<p>হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে একাধিকবার গিয়েছেন হাসপাতালে, ছিলেন নিবিড় পর্যবেক্ষণেও। হার্টে রিং বসানোর কথা থাকলেও বসাননি এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত কেরানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী সিরাজদিখান উপজেলার গুলগুলিয়ার চরের গ্রামের শমশের আলী। গত ১৪ আগস্ট ভাই-ভাতিজাদের সঙ্গে পারিবারিক কলহের জেরে নিজ বাড়িতে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান শমশের আলী। তবে শমশের আলীর ছেলে-মেয়েদের দাবি তার বাবাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। বাবাকে হত্যার অভিযোগে আপন চাচা, চাচাত ভাইসহ ১১ জনকে আসামি করে মামলাও করেছেন আদালতে। তবে এলাকাবাসী বলছে ভিন্ন কথা!</p> <p>প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট সকালে ভাই হত্যা মামলার আসামি বড় ভাই আলমাস তার ছেলে ও ভাতিজারা মিলে ছোট ভাই শমশের আলীর বাড়িতে গিয়ে নিজেদের ক্রয় করা জমির হিসাব চায়। এসময় দুই ভাই ও ভাতিজাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে ছোট ভাই শমশের আলী ক্ষুব্ধ হয়ে লাঠি আনতে ঘরে ঢুকে বেড় হওয়ার সময় স্ত্রী সন্তানের বাধার মুখে দরজার সামনেই হেলে পড়ে যায়। পরবর্তীতে সন্তান ও ভাতিজারা মিলে প্রথমে পার্শ্ববর্তী আব্দুল্লাহপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দা, স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেদিন আসলে কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি। হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন শমশের আলী।</p> <p>স্থানীয় দোকানদার মিন্নত আলী বলেন, আমি দোকানেই বসা ছিলাম, শমশের আলীর ভাই, ভাতিজারা আমার দোকানের সামনে দিয়েই তার বাড়িতে যায়। যাওয়ার এক মিনিটের মাথায় নিহত শমশের আলী ছেলে ও ভাতিজা জানায় তিনি স্ট্রোক করেছেন।</p> <p>মামলা সাক্ষী ও প্রতিবেশী জালালুদ্দিন বলেন, বাড়িতে কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি। এমনকি কারো হাতে লাঠিও ছিল না। আরেক সাক্ষী নুরুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না, তবে লোক মুখে শুনেছি সেখানে কোনো হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি, তিনি হৃদরোগে মারা গেছেন। মামলার অপর সাক্ষী আব্দুল কাদির জিলানীও বলেন, তিনি মারামারির কোনো ঘটনা দেখেননি। তিনি যে মামলার সাক্ষী হয়েছেন তাও তিনি জানেন না বলে জানান।</p> <p>মামলার হুকুমের আসামি ও নিহতের বড় ভাই আলমাস বলেন, যে ভাইকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি, কামাই করে মাদরাসায় পড়িয়েছি তাকে আমি কি মেরে ফেলতে পাড়ি? আমার কি কষ্ট হচ্ছে না ভাইয়ের মৃত্যুতে? আমার ভাতিজারা সম্পদের জন্য এমন মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের কষ্ট দিচ্ছেন, মানহানি করছে। আমি সঠিক বিচার চাই।</p> <p>নিহতের মেয়ে সুমিতা জানান, লিয়াকত আলী, বিল্লাল, ইয়াছিন, আলমাসসহ অনেকে বাড়িতে এসে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আমার বাবাকে হত্যা করেছে। আর নিহতের ছেলে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রচারের কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন।</p> <p>এ ব্যাপারে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেহেতু ঘটনাটি আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগের ঘটনা তাই বিস্তারিত জেনে বলতে পারব, তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে বোঝা যাবে হত্যা না স্বভাবিক মৃত্যু।</p>