<p>টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মির্জাপুর থানায় একটি হত্যা মামলায় আসামি হয়েছেন তিনি। আসামি হওয়ার পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এতে করে ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ নাগরিক।</p> <p>ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন আব্দুর রউফ মিয়া। ইউপি চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে থেকে ঝিনাই নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করাসহ তার নানা অনেক অভিযোগ স্থানীয়দের।</p> <p>অভিযোগ উঠেছে, ইউপি চেয়ারম্যান নিজের লোকজন দিয়ে প্রতি বছর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ৫/৬টি ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটেছেন। তার বিরুদ্ধে রাস্তার পাশের গাছ বিক্রি, বাউল অনুষ্ঠানে গান বাজনা বন্ধ করা, বিগত নির্বাচনে ভোটারদের নানাভাবে হুমকি ও দুস্থদের ভিজিএফ এর চাল কম দেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি বয়স্ক ও বিধবা ভাতা প্রাপ্তদের কাছ থেকেও কমিশন নিতেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।</p> <p>জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া বিভিন্ন সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে দাম্ভিকতা নিয়ে কথা বলায় নানা শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে সমালোচিত হন।</p> <p>স্থানীয়রা সূত্র জানায়, আব্দুর রউফ ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। তিনি ২০১৭ সালে ১৬ এপ্রিল ইউপি নির্বাচনে ফতেপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন চান। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ২ নম্বর ওয়ার্ডের একটি রাস্তার পাশের বড় আকারের কয়েকটি মেহগনি গাছ বিক্রি করে সামালোচনায় পড়েন। একই বছর ২০ আগস্ট তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এর পর ২০২২ সালে ১৫ জুন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। </p> <p>চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতি বছর বিভিন্ন ব্যক্তির সহযোগিতায় ঝিনাই নদীর পারদিঘী, ফতেপুর, থলপাড়া, হিলড়া ও বানকাটা এলাকায় কয়েকটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করতেন। এতে নদীর ওইসব এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও আবাদী জমি নদীগর্ভে চলে যায়। </p> <p>তার বিরু‍দ্ধে আরো ভিযোগ হলো- শুস্ক মৌসুমে নদীর পারের কয়েকটি স্থানে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে করে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। তার এসব অপকর্মের কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি এলাকার লোকজন। এছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনে তিনি প্রতিপক্ষের লোকজন ও সাধারণ ভোটারদেরকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করতেন।<br />  <br /> এছাড়াও দুস্থদের মাঝে ভিজিএফ এর চাল কম দেয়ার প্রতিবাদ করায় ইউপি চেয়ারম্যান মির্জাপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খানের ওপর হামলার চেষ্টা চালান এবং নানাভাবে তাকে হুমকি প্রদান করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। </p> <p>২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর রাতে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া ফতেপুর উত্তরপাড়া গ্রামে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে ‘বিএনপির ভাইয়েরা নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নাই’ বলে বক্তব্য দেন। তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাড়া হলে ভাইরাল হয়।<br />  <br /> ১৩ ডিসেম্বর কালের কণ্ঠে ‘বিএনপির ভাইয়েরা নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের নজরে আসে। ওই দিন সন্ধ্যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান ফতেপুর বাজারে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়াকে জনসমক্ষে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। </p> <p>অভিযোগের বিষয়ে মির্জাপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, ‘গত দুই বছর আগে ফতেপুর ইউপি কার্যালয় হতে দুস্থদের মাঝে বিতরণকৃত ভিজিএফ এর চাল কম দেয়ার প্রতিবাদ করেছিলাম। সেজন্য ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া তাকে মারতে আসেন এবং নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করেন। পরে স্থানীয় লোকজন ইউপি চেয়ারম্যানকে সামলান।’ </p> <p>ফতেপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়ুন তালুকদার বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া প্রতি বছর ঝিনাই নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করেছেন। ফতে ফতেপুর বাজারের একাংশসহ কুরনী ফতেপুর দক্ষিণ পালপাড়া গ্রামের ২০/২৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি ও পালপাড়ার সংলগ্ন প্রায় ৫০০ ফুট পাকা রাস্তা এবং থলপাড়া ও বানকাাটা গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও রাস্তা নদীগর্ভে চলে গেছে। এছাড়া ভেকু মেশিন দিয়ে নদীর পার কেটে নেয়ায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া বয়স্ক ও বিধাব ভাতা প্রাপ্তদের কাছ থেকেও চেয়ারম্যান কমিশন নেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।’</p> <p>ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের বক্তব্য জানার জন্য তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তার বড় ছেলে আল আমিন পরিচয়ে একজন ফোন রিসিভ করেন। তিনি বলেন, ‘বাবা কোথায় যেন আছেন বলতে পারবো না।’</p>