<p>লাল শাড়ি, গয়না, নাকের নোলক, কপালে টিপ দিয়ে সাজিয়েছিলেন মেয়েকে। মেয়ের সুন্দর একটা সংসার হবে এমন আশায় মেয়েকে পাঠিয়েছিলেন শ্বশুড় বাড়ি। স্বামীর ঘরে একদিন থাকলও তার মেয়ে। কিন্তু পরদিনই চোখের জলে বুক ভাসল মায়ের। যেই সাজে সুইটি খাতুন পুর্ণিমা শ্বশুড়বাড়ি গিয়েছিল সেই সাজেই  ফিরে এলো নিজের বাড়িতে। তবে সকল বন্ধন ছিন্ন করে লাশ হয়ে ফিরল তার মায়ের বুকে। </p> <p>গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সুইটি শ্বশুড়বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফেরার পথে কনেপক্ষকে বহনকারী দুটি নৌকা নগরীর শ্রীরামপুরের বিপরীতে পদ্মায় ডুবে যায়। চারদিন পর আজ সোমবার সকালে সুইটির লাশ ভেসে ওঠে। এর আগে আরো সাতজন নিখোঁজ ছিল। তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের কেউ জীবিত নেই। সুইটির লাশ উদ্ধারের মাধ্যমে উদ্ধারকার্য সমাপ্ত হল।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহীর সাহাপুর এলাকায় শাড়ি-গয়না পরা নববধূ সুইটির লাশ ভেসে ওঠে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশটি উদ্ধার করে শ্রীরামপুর এলাকায় নদীরপাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন বর আসাদুজ্জামান রুমনসহ (২৬) আত্মীয়-স্বজন। সুইটির উদ্ধারের খবর পেয়ে অসংখ্য মানুষ পদ্মাপাড়ে ভিড় জমান। সুইটির লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্বামী রুমন।</p> <p>সুইটির লাশ উদ্ধারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা। আদরের মেয়েকে হারিয়ে যেন নিঃস্ব হয়ে গেছেন তিনি। মেয়ের লাশ বুকে জড়িয়ে ধরে থেমে থেমে বিলাপ করছিলেন তিনি। গাল বেয়ে অঝোরে চোখের জল পড়ছিল তার। তার কান্নায় যেন ভারি হয়ে উঠছিল আকাশ। আত্মীয় স্বজনেরা তাকে সান্তনা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছিলেন। </p> <p>সুইটি রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামের শাহিন আলীর মেয়ে। দেড় মাস আগে পদ্মার ওপারে একই উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামের ইনসার আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান রুমনের (২৬) সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু তখন অনুষ্ঠান হয়নি। তাই গত বৃহস্পতিবার কনের বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেদিন বরপক্ষ কনেকে নিয়ে যায়। শুক্রবার রুমনের বাড়িতে বউভাতের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময় রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর এলাকার বিপরীতে পদ্মা নদীতে দুটি নৌকা ডুবে যায়।</p> <p>এতে বরসহ অন্যরা প্রাণে বাঁচলেও কনেসহ আটজন তলিয়ে যান। তারা হলেন, সুইটির চাচা শামীম হোসেন (৩৫), তার স্ত্রী মনি খাতুন (৩০), তাদের মেয়ে রশ্নি খাতুন (৭), কনের দুলাভাই রতন আলী (২৬), খালাতো ভাই এখলাস হোসেন (২৮), ফুফাতো বোন রুবাইয়া খাতুন স্বর্ণা (১৩) এবং খালা আখি খাতুন (৩০)।</p> <p>সুইটির লাশ উদ্ধারের পর জেলা প্রশাসক হামিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি, নৌ-পুলিশ, জেলা ও নগর পুলিশ এবং বিআইডব্লিউটিএ টানা ৬২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে উদ্ধার কাজ সমাপ্ত করে। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।</p> <p>এদিকে, নৌকাডুবির ঘটনায় গঠিত কমিটি তাদের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, মাছ ধরার ছোট নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলার কারণে নৌকাটি ডুবে যায়। মাছ ধরার নৌকাগুলোতে বড়জোর চার-পাঁচজন বসতে পারে। সেখানে দুটি নৌকাতেই ২০ থেকে ২২ জনকে তোলা হয়েছিল। নৌকা দুটিতে মোট ৪২ জন যাত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে ৩৩ জন প্রাণে বেঁচেছেন। কমিটির আহ্বান ছিলেন জেলা প্রশাসক হামিদুল হক।</p>