<p>ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে শিয়ালের কামড়ে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের নাউড়ি, ইকুরিয়াকান্দা, নওপাড়া ও শ্রীরামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। </p> <p>আহত নারী, শিশুসহ সবাই ময়মনসিংহ সংক্রামক ব্যাধি এসকে হাসপাতালে জলাতঙ্ক টিকা নিয়েছে। এভাবে বেশ কয়েক সপ্তাহ টিকা নিতে হবে আহতদের।<br />  <br /> শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ওই চারটি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানুষ শিয়ালের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। জুমার নামাজে হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে মসজিদে আসছেন মুসল্লিরা। </p> <p>স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন বিকেলের আগেই সব কাজ শেষ করে তারা ঘরে ফিরে রাতে বের হচ্ছে না। আক্রমণ থেকে গবাদি পশুও রক্ষা পায়নি। </p> <p>লোকজন জানায়, ১৮ সেপ্টেম্বরের পর থেকে শিয়ালের আক্রমণ শুরু হলেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। গত এক সপ্তাহে নাউড়ি গ্রামের ১৫ জন, নয়াপাড়া গ্রামের সাতজন, শ্রীরামপুর গ্রামের সাতজন এবং ইকুরিয়াকান্দায় আটজনকে আক্রমণ করেছে শিয়াল।</p> <p>বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে যাওয়ার সময় আক্রমণের শিকার হয় তুরাগ (১৪) নামের এক স্কুল ছাত্র। এ অবস্থায় আতঙ্কে রয়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে ময়মনসিংহ জেলা শহরের অবস্থিত সংক্রমণি ব্যাধি এসকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবারের লোকজন।</p> <p>নাউড়ি ইকুরিয়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক টিপু সুলতান জানান, শিয়ালের আক্রমণে আতঙ্কে স্কুলে শিক্ষার্থী কমে গেছে।</p> <p>নাউড়ি গ্রামের ফরিদা নামের এক গৃহিণী বুধবার দিনের বেলায় এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার সময় শিয়ালের আক্রমণের শিকার হন। এতে তার মুখ ও ঘাড়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরে বাড়িতেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিলে রাতে প্রচণ্ড জ্বর হলে ময়মনসিংহ জেলা শহরেরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।</p> <p>বৃহস্পতিবার শিয়ালের আক্রমনের শিকার হয়েছেন নওপাড়া গ্রামের আব্দুস সালাম (৫০)। তিনি বলেন, ‘ওই দিন সকালে একটি শিয়াল আমার বাড়ির গোয়াল ঘরে হানা দেয়। পরে আমি গরু বাঁচাতে গেলে শিয়াল আমার ওপর আক্রমণ করে। এতে আমার হাতে কামড় দেয়।’ </p> <p>শ্রীরামপুর গ্রামের মাইজ উদ্দিন বলেন, শনিবার রাতে মসজিদে নামাজ পড়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটি শিয়াল এসে আমার ডান হাতে কামড় দেয়।</p> <p>নাউড়ি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মোতালেব আকন্দ বলেন, এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০ জনকে কামড় দিয়েছে শিয়াল। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে চারটি গ্রামে শিয়ালের আক্রমন শুরু হয়। তাদের মধ্যে নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধ আছে। </p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এখানে যেমন শস্য খেত আছে তেমনি আছে অনেক ঝোপঝাড়। কয়েক দশক ধরে এ এলাকায় প্রচুর শিয়ালের আনাগোনা রয়েছে কিন্তু কখনো কামড়ায়নি। এখন শিয়ালগুলো কেনো আক্রমণত্মাক হয়ে পড়ছে বুঝতে পারছি না।’</p> <p>এ ব্যাপারে স্থানীয় মগটুলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শিহাব উদ্দিন আকন্দ জানান, খবর পেয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করবে।</p> <p>ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, শিয়াল সাধারণত দুই কারণে আক্রমণ করে। পর্যাপ্ত খাবার না পেলে বা আক্রমণের শিকার হলে এবং র‌্যাবিস আক্রান্ত হলে। </p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘পাগলা শিয়াল কামড়ালে তাকে জায়গাটা পরিষ্কার করতে হবে এবং ডাক্তারের কাছে গিয়ে জলাতঙ্ক টিকা নিতে হবে। তবে এটা বনবিভাগের কাজ। গৃহপালিত পশু ছাড়া আমারা শিয়াল নিয়ে কাজ করি না।’</p>