<p style="text-align:justify">সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমজীবী শিশুদের (১৪ থেকে ১৭ বছর) গত এক মাস ধরে বিনামূল্যে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল ও সনদ অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ‘উত্তরণ’। যে সকল ছেলেমেয়েরা বিপজ্জনক শ্রমের সঙ্গে জড়িত, তারা এখন পড়াশোনার পাশাপাশি ইলেকট্রনিকস ও মোবাইলফোন সার্ভিসিং, ইলেকট্রিক হাউজ ওয়্যারিং, ডিজেল-পেট্রোল ইঞ্জিন মেকানিক এবং সুইং মেশিন অপারেশন ও টেইলরিং বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। </p> <p style="text-align:justify">ইতোমধ্য দু’শতাধিক শ্রমজীবী শিশু কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন আয়বর্ধকমূলক কাজ করছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের শিশুরা উত্তরণের বাস্তবায়নে এবং এডুকো বাংলাদেশ-এর অর্থায়নে এই প্রশিক্ষণের সুযোগ পায়।</p> <p style="text-align:justify">উত্তরণের শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমা আক্তার বলেন, শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী ও গাবুরা ইউনিয়নের চার গ্রামে ৪টি ব্রিজ স্কুল পরিচালনা করা হচ্ছে। এই ব্রিজ স্কুলগুলোতে ৩৫০ জন শ্রমজীবী শিশুকে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই শিশুরা নিয়মিত ব্রিজ স্কুলে এসে লেখাপড়া করছে এবং এরমধ্যে ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী দু’শতাধিক ছেলে-মেয়ে মোবাইল ফোন সার্ভিসিং,ইলেকট্রিক হাউজ ওয়্যারিং, ডিজেল পেট্রোল ইঞ্জিন ম্যাকানিক এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুইং মেশিন অপারেশন ও টেইলরিং বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, শ্রমজীবী এসব ছেলে-মেয়েদের বিনা খরচে প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ ও চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হ্রাস করা বিশেষ করে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মৎস্যখাতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিযুক্ত শিশুদের সুরক্ষা দেয়া এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।</p> <p style="text-align:justify">প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে কাশিমাড়ী গ্রামের হুচাইন আলী জানায়, সে ইলেকট্রিক হাউজ ওয়্যারিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ চলাকালীন অবসর সময়ে প্রশিক্ষণের অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে সে আয় করা শুরু করে। বর্তমানে সে নিয়মিত কাজ করে মাসে প্রায় ২ হাজার থেকে ২৫শ টাকা আয় করছে।</p> <p style="text-align:justify">সে আরো জানায়, তার মতো এলাকার আরও ৬ জন ইলেকট্রিক হাউজ ওয়্যারিং এবং ৫ জন সেলাই মেশিন ক্রয় করে টেইলরিংয়ের কাজ করছে।</p> <p style="text-align:justify">প্রশিক্ষকরা বলেন, এখান থেকে প্রশিক্ষণ ও সনদ নিয়ে কেউ বেকার থাকবে না। এ সনদটি একজন কর্মীকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবে। সনদধারীরা এ সনদ দেখিয়ে দেশ-বিদেশে খুব সহজেই ভালো চাকরি করতে পারবেন। এছাড়া এ প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজে উদ্যোগী হয়েও বিভিন্ন ব্যবসাসহ আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজ করতে সক্ষম হবে।</p> <p style="text-align:justify">শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এনামুল হক জানান, মূলত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত স্কুলবহির্ভূত শিশুদের শিক্ষার মূলস্রোতে আনার জন্যই এ ব্যবস্থা। এটি দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া উপকূলীয় এলাকায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল সার্ভিসিং প্রশিক্ষণ একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে মনে করেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডা. সঞ্জীব দাশ বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে এ সকল কার্যক্রমে এলাকার শ্রমজীবী ছেলে-মেয়েরা উপকৃত হচ্ছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল সার্ভিসিং এবং সুইং মেশিন ও টেইলরিং প্রশিক্ষণ এলাকার শ্রমজীবী ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।</p>