<p>নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ১৫ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার শেষ দিন ছিল রবিবার (২৮ এপ্রিল)। মঙ্গল শোভাযাত্রা, সেমিনার, গ্রামবাংলা ও বৈশাখী উৎসব শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, গ্রামীণ খেলা ও জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ মেলার শুভ উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান এমপি। ‘পহেলা বৈশাখ সকলের উৎসব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ।</p> <p>মেলায় গ্রামবাংলার কারুশিল্প প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন রাজশাহীর শখের হাঁড়ি শিল্পী সুশান্ত পাল, রিকশা ও রিকশাচিত্র শিল্পী এস এ মালেক, জামদানি শিল্পী ইব্রাহিম, দারুশিল্পী আব্দুল আউয়াল মোল্লা, বীরেন্দ্র সূত্রধর, শোলাশিল্পী নিখিল মালাকার, নকশিকাঁথা শিল্পী পারভীন আক্তার, হোসনে আরা বেগম, ঝিনুকশিল্পী মো. নূরুল ইসলাম, বাঁশ-বেত কারুশিল্পী পরেশ চন্দ্র দাস, হাতপাখা কারুশিল্পী বাসন্তী সূত্রধর, শতরঞ্জিশিল্পী আনোয়ার হোসেন এবং উদ্যোক্তাসহ ৩২টি স্টলে ৬৪ জন প্রথিতযশা কারুশিল্পী।</p> <figure class="image"><img alt="." height="360" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/online/2024/04/29/my1141/সোনারগাঁ-২.jpg" width="600" /> <figcaption>লোকজমেলায় কর্মরত কারুশিল্প স্টলে চিত্রাঙ্কন করছেন রিকশাচিত্রশিল্পী এস এ মালেক</figcaption> </figure> <p>ফাউন্ডেশনের পরিচালক ফোকলোরবিদ ড. আমিনুর রহমান সুলতানের সভাপতিত্বে পক্ষকালব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজনে ছিল সেমিনার, পালাগান, মালজোড়া গান, কবিগান, বাউলগান, পালকির গান, কিচ্ছা গান, ভাটিয়ালি গান, মাইজভাণ্ডারী গান, লালন, হাছন রাজা ও জারি-সারিগানের আসর।</p> <p>প্রতিদিনই লোকগানের সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করতে প্রথিতযশা শিল্পী, সাধকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মেলার শেষ দিন ‘বাংলাদেশের আঞ্চলিক গানের বৈচিত্র্য’ শীর্ষক সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন কবি শাহেদ কায়েস। পক্ষকালব্যাপী বৈশাখী মেলায় ‘লোক প্রযুক্তি ও পালকির গান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের প্রধান হাসান ঈমাম সুইট। ‘পালাগান’ শীর্ষক সেমিনার বক্তব্য দেন স্বনামধন্য বাউলশিল্পী আরিফ দেওয়ান। ‘মালজোড়া গান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আতাউর রহমান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ফোকলোর গবেষক সুমন কুমার দাশ। ‘কিসসা পালার বয়াতি ও পরিবেশনায় বহুমাত্রিক চরিত্রের বিস্তার’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দেশেরবরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ। ‘বাঙালির ভাটিয়ালি গান’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন লোকসংস্কৃতি গবেষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাহিদুল কবীর। ‘বিক্রমপুরের গাজীর পট’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। </p> <p>এ ছাড়াও নকশিকাঁথা, নকশি পাখা, কাগজের ফুল ও পাটশিল্পের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে মেলা কর্তৃপক্ষ। তবে প্রকৃত শিল্পীদের পাশ কাটিয়ে অশিল্পীদের স্টল বরাদ্দ ও প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। </p> <p>কবি শাহেদ কায়েস বলেন, ১৫দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ। তবে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ লোক ও কারুশিল্পীদের যথাযথ মূল্যায়ন করছে না। এটিকে অবকাঠাবোগতভাবে কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত করার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, যাদের বাঁচিয়ে রাখতে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এই ফাউন্ডেশন তৈরি করেছেন, সেই শিল্পীরা এখানে চরমভাবে অবহেলিত।</p> <p>ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান বলেন, ‘আমি যোগদান করার পর ১৫ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আমি চেষ্টা করছি বঙ্গবন্ধু ও জয়নুল আবেদিনের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে শিকড় থেকে শিল্পীদের তুলে এনে যথার্থভাবে সম্মানিত করতে এবং মৃতপ্রায় শিল্পগুলোকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন শিল্পী তৈরি করতে।’</p>