<p style="text-align:justify">ঝিনাইদহ জেলা সদর হাসপাতালে কাগজে-কলমে আছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। মাঝে মাঝে মেডিক্যাল অফিসারদের সঙ্গে তারা ওয়ার্ডে রাউন্ড দেন। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে রোগীরা ঠিকমতো তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। বাস্তবে তারা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন না। </p> <p style="text-align:justify">রোগী ও স্বজনদের দাবি, এসব চিকিৎসকদের নজর বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে। সেখানে নিয়মিত রোগীদের সময় দেন। সমস্যা নিয়ে সকল কথা বলা যায়। তাই সরকারি হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসাররাই রোগীদের ভরসা হয়ে উঠেছে।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, ২০২১ সালে জেলা সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নতিকরণ করা হয়। এ হাসপাতালে কনসালটেন্ট, জুনিয়র কনসালটেন্ট, সার্জন ও মেডিক্যাল অফিসারের ৬৩ পদের মধ্যে ৪১ জন কর্মরত রয়েছেন। চিকিৎসকদের পাশাপাশি রোগীদের সেবায় হাসপাতালে ৯১ জন নার্স ও ৭০ জন শিক্ষানবিশ নার্স নিয়োজিত রয়েছেন। হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও প্রতিদিন ধারণ ক্ষমতার দেড় থেকে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসা নেন দেড় সহস্রাধিক রোগী।</p> <p style="text-align:justify">অভিযোগ উঠেছে, সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় রয়েছে নানা অনিয়ম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা শুধুমাত্র কাগজে-কলমে দায়িত্ব পালন করছেন। মাঝে মাঝে ওয়ার্ড রাউন্ডে গেলেও ব্যস্ততার কারণে রোগীরা ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না তাদের সঙ্গে। তাদের অনিয়মের কারণে রোগীরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই অনেকেই সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চলে যেতে বাধ্য হন। এতে করে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত ব্যবসা আরো বেড়ে যায়।</p> <p style="text-align:justify">হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও স্বজনেরা জানান, ‘ক্লিনিক ব্যবসা জমজমাট করার জন্য চিকিৎসকেরা সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে নিয়মিত অবহেলা করে যাচ্ছেন। হাসপাতালে নতুন রোগী দেখলেই এগিয়ে আসেন ওয়ার্ডবয়, আয়া ও ঝাঁড়ুদারেরা। রোগীর স্বজনদের হাতে চিকিৎসা সামগ্রী কেনার স্লিপ ধরিয়ে দেন তারা। এরপর ইনজেকশন সিরিঞ্জ, স্যালাইন ও সুই-সুতো নিয়ে তারাই শুরু করেন চিকিৎসা। আবার ক্যানোলা, ইউরিন ব্যাগ, খাদ্য গ্রহণের পাইপ লাগানো এসব কাজও করেন তারা। আর এ সকল কাজের জন্য তাদের দিতে হয় টাকা।’</p> <p style="text-align:justify">শৈলকুপার রানীনগর গ্রামের মসলেম মণ্ডল বলেন, ‘আমার মেয়ের পেটে ব্যথার জন্য মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করেছিলাম। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরে তাকে ভর্তি করি। ভর্তির দুই ঘণ্টা পর একজন মেডিক্যাল অফিসার এসে কয়েকটি টেস্টের নাম লিখে দিয়ে চলে যান। দ্রুত টেস্টগুলো করাতে বলেন তিনি। এরপর ১৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোনো চিকিৎসক রিপোর্ট দেখতে আসেননি।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বিশেষ করে ভর্তির পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখা পাওয়া যায় না। মেডিক্যাল অফিসার ও নার্সদের ওপর নির্ভর করছে হাসপাতালের চিকিৎসা।’</p> <p style="text-align:justify">সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি জহুরুল ইসলাম নামের এক রোগী বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে মুখের দিকে না তাকিয়েই ওষুধ লিখে দিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে একটা রোগীর জন্য ৩০ সেকেন্ড সময়ও দেন না তিনি। আবার ওই চিকিৎসককে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৬০০ টাকা ফি দিয়ে দেখালে আধা ঘণ্টা সময় দিয়ে দেখছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা হাসপাতালের পরিবর্তে এখন ডায়াগনস্টিক-ক্লিনিকে বেশি সময় দিচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক মেডিক্যাল অফিসার বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক পদে ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের চেইন অব কমান্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে। চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মচারীরা যে যা ইচ্ছা, সে তাই করে চলেছেন। সঠিকভাবে তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা না থাকায় হাসপাতালে দিন দিন অনিয়ম বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক স্যার ছুটি নিয়ে হাসপাতালের বাইরে থাকলেও এসব বন্ধ হয়নি।’</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনোয়ারুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি সরেজমিন তার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।</p> <p style="text-align:justify">তবে জেলা সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারবেন।</p>