<p>‘খাওয়ার পানি নাই, রান্না করার পানি নাই। আমরা কী যে কষ্টে আছি তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা জানেন। এভাবে কোনো মানুষ বাঁচতে পারে না।’ আক্ষেপ করে এ কথাগুলো বলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সেলিনা আক্তার। দীর্ঘদিন ধরেই বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকাসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে সুপেয় পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে এক সপ্তাহ ধরে এই সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।<br />  <br /> বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বন্দর নবীগঞ্জ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর এমন দুর্দশার চিত্র লক্ষ করা যায়। খাবার পানির অভাবে তারা এখন দোকান থেকে পানি কিনে ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া অনেক ভাড়াটিয়া এই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। পানির সংকটের কারণে ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটাই বিপর্যস্ত। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে নারী ও শিশুরা।<br />  <br /> সানজিদা মাহমুদ নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই সমস্যা নিয়ে আমরা অনেক প্রতিবাদ করলেও কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত এর স্থায়ী কোনো সমাধান করেনি। কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান করবে, তা-ও জানা নেই। এদিকে পানির অভাবে আমাদের জীবন এখন কষ্টে জরাজীর্ণ হয়ে উঠেছে। পানির জন্য এখন টানাটানি চলছে। পানি না থাকায় অনেক ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে।’</p> <p>আলমগীর হোসেন নামের নবীগঞ্জ এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘পানির সমস্যা নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নেই। পূর্বে মাঝেমধ্যে পানি পাওয়া গেলেও অধিকাংশ সময় আমাদের এলাকায় পানি পাওয়া যায় না।’<br />   <br /> ঠিকমতো পানি সরবরাহ করবে না কেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাছে জানতে চেয়ে ব্যবসায়ী শাহীন মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় একটা পানির পাম্পের ব্যবস্থা করে দিলে এই সমস্যা আর থাকে না। কাউন্সিলররা শুধু আমাদের আশ্বাস দেন পাম্প স্থাপন করে দেবেন। কিন্তু পরে আর তাদের খোঁজ পাওয়া যায় না। সুপেয় পানির জন্য আমাদের এখন শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্ভরশীল হতে হয়েছে। নদীর পানি দূষিত হওয়ায় নদী থেকে পানি এনে ফিটকারি দিয়ে ও পানি ফুটিয়ে আমাদের ব্যবহার করতে হচ্ছে। একদিকে তীব্র গরম আবার অন্যদিকে পানির সংকট। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। অথচ আমাদের কাছ থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) লোকজন নিয়মিত পানির বিল আদায় করেন। আবার বিল না দিলে জরিমানা করা হয়।’</p> <p>এ বিষয়ে নাসিক ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।<br />  <br /> নাসিক ২২, ২৩ ও ২৪ নম্বর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শাওন অংকন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমার ওয়ার্ডটিতে পানির সমস্যা রয়েছে। এর আগে সাবেক মেয়র আইভীকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল স্থায়ী সমাধানের জন্য। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন সুপেয় পানি সমস্যা সমাধানের। কিন্তু বর্তমানে তিনি না থাকলেও আমরা বর্তমান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি আমার ওয়ার্ডটিতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার। আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’</p> <p><br /> নাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘বন্দরের কয়েকটি জায়গাতেই সুপেয় পানির সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এ রকম মাঝেমধ্যে হয়ে থাকে। আমরা এই সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে সাময়িকভাবে তাদের সমস্যার সমাধানের জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’</p>