ঢাকা, সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫
৩ চৈত্র ১৪৩১, ১৬ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫
৩ চৈত্র ১৪৩১, ১৬ রমজান ১৪৪৬

জুড়ীতে হাজার বছর আগের বিশ্ববিদ্যালয়?

  • অনুসন্ধানে যাচ্ছে প্রত্নতত্ত্বের দল
মাহফুজ শাকিল, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার)
মাহফুজ শাকিল, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার)
শেয়ার
জুড়ীতে হাজার বছর আগের বিশ্ববিদ্যালয়?

দশম শতকের প্রথম ভাগে শ্রীহট্টের মৌলভীবাজারের জুড়ীতে (বর্তমানে উপজেলা) ‘চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে বলে অনেকে মনে করেন। সেখানে চতুর্বেদ, চান্দ্র ব্যাকরণ, হিন্দু শাস্ত্রবিদ্যা, হেতুবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতিষবিদ্যা, শল্যবিদ্যা, ধাতুবিদ্যা, শব্দবিদ্যাসহ নানা বিষয় পড়ানো হতো। সেই ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের’ পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে আগামী সপ্তাহে জুড়ীতে আসছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি দল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে এটি হবে পৃথিবীবিখ্যাত অক্সফোর্ড বা ক্যামব্রিজ থেকেও প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়।

জুড়ীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাকীর্তি রয়েছে মর্মে কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই লেখালেখি করছেন। এই বিষয়ে সরেজমিন জরিপ ও পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রয়োজন উল্লেখ করে সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালককে ১৫ জুলাই চিঠি দিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আমিরুজ্জামান।

জনশ্রুতি রয়েছে, জুড়ীতে এক বৌদ্ধ রাজার বসবাস ছিল। সেই চন্দ্র বংশীয় বৌদ্ধ রাজা শ্রীচন্দ্র আনুমানিক ৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে জুড়ীর সাগরনাল গ্রামে ‘চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

শ্রীচন্দ্র এ জন্য ৪০০ পাটক জমি (এক পাটক=৫০ একর বা ১৫০ বিঘা) বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ করেছিলেন। ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদারের ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ গ্রন্থ মতে শ্রীচন্দ্রের শাসনামল ছিল ৯০৫-৯৫৫ সাল পর্যন্ত। তাঁর শাসন এলাকার মধ্যে ছিল মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুরের পদ্মা তীরবর্তী এলাকা, শ্রীহট্ট অঞ্চল ও কুমিল্লা। যার রাজধানী ছিল বিক্রমপুর।
মৌলভীবাজার জেলায় ১৯৬১ সালে একটি তাম্রশাসন (তামার পাতে লিখিত দলিল, রাজকীয় নির্দেশ খোদাই করে লেখা থাকত) আবিষ্কৃত হয়। যেটির তথ্য মতে, আনুমানিক ৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন রাজা শ্রীচন্দ্র।

প্রত্নতত্ত্ববিদ কমলাকান্ত গুপ্ত চৌধুরী তাঁর ‘Copper plates of Sylhet’ গ্রন্থে তাম্রশাসন সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে এতদঞ্চলে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। লেখক ও ব্যাংকার অমিতাভ পাল চৌধুরী এক প্রবন্ধে বিভিন্ন লেখককে উদ্ধৃত করে বলেছেন, শ্রীচন্দ্রের সাম্রাজ্য অনুসারে এতদঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আবিষ্কৃত তাম্রশাসন অনুযায়ী খ্রিস্টীয় ১০ শতকের প্রথম ভাগে উত্তরে কুশিয়ারা নদী, দক্ষিণ ও পশ্চিমে মনু নদী এবং পূর্বে ইন্দেশরের পাহাড়ি অঞ্চল বা পাথরিয়া অঞ্চল এই সীমানার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল।

জুড়ীর সাগরনাল ইউনিয়নের দীঘিরপার এলাকায় এটি ছিল বলে জোর ইঙ্গিত মেলে। কারণ এখানে কবর খুঁড়তে গেলে প্রাচীনকালে তৈরি বড় বড় ইটের টুকরা ও মাটির বাসন পাওয়া যায়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এই চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও কোনো শাসকের রোষানলে পড়ে না অন্য কোনোভাবে ধ্বংস হয়েছিল তা জানা যায়নি। ভারতের বিহারের পাটনা জেলায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক মো. মিফতাহ্ আহমেদ রিটন জানান, চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়টি ৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয় বলে জনশ্রুতিতে জানা যায়। চন্দ্রবংশের রাজা শ্রীচন্দ্র এটি প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু, এটি আমাদের গ্রামে হওয়ায় এখানে বিভিন্ন সময় মাটি খুঁড়াখুঁড়ি করলে মাটির নিচ থেকে অতীতে ব্যবহার্য তৈজসপত্র বাসন, হাড়ি ও ইট পাওয়া যায়। কালের বিবর্তনে এই এলাকার দীঘিটি ভরাট হয়ে গেছে। আমরা সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এটি নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে বেরিয়ে আসতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ এবং এলাকাটি একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে রূপান্তরিত হবে বলে মনে করি।

সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান রবিবার দুপুরে মুঠোফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশ মতে আগামী সপ্তাহে একটি টিম নিয়ে সরেজমিন ওই এলাকায় মাঠ জরিপ করতে যাব। তদন্ত সাপেক্ষে বাস্তবে ওই স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পুরাকীর্তি আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দেওয়া হবে। সেখানে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে আগামী শুষ্ক মৌসুমে খনন কাজ চালিয়ে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান করা হবে।

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহল ইসলাম রবিবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, জুড়ীর সাগরনালে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব রয়েছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি। এটা নিয়ে পূর্ববর্তী সময়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। ওই এলাকার যে স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাকীর্তি রয়েছে সেখানে খনন কাজের মাধ্যমে যদি এর অস্থিত্ব পাওয়া যায় তাহলে শুধু জুড়ী নয় এই মৌলভীবাজার অঞ্চলের জন্য নতুন একটি ইতিহাস রচিত হবে। এটার অনুসন্ধান কাজে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সবধরণের সহযোগিতা করবে জুড়ী উপজেলা প্রশাসন।

জানতে চাইলে কথা হয় প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হান্নান মিয়ার সাথে। তিনি রবিবার দুপুরে মুঠোফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় অনেক কিংবদন্তী বিষয়ের খবর পাই। তেমনিভাবে জুড়ীতে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাকীর্তি রয়েছে বলে খবর পেয়েছি। আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি আমাকে জানানোর পর খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়েছি। আমি আমার আঞ্চলিক পরিচালককে বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি। প্রাথমিকভাবে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি টিম পাটাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, অনেক ঘটনা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেলেও বাস্তবে এর অস্থিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। হয়তো সেখানে থাকতে পারে সেটা আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে। সরেজমিন প্রতিবেদনে উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া গেলে আমরা পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যদি সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাকীর্তি পাওয়া যায় আর আমরা এটার ধার উন্মোচন করতে পারি তাহলে জাতীয় ঐতিহ্যের সন্ধানে বাংলাদেশের ইতিহাসে বড় একটি মাইলফলক নতুন করে যুক্ত হবে।

মন্তব্য

অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি, প্রবাসীর স্ত্রীকে জরিমানা

সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
শেয়ার
অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি, প্রবাসীর স্ত্রীকে জরিমানা

ফরিদপুর চরভদ্রাসনে অবৈধভাবে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির অপরাধের সঙ্গে জড়িত মনিরা বেগম নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রবিবার (১৬ মার্চ) দুপুর ৪টার দিকে উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নে কানাইরটেক গ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত ফারাবী। এসময় চরভদ্রাসন থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) শেখ ফরহাদ, ভূমি কার্যালয়ের সার্টিফিকেট পেশকার রাসেল মুন্সী উপস্থিত ছিলেন।

এ ঘটনায় ভেকু মেশিনের ব্যাটারি ও যন্ত্রপাতি জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্ত মনিরা বেগম উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের কানাইরটেক গ্রামের প্রবাসী মঞ্জু মৃধার স্ত্রী। 

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিশাত ফারাবী বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির অপরাধের সঙ্গে মনিরা বেগম নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কৃষি জমিতে যেন কেউ অবৈধভাবে মাটি কাটতে না পারে সেজন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মন্তব্য

ফেসবুকে মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটুক্তি, ছাত্রলীগ নেতা আটক

সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
শেয়ার
ফেসবুকে মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটুক্তি, ছাত্রলীগ নেতা আটক

নাটোরের সিংড়ায় ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগে সাকিবুল হাসান স্বচ্ছ নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার (১৬ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টার দিকে সিংড়া বাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। সাকিবুল হাসান স্বচ্ছ খাজুরা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ফেসবুকের একটি রাজনৈতিক পোস্টের কমেন্ট সেকশনে মন্তব্য করতে গিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে কটুক্তি করেছে ওই ছাত্রলীগ নেতা।

এমন অভিযোগ উঠলে পুলিশ তাকে আটক করে। এরপরে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা থানায় বিচার দাবি করেন এবং একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এ বিষয়ে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসমাউল হক জানান, মহানবীকে কটুক্তির ঘটনায় একজনকে আটক করেছি। এ বিষয়ে তদন্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

মন্তব্য

চট্টগ্রামে বাসায় ডেকে নিয়ে নারীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
শেয়ার
চট্টগ্রামে বাসায় ডেকে নিয়ে নারীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ২
সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. মনজুর আহমেদ মঞ্জু (৩৮) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধর্ষণে সহযোগিতার করা অভিযোগে মঞ্জুর বন্ধু মো. সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার (১৬ মার্চ) তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

তিনি বলেন, রবিবার দুপুর ৩টার দিকে ভুক্তভোগী নারীকে পতেঙ্গা থানার হাদীপাড়া শাওনের ভাড়াঘর নিচতলায় ডেকে নিয়ে যায় সাইফুল। রুমে নিয়ে মো. সাইফুল তার বন্ধু মো. মনজুর আহমদের সঙ্গে ভিকটিম নারীকে পরিচয় করিয়া দেয়। পরে সাইফুল ভিকটিমকে রুমে বসার জন্য বলে নিজে বাসার বাইরে চলে যায়। এই সুযোগে মো. মনজুর আহমেদ নারীকে ধর্ষণ করেন।

পরে এই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী পতেঙ্গা থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগ পাওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

মন্তব্য

ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতালে স্বজনদের ভাঙচুর

কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি
কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি
শেয়ার
ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতালে স্বজনদের ভাঙচুর
নিহত ইমরান হোসেন। ছবি : কালের কণ্ঠ

কুমিল্লা নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (১৬ মার্চ) রাতে কুমিল্লা নগরীর ট্রমা হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই নিহতের  স্বজনরা ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে দাবি তুলে হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর চালায়।

এদিকে হাসপাতাল ভাঙচুর চলাকালে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা পালিয়ে গেছে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।

পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

নিহত ইমরান হোসেন (২১) কুমিল্লা নগরীর ১৪নং ওয়ার্ড ২য় মুরাদপুর এলাকার দুবাই প্রবাসী হুমায়ুন মিয়ার ছেলে। 

নিহতের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, ইসমাইল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিল। পরে, কুমিল্লা নগরীর ট্রমা হাসপাতালে ডা. আতাউর রহমানের কাছে চিকিৎসা নিতে আসলে চিকিৎসক ইসমাইলকে সার্জারি করার পরামর্শ দেন।

পরে শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকাল ৮টায় সার্জারি করার উদ্দেশ্যে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। চার ঘণ্টার অপারেশনের সময়ের কথা জানালেও অপারেশন সম্পন্ন হয় সাত ঘণ্টায়। পরে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে রোগীকে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।

ঘটনার দিন রবিবার বিকালে রোগীর কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়ায় রোগীর স্বজনরা রোগী মারা গেছে দাবি করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার কথা বলে।

বিকাল পার হয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেনি। বরং রোগীকে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ আনায় রোগীর স্বজনদের দিয়ে।

নিহত ইসমাইলের চাচা জাকির হোসেন বলেন, আমার ভাতিজাকে তারা সামান্য অপারেশনের কথা বলেছিল। কিন্তু, তারা সাত ঘণ্টা ওটিতে রেখেছিল। পরে রোগীর সমস্যা হয়েছে এ কথা বলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার কথা বলে।

আমরা রাজি হই। কিন্তু লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার পর প্রায় ৩ দিন হয়ে গেলেও তারা আমাদের রোগীকে দেখতে দেয়নি। পরে নানা অজুহাতে আইসিউতে ঢুকে দেখি যে আমাদের রোগী মৃত। কিন্তু তারপরও তারা মৃত রোগীর চিকিৎসা করানোর জন্য পরীক্ষা ফি ও ওষুধ কিনিয়েছে আমাদেরকে দিয়ে। তারা আমাদেরকে ২৫ হাজার টাকার অপারেশনের কথা বলে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা নেয় ধাপে ধাপে। একজন রোগীর ৩ দিনে লাখ টাকার ওষুধ কিভাবে লাগে। তাদের গাফিলতির কারণে আমাদের রোগী মারা গেছে। আমরা এর বিচার চাই। এদিকে, রোগী মারা যাওয়ার খবর জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা হাসপাতাল ভাঙচুর চালায়।

রোগীর মা নাজমা বেগম বলেন, ট্রমা হাসপাতালের ডা. আতাউর রহমান শুক্রবার সকাল ৮টায় আমার ছেলের অপারেশন করায়। মারা গেছে রবিবার বিকাল ৫টা বাজে, কিন্তু সন্ধ্যা পার হয়ে গেলেও তারা জানায়নি। রাতে আমরা মারা যাওয়ার খবর পাই। তারা মারা যাওয়ার পরেও ওষুধ আনতে বলেছিল আমাদের। আমরা রোগী মারা গেছে দাবি করার পর তারা ওষুধ ফেরত পাঠায়। এটা রাত ৯টার ঘটনা। ডাক্তারের কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলতেও রাজী হয়নি। তারা আমার ছেলেকে অবহেলায় মেরে ফেলেছে। তারা কয়েক দফায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলে টাকা নিয়েছে। কিন্তু একবারও বলেনি আমার ছেলে মারা গেছে।

রাতে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ