূষণ সম্পর্কে ৬০টি পরিছন্নতা অভিযান এবং গণসচেতনতায় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। </p> <p>বুধবার (১১ ডিসেম্বর) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় পরিছন্নতা অভিযানের দ্বিতীয় উদ্যোগ অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠান বাস্তবায়িত হয় ইউনিডিও টেকসই প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবস্থাপনা এবং বাংলাদেশে নৌ-বর্জ্য প্রতিরোধক কর্মসূচির আওতায়। এই চলমান কর্মসূচি যৌথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর এবং ইউনিডিও- এর যৌথ উদ্যোগে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে রয়াল নরওয়ে দূতাবাস। </p> <p>এই কর্মসূচি প্রধান লক্ষ হলো একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার সংকোচন এবং তার পরিবর্তে পুনঃর্ব্যবহারযোগ্য এবং পুনঃপ্রক্রিয়াযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারের ব্যাপারে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই কর্ম উদ্যোগ পরিচালিত হচ্ছে গণস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে এবং প্লাস্টিকের টেকসই বিকল্প ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা।</p> <p>অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মো. রহমত উল্লাহ, ইউনিডো'র ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সত্য রঞ্জন ভট্টাচার্য, ইউনিডোর ন্যাশনাল এক্সপার্ট এম. এম. আরাফাত ও অন্যান্যরা।</p> <p>পরিবেশ অধিদপ্তর কমিল্লার সহকারী পরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা, উপস্থিত অতিথিরা এবং ২০টি পরিবেশ ও গণস্বাস্থ্য বিষয়ক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি জানান, প্লাস্টিক দূষণ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ইতিমধ্যে কুমিল্লায় ২০টি মামলা করা হয়েছে। এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে পরিবেশগত পরিছন্নতার ব্যাপারে মানুষ ক্রমেই সচেতন হয়ে উঠছে বলেও জানান তিনি।</p> <p>চৌদ্দগ্রামের নির্বাহী কর্মকর্তা রহমত উল্লাহ বলেন, প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। পলিথিন ও প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি সমাজে দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতাও বেড়েছে। এই অপচনশীল বর্জ্যের কারণে আমাদের ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, যার কারণে বিভিন্ন এলাকায় জলবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। </p> <p>ইউনিডো’র ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সত্য রঞ্জন ভট্টাচার্য বর্জ্য স্তুপের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ৬০ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। এ থেকে সৃষ্টি হচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিকস, যা নৌ জীবনচক্রে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। </p> <p>ইউনিডো’র তিনটি মৌলিক অঙ্গীকার তুলে ধরে তিনি বলেন. তিনটি ‘আর’ (অর্থাৎ রিডিউজ, রিইউজ এবং রিসাইকেল) নিয়ে আমরা কাজটি করছি এবং পরবর্তী উদ্যোগে আমরা এই লক্ষে প্লাস্টিক সামগ্রীর উৎপাদনকারীদের এই ধরনের কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট করবো।<br />  <br /> ইউনিডো’র ন্যাশনাল এক্সপার্ট এস.এম. আরাফাত তার ভাষণে প্লাস্টিক বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ বা রিসাইক্লিং’এর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।</p> <p>কুমিল্লার পরিবেশ পরিদর্শক জোবায়ের হোসেন বলেন, বাংলাদেশের নদী-নালা ও জলাধারে দৈনিক ৮ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হয় যা পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ। </p> <p>অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ. কে. মীর হোসেন, চৌদ্দগ্রামের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকিয়া সরওয়ার লিমা এবং বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্যাডেট ফোরামের চেয়ারম্যান শাহ মুজিবুল হক প্রমুখ। তারা পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে, দেশের তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। </p> <p>২০টি পরিবেশ সংগঠনের প্রায় ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী এই পরিছন্নতা কর্মসূচি ও আলোচনাসভায় অংশ নেন। যাদের মধ্যে ছিল রেড ক্রিসেন্ট, সিভিল ডিফেন্স অ্যান্ড ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, রোড সেফটি মুভমেন্ট, চৌদ্দগ্রাম হেলপ্লাইন-সহ বেশকিছু স্থানীয় এনজিও এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। </p> <p>অতিথিরা এবং এই পরিবেশ কর্মীরা অভিযানে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে ৩৫০ কেজি বর্জ্য অপসারণ করেন। উপজেলা পরিষদ এলাকায় বিভিন্ন সচেতনতা বাণী সমৃদ্ধ ফেস্টুন, ব্যানার স্থাপন করেন।</p>