<p>বাঁশ, কাঠ, তারকাঁটা ও জিআই তারের তৈরি বাঁশের সাঁকোই দশ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ। সাঁকোর বিভিন্ন স্থানে কাঠ ও বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই। জোড়াতালির এই সাঁকো দিয়েই ঝুঁকিপূর্ণভাবে শিশু, বৃদ্ধ, শিক্ষার্থীসহ শত শত লোকজন পারাপার হচ্ছে প্রতিদিন। চিত্রটি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার কাশীপুর ইউনিয়নের হাজীপাড়া এলাকার। সাঁকোটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। এখানে একটি পাকা সেতু করে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।</p> <p>ধলেশ্বরী নদী সংযুক্ত খালের ওপর নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ এই বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে চলাচল করে চরকাশিপুর, হাজীপাড়া, নরসিংপুর, ডিক্রিরচর, মজিবনগর, মজিবপট্টি, সাতভাই গ্রাম, পশ্চিম নরসিংপুর, বক্তাবলী, গোগনগর, বালুরচর এলাকার মানুষ।</p> <p>সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কাশীপুর ইউনিয়নের চর কাশীপুর ও হাজীপাড়া এলাকার মাঝখানে ধলেশ্বরী নদী সংযুক্ত খালের ওপর প্রায় ৬০০ ফুট দীর্ঘ একটি বাঁশের সাঁকো দুই পারের মানুষের চলাচলের একমাত্র পথ। এই ইউনিয়ন ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষও সাঁকোটি নিয়মিত ব্যবহার করে থাকে। স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ প্রতিদিন কয়েকবার এ সাঁকো দিয়ে চলাচল করে।</p> <p>এলাকাবাসী জানায়, প্রায় এক যুগ আগে নির্মাণ করা এ সাঁকোটি বর্তমানে নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় চলাচলে বেড়েছে ঝুঁকি। দুই-তিনজন মানুষ একসঙ্গে চলাচল করলে জরাজীর্ণ সাঁকোটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। পা পিছলে সাঁকো থেকে মানুষের খালে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও অহরহ ঘটছে। এ ছাড়া ইজারাদার জনপ্রতি তিন টাকা করে টোল আদায় করলেও সাঁকোটি মেরামত করা হয় না।</p> <p>এলাকাবাসীর অভিযোগ ও আশঙ্কা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ স্থানে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও বছরের পর বছর পার হলেও এখনো তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। ফলে যেকোনো সময় সাঁকোটি ভেঙে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।</p> <p>চর কাশীপুর এলাকার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ (৪৫) কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ প্রায় এক যুগ আগের দীর্ঘ বাঁশের এই সাঁকোটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে খালটি পার হচ্ছে। এই সাঁকোটি পার হতে ইজারাদারকে জনপ্রতি তিন টাকা করে টোল দিতে হয়।</p> <p>হাজীপাড়া এলাকার বয়স্ক মহিলা নূরবানু বেগম (৬৫) কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে আমরা তাড়াতাড়ি কোনো জায়গায় যেতে পারি না। অসুস্থদের এই সাঁকো দিয়ে কোলে করে পার হতে হয়। ঝড়বৃষ্টির দিনে আতঙ্ক নিয়েই সাঁকো পাড়ি দিতে হয়।’</p> <p>অভিযোগ অস্বীকার করে টোল আদায়কারী আশরাফ হোসেনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জনগণ যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারে এর জন্য আমরা বছরে দুইবার সাঁকোটি মেরামত করি।’</p> <p>এ ব্যাপারে কাশীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে একটি পাকা সেতু করার ব্যাপারে আড়াই বছর আগেই আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি অচিরেই আমরা সেটার বাস্তবায়ন করতে পারব।’</p> <p>বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল কালের কণ্ঠকে বলেন, এটা একটা দুঃখজনক ব্যাপার। এত উন্নয়নের মাঝেও এখানে একটা পাকা ব্রিজ করা হয়নি। এই সাঁকোর স্থানে দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণ করতে যা যা প্রয়োজন তা জেলা পরিষদ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।</p>