ঢাকার দোহারের পদ্মা নদীতে রাত গভীর হওয়ার সঙ্গেই শুরু হয় বালু লুটের মহোৎসব। প্রায় ৪ থেকে ৫টি কাটার দিয়ে চলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কাজ। এতে বিপাকে মেঘুলা, নারিশা ও মুকসুদপুর এলাকার বেড়িবাঁধ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসব কাটার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে ভিটে বাড়ি হারিয়েছে পদ্মাপারের অন্তত দুইশত পরিবার।
ফলে এবারও আতঙ্কে রয়েছে পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা।
এ নিয়ে স্যোশাল মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। বিষয়টি আমলে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে একটি কাটার ভেঙ্গে দেয় প্রশাসন। এ সময় একজনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত ত্রিশ দিনের কারাদণ্ড দেয়।
বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা আরো জানান, ঢাকা জেলা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য চঞ্চল মোল্লা, মাসুদ মোল্লা, কাজী নূর বেপারী, সাবেক জেলা যুবদল নেতা মো. মোশারফ হোসেন ও মাহাবুব বেপারীসহ বেশ কয়েকজনের নেতৃত্বে চলছে এই বালু উত্তোলন। এছাড়া কুতুবপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের ম্যানেজ করেই চলছে এমন কর্মকাণ্ড।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দিনের বেলায় মেঘুলা পদ্মার তীরবর্তী ও বিলাসপুর কুলছড়ি ঘাটের পাশে এবং ফরিদপুরের একটি সীমানায় রাখা হয় বালু উত্তোলনের এসব কাটার।
যেগুলো রাত হলেই প্রবেশ করে দোহারের সীমানায়। রাত ১১টা ভোররাত পর্যন্ত উত্তোলন করা হয় বালু। এসব বালু বাল্কহেডে করে দোহারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছে প্রভাবশালী এই চক্র। চাহিদা বেশি হওয়ায় প্রভাবশালী মহলটি বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চঞ্চল মোল্লা জানান, আমাকে সমাজে হেয় করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে।
দোহার উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা যুবদলের নেতা মো. মোশারফ হোসেন জানান, তারা ঢাকায় থাকেন, এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন।
এ বিষয়ে কাজী নূর বেপারী বলেন, আমি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একটি কন্ট্রাক্টে কাজ করেছিলাম। আমি এখন বালু কাটা ব্যবসায় জড়িত নই।
কুতুবপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা রাতে এসব অভিযান করিনা। তবে যদি উপজেলা প্রশাসন সহায়তা চায় তবে আমরা কাজ করবো।
এ বিষয়ে ঢাকা অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যেহেতু আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।
দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসফিক সিগবাদ উল্লাহ বলেন, আমরা ১৩ মার্চ পদ্মায় অভিযান করেছি এবং একজনকে ৩০ দিনের জেল দেওয়া হয়েছে। এ সময় মেঘুলা ঘাটে একটি কাটার ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে আমাদের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।