<p>বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায় ঘেরের পাড়ে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ধান ও মাছের পাশাপাশি ঘেরে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা।</p> <p>মৌসুমি ধান ও মাছ চাষ করে একসময় যাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটত, লাভজনক সমন্বিত সবজি চাষে এখন তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।</p> <p>মোল্লাহাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৮৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে  ৫৪০ হেক্টর ঘেরের পাড়ে জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। চলতি বছর সবজি উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ছিল ৮২০ হেক্টর জমিতে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০ হেক্টর জমিতে সবজি বেশি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে করলা চাষ হয়েছে ৩০০ হেক্টর জমিতে, শসা ১৫০ হেক্টর জমিতে, লাউ চাষ ৮০ হেক্টর এবং চাল কুমড়া চাষ হয়েছে ১০ হেক্টর জমিতে। </p> <p><img alt="" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Vege-1.jpg" style="height:483px; width:800px" /></p> <p>উপজেলার চুনখোলা, শাসন, আংরা, মৌপুরা, বড় কাচনা, ছোট কাচনা, দারিয়ালা, নগরকান্দি,  গাংনী, কুলিয়া, ঘোষগাতী, নাশুখালী, চাঁদেরহাট, জয়ডিহি, সরসপুর, কোদালিয়া, ভাণ্ডারখোলা, চর- আটজুড়ি গ্রামের ঘেরের পাড় ও পতিত জমিতে এখন ব্যাপকহারে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ হচ্ছে।</p> <p>সরেজমিনে দেখা যায়, মাছের ঘেরের পাড়ে শোভা পাচ্ছে করলা, শসা, লাউ, ঢেঁড়স, , মিষ্টি কুমড়া, উচ্ছে, ঝিঙে, চাল কুমড়া, বরবটি, শিম, পুঁইশাক, পেঁপে, শসা, খিরাইসহ নানা রকমের সবজি। ঘেরের পাড়ে বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশ ও জাল দিয়ে ঝুলন্ত মাচা তৈরি করা হয়। তারপর সবজির আবাদ করে বাড়ন্ত গাছ মাচার ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে জায়গা কম লাগে ও অল্প পরিচর্যায় ভালো ফলন পাওয়া যায়।</p> <p>চুনখোলা ইউনিয়নের আংরা গ্রামের দীপঙ্কর বিশ্বাস জানান, তাঁর তিন বিঘা ঘেরের পাড়ে মাচা পদ্ধতিতে সবজির চাষ করা হয়েছে। উৎপাদিত সবজি পাইকারি দরে  ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন তিনি। এ সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে নিয়ে বিক্রি করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এতে সংসার ভালোভাবে চলে ও কিছু টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে মাছের খাবার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য ব্যয় করেন তিনি।</p> <p><img alt="" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Vege-3.jpg" style="height:483px; width:800px" /></p> <p>একই এলাকার হরিচাঁদ মজুমদার, খোকন  শেখসহ সবজি চাষিদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, বর্তমানে দেশ-বিদেশে সবজির ব্যাপক চাহিদা হওয়ায় গত কয়েক বছরে মাছের ঘেরের পাড়ে সবজি চাষে ভাগ্যের পরিবর্তন এসেছে তাঁদের জীবনে। কৃষকরা বলেন, মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষে বদলে গেছে তাঁদের মতো বহু কৃষকের ভাগ্য।</p> <p>দারিয়ালা গ্রামের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী এনায়েত শিকদার বলেন, 'আমি স্থানীয় সবজি চাষিদের কাছ থেকে পাইকারি দরে সবজি কিনে ট্রাকে করে ঢাকা, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। এতে নিজেরও লাভ হচ্ছে এবং কৃষকদের উৎপাদিত সবজিও বিক্রি করে দিতে পারছি।</p> <p>মোল্লাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অনিমেষ বালা বলেন, বেশিরভাগ ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ হচ্ছে। সেখানে উৎপাদিত করলা, শশা, লাউ, উচ্ছে, শসা চাল কুমড়া ও বরবটি বর্তমানে এসব ফসল তোলার ভরা মৌসুম চলছে। কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছেন। আমরা কিছু প্রদর্শনী  আকারে লাউ, করলা, মিষ্টি কুমড়ার সার বীজ ও প্রযুক্তির সহায়তা দিয়েছি। এছাড়া নিরাপদ সবজি উৎপাদনে পরামর্শ প্রদান ও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। </p>