<p>সিনেমায় ও প্রবাদে আছে, সাপের কামড়ে লখিন্দরের মৃত্যু হয়। তার স্ত্রী বেহুলা কলা গাছের বেলায় লখিন্দরের লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেয় জীবিত হওয়ার আশায়। কোনো এক অঞ্চলে লখিন্দরকে সুস্থ করে তোলে সাপুড়ে। সিনেমায় সুস্থ লখিন্দর এক সময় বেহুলার কাছে ফিরলে বেহুলা-লখিন্দর সিনেমার সমাপ্তি ঘটে। ঠিক তেমনি আজ গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে সাপের কামড়ে মৃত সাইফুল ইসলামকে দাফনের আগে মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাপুড়ের মাধ্যমে চলছে সাপের বিষ খোলার কাজ। সাপুড়েরা এখন বিন বাজিয়ে মৃত সাইফুলকে জীবিত করার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে ওঝা (কবিরাজ)।</p> <p>সাপের কামড়ে নিহত যুবক কালিয়াকৈর উপজেলার আশাপুর গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৮)।</p> <p>শনিবার (২৯ জুন) গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আশাপুর গ্রামে সাপের কামড়ে সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর স্থানীয় কবিরাজ ও সাপুড়ে দল দাফনের আগে লাশ মাঠে নিয়ে বিষ খোলার চেষ্টা করে। এই দৃশ্য দেখার জন্য শত শত মানুষ মাঠের চারদিকে দর্শক হয়ে দেখছে। সঙ্গে কামড় দেওয়া সাপকে মৃত অবস্থায়ও প্রদর্শন করা হচ্ছে।</p> <p>এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা জানায়, সাইফুল ভোর রাতে টর্চ হাতে টেঁটা দিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মাছ ধরতে বাড়ির পাশে বিলে যান। হঠাৎ সাইফুল ইসলামকে একটি সাপ পায়ে ছোবল দেয়। পরে তারা টেঁটা দিয়ে আঘাত করে ওই সাপটি মেরে ফেলেন। পরে মৃত সাপটি নিয়ে সাইফুল ইসলাম বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীকে সাপে ছোবল দেওয়ার ঘটনাটি জানায়। পরে পরিবারের লোকজন রাতে তাকে পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। এরপর লাশ বাড়িতে এনে দাফনের প্রস্তুতি নিলে স্থানীয় কবিরাজ তার সাপুড়ে দল বলসহ লাশ মাঠে নিয়ে বিষ খোলার কাজ শুরু করেন। এই দৃশ্য দেখতে শত শত লোক ভিড় জমায়।</p> <p>শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় কালিয়াকৈর উপজেলার ঢালজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইছামুদ্দিন বলেন, ডাক্তার আমাকে বলেছে, সাইফুল ইসলাম সাপের কামড়ে মারা গেছে। মাছ ধরতে গিয়ে বিষধর সাপের ছোবলে সাইফুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সকাল থেকে পরিবারের লোকজন তাকে কবিরাজ দেখাচ্ছে।</p> <p>টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার অনিমেষ ভৈমিক  জানান, রাতে তিনজনকে হাসপাতালে মৃত আনা হয়েছে। সেখানে সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে কিনা জানা নেই।</p> <p>এদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আশাপুর গ্রামে সাপের ছোবলে মৃত্যু ব্যক্তিকে জীবিত করতে ওঝা নানা আয়োজন করেন। জানাজা করতে বাধা দিয়ে জীবিত করার এই প্রক্রিয়া দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে শত শত লোকজন। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এ ধরনের কুসংস্কার ও গোঁড়ামি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।</p> <p>এলাকাবাসী বলেন, সকালে মৃত ঘোষণার পর দুপুরে জানাজা হওয়ার কথা ছিল। পরে স্বজনরা লোকমুখে শুনে সাভার থেকে ১ জন নারী ও ১ জন পুরুষ ওঝাকে নিয়ে আসে। তারা এসে ফাঁকা একটি জমিতে বেশ কয়েকটি কলাগাছ ও পাতিল দিয়ে বিকেল হতে বিষ নামানোর আয়োজন করছেন। এরপর তারা একটি ওষুধ আনতে চলে গেছে, রাতে এসে বিষ নামানোর কথা। ওষুধ আনতে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে কথিত ওঝা। রাত ৯টার সময় ফেরার কথা থাকলেও রাত ১২টা পর্যন্ত ফিরেনি।</p> <p>উপজেলার বেনুপুর এলাকার আরমান হোসেন বলেন, ‘জানাজা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ওই ওঝারা নাকি ৭ দিন আগের সাপে কাটা মানুষকেও জীবিত করতে পারে। এরপরই এই আয়োজন করা হয়েছে।’</p> <p>আরেক বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই আধুনিক যুগে এসে এমন কুসংস্কার মেনে নেওয়া যায় না। অবশ্যই এলাকার সচেতন মানুষ ও প্রশাসনের উচিত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’  ‘আমাদের অজ্ঞতা আমাদেরকেই নিরন্তর হাসায়। এমন গোঁড়ামির ভয়াল বোঝা আর কতদিন আমরা বয়ে বেড়াব? কুসংস্কার দূরীকরণে আধুনিক শিক্ষা ও জনসচেতনতা জরুরি।’</p> <p>কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম নাসিম বলেন, ‌‘একজন যুবককে সাপে কেটেছে সকালেই শুনেছি। যেহেতু তার পরিবারের আত্মবিশ্বাস যদি ওঝা ভালো করতে পারে সেজন্য এ আয়োজন করেছে। উৎসুক জনতার ভিড় রয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’</p>