<p>টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া অন্ধ হিমেলকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে উপজেলা বিএনপি। গতকাল শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী হিমেলের বাড়িতে গিয়ে হিমেলের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।</p> <p>এ সময় বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। গত ৪ এপ্রিল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরের সোহাগপাড়া এলাকায় গোড়াই হাইওয়ে থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয় হিমেল। এ সময় হাইওয়ে থানা পুলিশের ছররা গুলিতে রক্তাক্ত হয়। </p> <p>টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি মো. হাসানুজ্জামিল শাহীন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল, মির্জাপুর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সালাউদ্দিন আরিফ, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম মহসীন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ শাহ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ডি এম শফিকুল ইসলাম ফরিদ, টাঙ্গাইল জেলার ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আল আমীন, আল আমীন সিয়াম, আব্দুল আলীম, শেখ ফরাশ, রাকিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>গত ৪ আগস্ট হতে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ঢামেক হাসপাতালে এবং ২০ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউ হাসপাতালে হিমেলের চিকিৎসা করানো হয়। চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায়ও আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমন্বয়করা হাসপাতালে হিমেলকে দেখতে যান এবং তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। তবে টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি বলে তার মা ও ভাই জানিয়েছেন।</p> <p>হিমেল মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের লালবাড়ী গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে। বাবা তার মাকে ছেড়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছেন। মা হাওয়া নাছিমা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে হিমেল ছোট।</p> <p>হিমেল বলেন, ‘আন্দোলনে অংশ নেওয়া চার সহপাঠীকে হাইওয়ে থানা পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সময় হাইওয়ে থানায় আক্রমণ করি। পরে পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। এতে আমার চোখ, মুখ ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হই।’</p> <p>হিমেল দুই বছর আগে উপজেলার গোড়াই উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়। পরে সে স্থানীয় একটি সাউন্ড সিস্টেমের দোকানে কাজ শুরু করে। গত ৪ আগস্ট বিকেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে হিমেলও অংশ নেয়। তারা গোড়াই হাইওয়ে থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করলে পুলিশ টিয়ার সেল ও ছররা গুলি ছোড়ে। এতে হিমেলসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়।</p> <p>হিমেলের মা নাসিমা আক্তার বলেন, ‘হিমেল সুস্থ হলেও চোখ দুটি অন্ধ হয়ে গেছে। আমার ছেলে আর কোনো দিন পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে না। টাকার অভাবে ছেলের ভালো চিকিৎসাও করাতে পারছি না। ডাক্তার বলেছেন, ওই চোখের মুখে বুলেট আছে। ঢামেক ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে বুধবার বাড়িতে এসেছি।’</p> <p>হিমেলের বড় ভাই জনি মিয়া বলেন, ‘পুলিশের ছররা গুলিতে আমার ভাইয়ের দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ৫টি দাঁত পড়ে গেছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলি বের করা হলেও আরো গুলি রয়েছে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। আমি গোড়াই শিল্পাঞ্চল এলাকার উত্তরা স্পিনিং মিল কারখানায় চাকরি করি। মাসিক আট হাজার টাকা বেতন পাই। এই স্বল্প আয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার চলে। ধারদেনা করে চিকিৎসা করিয়েছি। আমার ভাইয়ের উন্নত চিকিসার ব্যবস্থা করানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি করছি।’</p>