<p>বগুড়ার ধুনট উপজেলা সদরে ২৮ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী 'সিকতা' সিনেমা হল ভেঙে ফেলা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে লোকসানের মুখে পড়ায় হলটি ভাঙা হচ্ছে। সেখানে গড়ে তোলা হবে বিপণিবিতান। এর আগে দর্শকসংকটে পড়ে ভাঙা হয়েছে উপজেলার গোসাইবাড়ি সাতমাথা এলাকায় কাজল সিনেমা হলটি। সেই জায়গাটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।</p> <p>স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, এলাকার মানুষের একসময় বিনোদনে ভরসা ছিল সিনেমা হল। দর্শক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নব্বইয়ের দশকে এ উপজেলায় গড়ে উঠেছিল চারটি সিনেমা হল। এর মধ্যে শহরে একসময় ক্লিওপেট্রা, ঝংকার ও সিকতা সিনেমা হলের ঐতিহ্য ছিল, এখন আর নেই।</p> <p>শহরের সবচেয়ে পুরনো প্রেক্ষাগৃহ ক্লিওপেট্রা। এরপর একে একে গড়ে ওঠে ঝংকার ও সিকতা সিনেমা হল। উপজেলা সদরের বাইরে গোসাইবাড়ি সাতমাথা এলকায় চালু হয় কাজল সিনেমা হল। তবে আর্থিক সংকটে পড়ে ২০০৯ সালে ভাঙা হয়েছে কাজল সিনেমা হলটি। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সিকতা সিনেমা হল ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। আর অনেক আগে থেকেই বন্ধ শহরের ক্লিওপেট্রা ও ঝংকার সিনেমা হল।</p> <p>আধুনিক মানের সিকতা সিনেমা হলটি শহরের ডাকবাংলো সড়কের অফিসারপাড়ায় ১০ শতক জায়গার ওপর নির্মিত হয়। ওই হলের মালিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম শাহাদৎ হোসেন। তার মেয়ে সিকতার নামে হলটির নামকরণ করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সিকতা সিনেমা হলের রুপালি পর্দা জ্বলে উঠেছিল ১৯৯৩ সালে। এই হলে প্রথম প্রদর্শিত হয় সালমান শাহ-শাবনূর অভিনীত ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ চলচ্চিত্রটি।</p> <p>৬৫০ আসনের এ সিনেমা হলটি একসময় থাকত হাউসফুল। ২০০৮ সাল পর্যন্ত জমজমাট ছিল সিকতা সিনেমা হল। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে শুধু ঈদ উৎসবে চালু রাখা সম্ভব হয় সিনেমা হলটি। সর্বশেষ ২০১৯ সালের পবিত্র ঈদুল ফিতরে প্রদর্শিত হয় বেপরোয়া ছায়াছবি। এতে হল মালিকের প্রায় আড়াই লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।</p> <p>সিকতা সিনেমা হলের বর্তমান মালিক জাকির হোসেন মুক্তা বলেন, সিনেমা হল ব্যবসায় দর্শক খরার শুরু ২০০৮ সালে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাধ্য হয়ে হল ভেঙে বিপণিবিতান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। ভালো গল্পের ছায়াছবি নেই, ছবিতে নেই ভালো সংলাপ, নেই ভালো গান ও অভিনয়। এ অবস্থায় অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই চলছিল সিনেমা হলের ব্যবসা। লোকসান গুনতে গুনতে অবশেষে হলটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একপর্যায়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিনেমা হলের পুরনো মালামাল মাত্র চার লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।</p>