<p style="text-align:justify">চার ঘণ্টার পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা তলিয়ে গেছে। গোয়াইনঘাটে বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। নিম্নাঞ্চলে বাড়িঘরের ছাদ ছুঁই ছুঁই পানি। পানির নিচে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর। কানাইঘাটের পৌর এলাকা ছাড়াও ছয় ইউনিয়ন তলিয়ে গেছে।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="kalerkantho" src="http://www.kalerkantho.comhttp://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print%20Version%20Online/print%20/2022/06.June/16-06-2022/121/77777(1).jpg" style="border:0px; box-sizing:border-box; float:left; height:578px; margin:12px; max-width:640px !important; vertical-align:middle; width:256px" />এক দিনের ব্যবধানে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ৪৩ সেন্টিমিটার। পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণ অব্যাহত থাকায় অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা সড়ক, দোয়াবাজার-ছাতক সড়ক এবং ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক, বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের রাধানগর পয়েন্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্লাবিত হয়েছে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া গতকাল বুধবার সকালে সুনামগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্লাবিত হওয়ার দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ।</p> <p style="text-align:justify">সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানিয়েছে, এক দিনের ব্যবধানে চারটি পয়েন্টে সিলেটের নদ-নদীর পানি বিপত্সীমা অতিক্রম করেছে। কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি গতকাল বিকেলে বিপত্সীমার ১১৪ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।</p> <p style="text-align:justify">গোয়াইনঘাটের অন্তত ১০ জন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে দুই থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত পানি ঢুকেছে। নিম্নাঞ্চলে ঘরের ছাদ ছুঁই ছুঁই করছে পানি। উপজেলার ফতেহপুুর ও জাফলং ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর ও নলজুরির টিলা এলাকা ছাড়া ১২ ইউনিয়নের ৯০ শতাংশই বন্যাকবলিত।</p> <p style="text-align:justify">উপজেলার পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের ধর্মগ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ি এখন তিন ফুট পানির নিচে। সকালে দেখতে দেখতে কয়েক ঘণ্টায় রাস্তা ডুবে, উঠান হয়ে ঘরে তিন ফুট পানি উঠে গেল। ’ পাশের খলগ্রামের বাসিন্দা পেশায় নৌকা শ্রমিক তায়েফ আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সকাল পর্যন্ত পানি ছিল না। সকাল ৮টার পর দেখতে দেখতে ঢলের পানি পুরো এলাকা ঢুবিয়ে দিয়েছে। ’</p> <p style="text-align:justify">গোয়াইনঘাটে গতকাল সকাল ৮টা থেকে পানি বাড়া শুরু হলেও কোম্পানীগঞ্জে রাত থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। গতকাল দুপুরের আগেই উপজেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এই বন্যার মূল কারণ হলেও এর সঙ্গে চলছে টানা বৃষ্টিপাত। উপজেলার ছয় ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি। গতকাল সকাল থেকেই উপজেলা সদরের সঙ্গে ছয়টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। উপজেলা পরিষদ সড়ক, থানা কমপ্লেক্স সড়ক, ভূমি অফিস সড়কসহ উপজেলার প্রায় সব সড়কে এখন নৌকা চলাচল করছে। অনেকে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছে। এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত থাকার কারণে অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে জায়গা না পেয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে অনেকে।</p> <p style="text-align:justify">কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং কালের কণ্ঠকে বলেন, পানি বেড়ে চার সপ্তাহ আগের বন্যা পরিস্থিতির মতো হয়ে গেছে। নিজের কার্যালয় ও বাসায় হাঁটুপানি উঠেছে বলে তিনি জানান। এসএসসি পরীক্ষার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গেলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগামী ১৯ তারিখ থেকে এসএসসি পরীক্ষা। আমাদের ৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা। এর মধ্যে মাত্র সাতটিতে পরীক্ষাকেন্দ্র। বাকিগুলো তো খোলাই আছে। এর মধ্যে মাত্র সাতটিতে লোকজন উঠেছে। বাকিগুলো খালি আছে। আমাদের তো পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে। কারণ এখনো সরকার পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেনি। ’</p> <p style="text-align:justify">কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপুর পূর্ব ইউনিয়ন, লক্ষ্মীপুর পশ্চিম ইউনিয়ন, দীঘিপাড় ইউনিয়ন, সাতবাক ইউনিয়ন, বড় চতুল ও সদর ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত। গতকাল সকালে কানাইঘাট বাজার পানিতে নিমজ্জিত হয়।</p> <p style="text-align:justify">পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে সব পয়েন্টে নদীর পানি বাড়তির দিকে। পানি বাড়ার কারণে সিলেটের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ’</p> <p style="text-align:justify">গতকাল সকালে সুনামগঞ্জ ও ছাতক পৌরসভার বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় পানি ঢুকেছে। ছাতকে ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে ৮০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ি এলাকা, জগন্নাথবাড়ি বাজার, নবীনগর, উকিলপাড়া, কাজির পয়েন্ট, ষোলঘরসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, ষোলঘর মাদরাসা, তেঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে।</p> <p style="text-align:justify">সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, আগামী ২০ জুন পর্যন্ত সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এতে পানি আরো বাড়তে পারে। এ ছাড়া জুন মাসের মাত্র অর্ধেক সময় অতিবাহিত হওয়ার আগেই সুনামগঞ্জে ৮৩ শতাংশ বৃষ্টি হয়ে গেছে। আর মাত্র ১৭ শতাংশ বৃষ্টি বাকি আছে।</p> <p style="text-align:justify">সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ২৪৫ মেট্রিক টন জিআরের চাল মুজদ আছে। পরিস্থিতি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।</p>