<p>চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ জোনের সাবেক উপকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী, কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি এস এম ওবায়েদুল হক, বাকলিয়া থানার সাবেক ওসি আফতাব উদ্দিনসহ ২১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করা করা হয়েছে।</p> <p>বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেনের আদালতে আবেদনটি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার নাজমুল হোসেন নামের এক শিক্ষার্থীর বড় ভাই মো. নজরুল ইসলাম। </p> <p>বাদীর আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ কালের কণ্ঠকে বলেন, আদালত মামলার বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)-কে থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে এজাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। সিআইডিকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে ভিকটিম নাজমুল হোসেন, মামলার বাদী মো. নজরুল ইসলাম ও তার পরিবারকে নিরাপত্তা কেন দেওয়া হবে না, তা ১৪ দিনের মধ্যে জানাতে আসামিদের নির্দেশ দেন।</p> <p>মামলার বাকি অভিযুক্তরা হলেন কোতোয়ালি থানার প্যাট্রল ইন্সপেক্টর (ট্রাফিক) মো. মিজানুর রহমান, তার মুন্সি কনস্টেবল শাহজাহান, এসআই মো. মেহেদী হাসান, রুবেল মজুমদার, রণেশ বড়ুয়া, গৌতম, কনস্টেবল কামাল, বাকলিয়া থানার এসআই আবদুস সালাম, মো. মিজান এবং বাকলিয়া থানার ওসির দেহরক্ষী কনস্টেবল মো. ইলিয়াছসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৭ থেকে ৮ জন পুলিশ সদস্য।</p> <p>মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, নির্যাতনের শিকার নাজমুল হোসেন সরকারি সিটি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গত ১৮ জুলাই বন্ধুদের সঙ্গে নাজমুল হোসেন বাকলিয়া থানার নতুন ব্রিজ এলাকায় যান। পরে পুলিশ ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অতর্কিতভাবে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে সুস্থ অবস্থায় নাজমুলকে আটক করে শারীরিক আঘাত করতে করতে নতুন ব্রিজ পুলিশ বক্সে নিয়ে যায়।  </p> <p>এরপর তাকে ছাত্রশিবির বলে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে আসামিরা। ভিকিটম নিজেকে শিবির নয় বললে, পুলিশ সদস্যরা লোহার স্টিক, বক্সে থাকা স্ট্যাম্প দিয়ে ভিকটিমকে বেধড়কভাবে সারা শরীরে পেটাতে থাকে। পরে নাজমুলকে পুলিশের একটি গাড়িতে করে প্রথমে চান্দগাঁও এবং আধা ঘণ্টা পর কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়। গাড়ি থেকে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনজন এসআই ও একজন কনস্টেবল ‘শিবির আনা হয়েছে’ এবং ‘আন্দোলন করো মজা বুঝবে’ বলে উল্লাস করে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে।</p> <p>পরে থানার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে ‘মজা কী এখনই বুঝবে’ বলে উল্লাস করে নাজমুলের দুই হাত ওপরে তুলে দেয়ালমুখী করে দাঁড় করিয়ে কাঠের স্ট্যাম্প এবং পুলিশের ব্যবহৃত লোহার লাঠি দিয়ে পিঠ, কোমর ও দুই ঊরুতে বেদম মারধর করে। ওই সময় কোতোয়ালি জোনের এসি অতনু চক্রবর্তী এবং থানার সাবেক ওসি ওবায়েদুল হক ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে চেক করতে থাকেন। ওসি মোবাইল ফোনে কিছু না পেয়ে নাজমুলকে শিবির করে কিনা জিজ্ঞাসা করেন এবং শিবির বলে স্বীকার করতে বলেন। ভিকিটিম কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় বললে ভিকিটিমর বুকে লাথি মেরে ফ্লোরে ফেলে দেন আসামিরা। ফেলে দুটি কাঠের স্ট্যাম্প দিয়ে নাজমুলের দুই হাতের দুই বাহুর ওপর রেখে ওই স্ট্যাম্পের ওপর দুজন করে দুই পাশে দাঁড়ান। </p> <p>এই সময় ভিকটিমকে মারধর করলে তার ডান হাতের কবজি, সারা শরীর, পিঠে , কোমরে, গালে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাদের মারধরের এক পর্যায়ে ওই কলেজছাত্র জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু মেডিক্যালে না নিয়ে তাকে আবারও কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়। ওই দিন বিকেলে বাকলিয়া থানার টহল পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। </p> <p>এদিকে নাজমুলের বড় ভাই নজরুল খবর পেয়ে বাকলিয়া থানায় যান। রাত ১১টার দিকে কলেজছাত্র নাজমুলের অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা করানো হয়। পরে ১৯ জুলাই চিকিৎসাধীন নাজমুলকে ৮ নম্বর আসামি করে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়। যে মামলায় ১৪ দিন কারাগারে থাকার পর আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দেন।</p> <p>মামলায় বলা হয়, আসামিদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ভিকটিম দীর্ঘ দেড় মাসের সময ধরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ছাড়া মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড।</p>