<p>কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের পাশাপাশি হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী জেরীন কান্তা। চলতি বছরের ৩ মে তিনি প্রতিকার চেয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেনের কাছে একটি চিঠি দেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক ওই চিঠির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এক মাস পরেই তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান।</p> <p>অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী মহল সুবিধা না পেয়ে তাকে বদলি করে দেন। তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউএনও হিসেবে খোকসা উপজেলায় যোগ দিয়ে তিনি নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার পর তাকে বদলি করে দেওয়া হয়। তবে সে সময় ওই ইউএনও অব্যাহত হুমকির মুখে নিজের নিরাপত্তার জন্য বাসায় দুজন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ দিয়েছিলেন।</p> <p>ইউএনও মৌসুমী জেরীন কান্তা তার চিঠিতে উল্লেখ করেন, গত এপ্রিল মাসে কুমারখালী উপজেলার সহকারী কমিশনারের করোনা পজিটিভ আসায় এক আদেশে জেলার সব উপজেলার ইউএনও ও সহকারী কমিশনারদের করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর গত ২৯ এপ্রিল ডাক্তার-নার্সসহ একটি টিম স্যাম্পল নিতে তার দপ্তরে আসেন। সে সময় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা আমার কক্ষে উপস্থিত থাকায় মেডিক্যাল টিমকে এক ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। এমন সময় বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আখতার উপস্থিত হন। মেডিক্যাল টিম অপেক্ষামাণ থাকায় তাকে পরের দিন আসতে বলি। তারপরও তিনি আমার কক্ষ ত্যাগ না করে সেখানেই বসে থাকেন। তাদের অপেক্ষা করতে বলে বাসা থেকে স্যাম্পল দিয়ে আসার কথা বলে আমি সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় অনেক সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে বাবুল আখতার আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আমাকে নানান কটূ কথা বলতে থাকেন। এ সময় চেয়ারম্যান উচ্চস্বরে বলেন 'আমি কেন কালকে আসব, আমার কথা এখনই শুনতে হবে'। বাবুল আখতার চেয়ারম্যানের পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় রাজনৈতিক ভাবে প্রভাব বিস্তার করেন বলেও চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন। বাবুল যে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেই ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের তালিকা তৈরি ও ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের একটি অভিযোগ জেলা প্রশাসকের মৌখিক নির্দেশে তখন তদন্ত চলছিল।</p> <p>বাবুল আখতারের সঙ্গে ওই ঘটনার পর থেকে ইউএনও মৌসুমী জেরীন অনাকাঙ্ক্ষিত নানা পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছিলেন বলে চিঠিতে জানান। একপর্যায়ে বাসার সামনে বিভিন্ন সময় অজ্ঞাত লোকজনের আনাগোনায় তিনি ভীত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তিনি বাসাসহ আশপাশের লোকজনের নিরাপত্তার জন্য দুজন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ করেন। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে তিনি জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেন। তবে এ চিঠির বিষয়ে কোনো তদন্ত না হওয়ায় ভয়ে তিনি চার মাসের মাথায় বদলি হয়ে জুলাই মাসে কর্মস্থল ছেড়ে চলে যান। তবে এই সময়ে তিনি আদিবাসীদের বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ লুটপাটসহ করোনা প্রকল্পের অর্থ নয়ছয় করেন বলেও অভিযোগ ওঠে।</p> <p>উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল আখতার বলেন, ইউএনওর সঙ্গে আমি কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি। বরং ইউএনও চেয়ারম্যানদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এ কারণে তিনি বদলি হয়ে চলে যান।</p> <p>কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, ঘটনার বিষয়টি আমাকে অবহিত করে একটি চিঠি দেন তখনকার ইউএনও। এরপর চেয়ারম্যানকে তলব করা হয়। পরে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে মাফ চেয়ে নেওয়ায় বিষয়টি সেখানেই থেমে যায়।</p>