<div>কক্সবাজারে গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানিং (জেআরপি) প্রণয়ন এবং রোহিঙ্গা ত্রাণ কর্মসূচি সমন্বয় প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের বর্তমান ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করেছে স্থানীয় এনজিও এবং সুশীল সমাজ সংগঠনগুলো। গতকাল কক্সবাজারের একটি হোটেলে ৪২টি স্থানীয়/দেশীয় এনজিও এবং সুশীল সমাজ সংগঠনের নেটওয়ার্ক কক্সবাজার এনজিও এন্ড সিএসও ফোরাম (সিসিএনএফ) আয়োজিত রোহিঙ্গা রেসপন্স এন্ড গ্রান্ডবারগেন কমিটমেন্ট: এইড ট্রান্সপারেন্সি এন্ড সলিডারিটি এপ্রোচ শীর্ষক আলোচনায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ত্রাণ কর্মসূচির সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং গ্রান্ডবারগেন প্রতিশ্রুতির আলোকে জাতিসংঘের সকল প্রক্রিয়ায় স্থানীয়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। অক্সফামের আর্থিক সহায়তায় এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।</div> <div> </div> <div><span style="font-size:16px">এনজিও এবং সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দ বলেন, জাতিসংঘ অঙ্গ সংস্থাগুলো এই পর্যন্ত যে ৬৮২ মিলিয়ন ডলার তহবিল পেয়েছে, এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিও যে অর্থ সাহায্য পেয়েছে- সেগুলোর প্রকাশ্য স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতা এবং সুসমন্বয়ের অভাব আছে। অর্থ সাহায্য কমে যাওয়ার সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাঁরা ২০১৮ সালের জেআরপির পূর্ণ পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যতে সকল অর্থ সহায়তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি করেন। </span></div> <div> </div> <div><span style="font-size:16px">সিসিএনএফ-কো চেয়ার আবু মুর্শেদ চৌধুরী এবং রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় আনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম। আরো বক্তব্য রাখেন ইন্টার সেকটোরাল কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসজি)-এর ঊর্ধ্বতন পরামর্শক আনিকা সুডল্যান্ড এবং পরামর্শক বারস মারগো, অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি এবং গ্লোবাল লোকালাইজেশন ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য অনিতা কাট্টাখুজি। কোস্ট ট্রাস্টের মো. মজিবুল হক মনির আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ হিসেবে রোহিঙ্গা ত্রাণ কর্মসূচিতে স্থানীয়কণের ওপর পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন।</span></div> <div> </div> <div><span style="font-size:16px">আবু মুর্শেদ চৌধুরী ও রেজাউল করিম চৌধুরীর পৃথক উপস্থাপনায় বলা হয়, প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য যথাসম্ভব মানব মর্যাদা নিশ্চিত করতে পরিচালিত ত্রাণ কর্মসূচি সমন্বয়ে যোগাযোগের জন্য বাংলা ভাষার ব্যবহার, স্থানীয় এনজিও এবং সুশীল সমাজ সংগঠনগুলোর অধিকতর অংশগ্রহণ, সমন্বয় এবং পরিকল্পনার প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তারা এই ত্রাণ কর্মসূচিতে ১২৯৬ জন বিদেশির কাজ করা এবং দৈনিক প্রায় ৫৫০টি গাড়ির ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। </span></div> <div> </div> <div><span style="font-size:16px">মূল বক্তব্য উপস্থাপনা কালে মুজিবুল হক মনির বলেন, জেআরপি ২০১৮ বাবদে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তহবিল অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের মাথা পিছু প্রায় ৫৭ হাজার টাকা এসেছে। প্রশ্ন হলো, এর কত শতাংশ মাথাপিছু ব্যয় হয়েছে?</span></div> <div> </div> <div><span style="font-size:16px">শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম তার বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গাদের কী প্রয়োজন তার কল্পিত তালিকা বানালে হবে না। একেবারে তৃণমূল থেকে প্রকৃত চাহিদা তুলে আনার জন্য বটম-আপএপ্রোচে আমাদের কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম থেকেই সরকারের নীতি ছিল ‘স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসন’। যেহেতু কোনো রোহিঙ্গা পরিবার স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি হয়নি, বাংলাদেশ সরকার তাদের ওপর কোনো বলপ্রয়োগ করেনি।</span></div> <div> </div> <div><span style="font-size:16px">আবু মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, জেআরপি ২০১৮-এর একটি পূর্ণ এবং গণ পর্যালোচনা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে স্থানীয়করণের প্রতিশ্রুতিগুলো খুব কমই পূরণ করা হয়েছে, জেআরপি ২০১৯-এ  বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। ত্রাণ কর্মসূচির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে সরকারের কাছে এবং এই ত্রাণ কর্মসূচির পরিকল্পনা নিতে হবে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজন যাচাইয়ের ভিত্তিতে একটি অংশগ্রহণ মূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।</span></div> <div> </div> <div><span style="font-size:16px">ইন্টার-সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)-র ঊর্ধ্বতন পরামর্শক আনিকা সুডল্যান্ড বলেন, ২০১৯ সালের জেআরপি প্রণয়নের জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে সকল পক্ষকে নিয়ে কাজ করতে চাই, যাতে সবাই জানতে পারে সবাই কী করছে। তিনি আরো বলেন, জেআরপি ২০১৮-র প্রস্তাবিত তহবিলের এখন পর্যন্ত ৭২% তহবিল সংগৃহীত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বোঝা মনে না করে এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে।</span></div> <div> </div> <div><span style="font-size:16px">আনিতা কাট্টা কুজি তার বক্তব্যে বলেন, গ্রান্ডবারগেইন প্রতিশ্রুতির মূল বিষয়গুলো বোঝার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এখনো সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্থানীয় সংগঠনগুলো যতটা বোঝেন, তারা ততটা বোঝেন না। সিসিএনএফ থেকে এ বিষয়ে যে ১৮ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে, আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর উচিত এক সঙ্গে বসে সেগুলো পর্যালোচনা করা এবং এর আলোকে স্থানীয়করণের একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা উচিত।</span></div> <div> </div> <div><span style="font-size:16px">রেজাউল করিম চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই স্থানীয় করন নিয়ে কথা বলে আসছি। কিছু অগ্রগতি ইতিমধ্যে হয়েছে। আমরা আশা করি, তৃণমূল থেকে আমরা যেসব বক্তব্য তুলে ধরেছি তা আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ বিবেচনায় নেবেন।</span></div> <div> </div> <div><span style="font-size:16px">ইউএনএইচসিআর-এর সিনিয়র অপারেশন ম্যানেজার হিনাকো টোকি বলেন, স্থানীয় করণের জন্য স্থানীয় এনজিওদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের পাশাপাশি সংস্থার ক্রয়ের সিংহভাগ স্থানীয়ভাবে করতে হবে। তাহলে স্থানীয় অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।</span></div>