<p>জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল এলাকায় যমুনা নদীর ভাঙন এখনো থামেনি। গত এক বছরে বিলীন হয়েছে পাঁচ শতাধিক বসত-বাড়িসহ প্রায় সাড়ে ৬০০ বিঘা ফসলি জমি। বর্তমানে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, কবরস্থান, আশ্রয়ণের ঘরসহ বসতবাড়ি।</p> <p>এদিকে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিওব্যাগ ফেললেও কাজে আসছে না। একদিকে ভাঙন প্রতিরোধে ফেলা হচ্ছে জিওব্যাগ, অন্যদিকে চলছে আবারও ভাঙন। এতে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে নদী পাড়ের মানুষের।</p> <p>সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনের হুমকিতে থাকা বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে মানুষ। বসতবাড়ির ভিটা ও ফসলি জমি নদীতে ভাঙছে। পাড় ভেঙে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের কাছে চলে এসেছে। আর মাত্র ১০ ফুট জমি ভাঙলেই পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের খুঁটি ভেঙে পড়বে। নদীতে পানি স্রোত বেড়েছে। সেই সঙ্গে দ্রুত গতিতে ভাঙছে জমি।</p> <p>নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, যমুনার ভাঙনে এক বছরে প্রায় পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙেছে। জমি ভেঙেছে প্রায় ৬০০ বিঘা। গত কয়েক বছর ধরেই চলছে ভাঙন। কখনো তীব্র আকারে শুরু হয় ভাঙন, কখনো কিছুটা কম। গত কয়েক বছরের মধ্যে কখনো ভাঙন একেবারে থামেনি। হঠাৎ করেই গত এক সপ্তাহ আগে থেকে তীব্র আকারে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে জিওব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙন বন্ধ হচ্ছে না। বর্তমানে ভাঙনের হুমকিতে হিদাগাড়ী এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিক, আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক ঘরসহ কবরস্থান ও পাকা মসজিদ। ভাঙন এলাকা থেকে ১০০ গজ দূরে এসব স্থাপনা।</p> <p>স্থানীয় কৃষক তোতা মিয়া জানান, গত কয়েকদিনে যমুনার পানি কিছুটা বেড়েছে। পানি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়া নদীতে স্রোত বেড়েছে। নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়া ভাঙন বেড়েছে। ভাঙনের হুমকিতে থাকা অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। প্রতিনিয়তই চোখের সামনে ভেঙে যাচ্ছে আবাদি জমি।</p> <p>কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘আমার প্রায় ৬ বিঘা জমি নদীতে ভেঙে গেছে। আমরা কৃষক মানুষ, জমিজমা আবাদ করে আমাদের জীবন চলে। এভাবে নদীতে ভেঙে গেলে আমরা জীবন বাঁচব কী দিয়ে? আমার মতো অনেক মানুষের জমি ভেঙে গেছে। এই এলাকার সবাই কৃষক। সবাই জমি চাষাবাদ করে সংসার চালায়।‌ ভাঙন বন্ধ না হইলে তো যেটুকু জমি আছে সেটুকু কয়েক মাস পরে মনে হয় ভেঙে যাবে। আমরা জীবন বাঁচাব কি দিয়ে এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’</p> <p>পাকরুল এলাকার আব্দুল সামাদ বলেন, ‘যমুনা নদী এই এলাকার মানুষদের সর্বহারা করেছে। জমিজমা, বসতবাড়ি, গাছপালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসাসহ অনেক কিছুই ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। পাকরুল গ্রাম প্রায় অর্ধেক নদীতে ভেঙে গেছে। মানুষের বসতভিটা হারানো যে কতটা কষ্ট, যার হারিয়ে যায় সে শুধুমাত্র বুঝে। আমি বুঝেছি জমিজমা বসতবাড়ি হারানো কতটা কষ্ট। গত এক সপ্তাহ ধরে আবার বেশি ভাঙতে শুরু করেছে। আমাদের দাবি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে ভাঙন প্রতিরোধ করা। ভাঙন প্রতিরোধ না হলে এ এলাকার সবাই সর্বহারা হয়ে যাবে।’</p> <p>চরপাকেরদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুল আলম বলেন, ‘নদীর ভাঙনে অনেকেই বসতবাড়ি, ফসলি জমিজমাসহ সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে। ভাঙন প্রতিরোধে আমাদের সবার দাবি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা।’</p> <p>পাউবো জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাদারগঞ্জে যমুনা নদীর বাম তীরে ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। তবে ভাঙন প্রতিরোধ হচ্ছে না। ১৫০০ মিটার অংশে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার পর বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকার নদী ভাঙন প্রতিরোধ হবে।’</p>