<p>‘করোনা আতঙ্কে এ বছর বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ পালিত হচ্ছে না। এ কারণে ওই দিবসকে ঘিরে চাষকৃত বিভিন্ন জাতেন প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকার ফুল বাগানেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফুল বিক্রি না হলে পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে হবে।’ এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন রংপুর নগরীর পান্ডারদিঘি এলাকার হতাশাগ্রস্ত ফুলচাষি আব্দুল কাদের। তাঁর মতো রংপুরের শতাধিক ফুলচাষি এ বছর পহেলা বৈশাখ পালন না হওয়ার খবরে হতাশায় দিন গুনছেন।</p> <p>বাংলাদেশে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন বর্ষবরণ উৎসব পালিত হয়। এ দিনে সব বয়সের মানুষ আনন্দ-আড্ডায় মেতে থাকেন প্রাণের এই উৎসবে। এ দিনে ফুল ছাড়া যেন চলেই না। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরাও কোটি কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেন। বেশি দামে বিক্রি করতে তারা দিবসটির জন্য বিশেষ কৌশলও অবলম্বন করেন। কিন্তু এ বছর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ পালন না হওয়ায় ফুলচাষিসহ ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুরে ছোটবড় মিলে শতাধিক ফুলবাগান রয়েছে। এর মধ্যে নগরসহ আশপাশের এলাকায় গোলাপের বাগান আছে ২০টির মতো। বাকিগুলোতে রয়েছে বিশেষ করে গ্লাডিওলাস, গাঁদা ও রজনীগন্ধা। সরেজমিনে রংপুর নগরের বীরভদ্র বালাটারী এলাকায় একটি বাগানে গিয়ে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখকে ঘিরে বিশেষ কৌশলে ফুল সংরক্ষণ করা হয়েছে। দিবসটি আসার আগে যেন ফুল ফুটে ঝরে না যায় সেজন্য গোলাপের ফুটন্ত কুঁড়িতে বিশেষ ক্যাপ পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফুল বাগানে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে সংরক্ষণ করা হয়েছে গোলাপ। কিন্তু দু’একদিনের মধ্যে উত্তোলন না করলে এসব ফুল ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাওয়া আশঙ্কা রয়েছে। </p> <p>বাগানে কর্মরত হুমায়ুন কবির জানান, করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিকরা কাজে আসছেন না। তাছাড়া পহেলা বৈশাখের উৎসব না হওয়ায় বাগান মালিক ক্ষোভ আর হতাশায় ফুলের পরিচর্যাও বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে মালিককে বিশাল অঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হবে।</p> <p>নগরের পান্ডারদিঘি শিরিন পার্ক এলাকায় একটি বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ফুটন্ত গ্লাডিওলাস ও গাঁদা ফুলে যেন পরিবেশটাই বদলে গেছে। বাগান মালিক আব্দুর কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যবসা করলেতো বছরের বিশেষ দিনে বেশি লাভের আশা করতেই হবে। তাই প্রতি বছরের মত পহেলা বৈশাখকে ঘিরেই বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যয় করে এসব ফুলের চাষ করা হয়েছে।’ এই ফুল বিক্রি না হলে লাভতো দুরের কথা, পূঁজি হারিয়ে পথে বসতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারনে শুধু পহেলা বৈশাখের উৎসব বন্ধই নয়-একই কারণে মানুষ ঘরবন্দি থাকাসহ দোকানপাট বন্ধ থাকায় চাষকৃত এই ফুল বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ফুলচাষিদের ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় থাকবে না বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।</p> <p>এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফুল বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কবিতা আনজু-মান-আরা কালের কণ্ঠকে জানান, পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণসহ ফুলকেন্দ্রিক দিবসগুলোকে আরও সমৃদ্ধ করতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে বারি। দিবসগুলোতে ফুলের সমারোহ ঘটানো যায় এমন নতুন নতুন ফুলের জাত উদ্ভাবন করে তা সম্প্রসারণে কাজ করছে তারা। এছাড়া ফুলচাষে নারীদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এক বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে দেড় লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।</p> <p>ড. কবিতা আরও বলেন, ‘মানুষ সৌন্দর্য্য ও বৈচিত্রের অনুরাগী। আগেকার দিনে শুধুমাত্র বাড়ির শোভাবর্ধনে দু’চারটি ফুলের চারা লাগানো হত। কিন্তু এখন ফুল ছাড়া বিষেশ বিশেষ দিনগুলোর গুরুত্বই থাকে না। চাহিদাকে অনুসরণ করে এখন বানিজ্যিকভাবে ব্যাপক ফুলের চাষ হচ্ছে। যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।’ </p> <p>ফুল বেশিদিন সংরক্ষণের সুযোগ নেই। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ফুলচাষিরা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে অন্যান্য সময়ের মত ফুল বিক্রি না হওয়াসহ উৎসব বন্ধে ফুলচাষিরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলেও জানান এই ফুল বিশেষজ্ঞ।</p>