<p>দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। রবিবার রাত থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত নদীর রাউজান ও হাটহাজারীর বিভিন্ন পয়েন্টে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালোবাউশসহ কার্পজাতীয় মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে।</p> <p>তবে গতকাল দিনভর সংগ্রহকারীরা নদীতে নৌকা দিয়ে জাল ফেলেও প্রত্যাশিত ডিম পাননি। ফলে বহু ডিম সংগ্রহকারী হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন।</p> <p>হালদাবিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, এবার রাউজান-হাটহাজারীর সাড়ে ৬০০ লোক ৩১৫টি নৌকা নিয়ে নদীতে ডিম সংগ্রহ করতে নামেন। তাঁদের ডিম সংগ্রহের পরিমাণ তিন হাজার কেজি, যা আগের বছর ছিল আট হাজার কেজি। এরও আগের বছর ছিল ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি। তিনি আরো বলেন, ‘নদীতে পাহাড়ি ঢল, পর্যাপ্ত ঝড় এবং বৃষ্টি না হওয়ায় মা মাছের ডিম দেওয়ার পরিমাণ কমে গেছে। ’</p> <p>রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রবিবার রাত ১২টা থেকে ডিম সংগ্রহের জন্য নেমে পড়ার পর মধ্যরাতে কিছুটা ঝড় ও বৃষ্টি হয়। রাত কাটিয়ে দিনভর  নদীতে অপেক্ষায় থেকেও কেউ দুই থেকে পাঁচ কেজির বেশি ডিম পাননি। পূর্ণাঙ্গরূপে ডিম ছাড়লে একেকজন ৫ থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত ডিম পান।</p> <p>নদীর রাউজান অংশের কাগতিয়া, আজিমের ঘাট, ডোমখালী, কাগতিয়ার মুখ, খলিফারঘোনা, মদুনাঘাট, উরকিরচর, নোয়াপাড়া একাংশ এবং হাটহাজারীর রামদাস মুন্সিরহাট, নয়াহাট, মাছুয়াঘোনা, আমতুয়া, নাপিতের ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ডিম সংগ্রহকারীরা নামেন।</p> <p>মূলত পাহাড়ি ঢল ও বজ্রপাত শুরু হলে পূর্ণাঙ্গভাবে ডিম ছাড়ে মাছ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নমুনা ডিম ছাড়ার পর এবারের মৌসুমে মাছ পূর্ণাঙ্গভাবে ডিম ছেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ এই অঞ্চলের এক শ্রেণির মানুষের নানা রকম ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডে মা মাছের ডিম ছাড়ার প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। এবার কম ডিম পাওয়ার কারণ এটি।</p> <p>রাউজানের আজিমার ঘাট এলাকার ডিম সংগ্রহকারী নুরুল আজিম বলেন, ‘রবিবার রাত ১২টা থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত নদীতে অবস্থান করে পাঁচ কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছি। ’</p> <p>হাটহাজারী উপজেলার মাদার্শা এলাকার রণজিত দাশ বলেন, ‘আমরা তিনজন তিনটি নৌকা নিয়ে রবিবার রাত ও সোমবার দিনের ১২টা পর্যন্ত তিন কেজি ডিম পেয়েছি। ’ একই উপজেলার গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকার ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী জোয়ারের শুরুতে এবং ভাটার সময় আরো বেশি ডিম পাওয়ার আশা করেছিলেন সংগ্রহকারীরা। কিন্তু মা মাছ আর ডিম না দেওয়ায় সংগ্রহকারীরা হতাশ হয়েছেন। অথচ আমি আটটি নৌকা নিয়ে নদীতে ছিলাম। ’</p> <p>রাউজানের ইউএনও জোনায়েদ কবীর সোহাগ বলেন, ‘আমি সোমবার নদীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবারই একই কথা, অনেকে বেশি ডিম পেয়েছেন, আবার অনেকে কম ডিম পেয়েছেন। তবে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার ডিম পাওয়ার পরিমাণ কম। ’</p> <p> </p>