<p>‘নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি নেই। বাড়ি-ঘরও নেই বললেই চলে। পৌরসভার জায়গার ওপর তোলা খুপরি ঘরেই আমাদের বসবাস। অর্থের অভাবে পড়াশোনা শিখতে পারিনি। দুই বোন, এক ভাইকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তা করতেন দরিদ্র মা- বাবা। এমন পরিস্থিতিতে কখনো ভাবিনি, এত ধুমধামে আমার বিয়ে হবে। তবে এই আয়োজন দেখে বুঝলাম, যাদের কেউ নেই, তাদের জন্য আল্লাহ আছে।’ শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের ধুনট মোড় এলাকায় আয়োজিত বিয়ের আসরে কথাগুলো বলেন কনে মোছা. আঁখি আক্তার। </p> <p>উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের রহমতপুরের বাসিন্দা আকরাম হোসেন ও মঞ্জুয়ারা বেগমের মেয়ে আঁখি। বর ওমর ফারুক একই ইউনিয়নের মামুরশাহী গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী ও পারুল বেগমের ছেলে। </p> <p>শেরপুর-ধুনট বন্দর মোটর শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী জমকালো আয়োজনে ওই বিয়ে দেওয়া হয়। আলোকসজ্জা, তোরণ, কনে ও বরের মঞ্চ, কনে সাজানোর জন্য বিউটিশিয়ান, ভিডিও ধারণ কোনো কিছুরই কমতি ছিল না এই অনুষ্ঠানে। বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন প্রায় পাঁচ শতাধিক।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আকরাম হোসেনের পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। তার স্ত্রী ছাড়াও দুই মেয়ে  ও এক ছেলে রয়েছে সংসারে। এর মধ্যে বেশ কিছুদিন আগেই বড় মেয়ের বিয়ে হয়। অভাব-অনটনের কারণে আঁখি আক্তারের বিয়ে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় ছিল ওই পরিবারটি। </p> <p>এক পর্যায়ে বিষয়টি জানতে পারেন শেরপুর-ধুনট বন্দর মোটর শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার উপদেষ্টা ও নেতারা। এরপর আকরাম হোসেনকে মেয়ের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে বলেন তারা।</p> <p>বিয়ের মধ্যস্থতাকারী আবু হানিফ বলেন, সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিয়ের যাবতীয় খরচসহ সব আয়োজন করা হয়েছে। এমনকি স্বর্ণালংকার দিয়ে বর-কনে সাজানো ও সংসারে প্রয়োজনীয় যাবতীয় সামগ্রী, আসবাব উপহার দেওয়া হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে সংস্থাটির উপদেষ্টা শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র জানে আলম খোকা ও শ্রমিক নেতা আরিফুর রহমান মিলনের প্রচেষ্টার কারণে। দুই দিনব্যাপী বিয়ের আয়োজনের প্রথম দিনে (বৃহস্পতিবার) করা হয় গায়েহলুদ অনুষ্ঠান।</p> <p>শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের ধুনট মোড়ে সংস্থাটির কার্যালয়ে বিয়ের আয়োজন চলছে। পাশেই অতিথিদের জন্য চলছে রান্নাবান্না। একটি কক্ষে দেখা যায়, কনেকে সাজানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন বিউটিশিয়ান। বরের জন্যও প্রস্তুত মঞ্চ। </p> <p>আঁখির বাবা আকরাম হোসেন জানান, কখনো ভাবেননি, তার মেয়ের এত বড় আয়োজনে বিয়ে হবে। এ জন্য শ্রমিক সংস্থাটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।</p> <p>সমাজের গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেরপুর-ধুনট বন্দর মোটর শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার উপদেষ্টা জানে আলম খোকা ও আরিফুর রহমান মিলন বলেন, স্থানীয় অনেকেই এই মহতি কাজে সহযোগিতা দিয়েছে। তাই নবদম্পতির হাতে স্বর্ণলংকার, শোকেস, আলমারি, ড্রেসিং টেবিলসহ নগদ টাকাও তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এ ধরনের কাজ অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।</p>