<p>ঋণ দেওয়ার নাম করে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে ‘সিডার ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি’ নামের একটি এনজিও। রবিবার (৬ অক্টোবর) মেহেরপুরের দিঘীর পাড়া এলাকায় এনজিওটির অফিসে ঋণ নিতে গিয়ে গ্রাহকরা দেখেন, অফিস গুটিয়ে পালিয়েছেন এনজিওর কর্মকর্তারা। </p> <p>মেহেরপুর সদর উপজেলার মদনা, গোপালপুর, শ্যামপুরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রাহক সংগ্রহ করে ঋণ দেওয়ার নামে ১০ শতাংশ করে জামানত সংগ্রহ করে সংস্থাটি। এনজিও সংস্থার মেহেরপুর শাখার ম্যানেজার হিসেবে গ্রাহকদের কাছে আশরাফুল আলম নামের জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান করেন। এমন প্রতারণা শিকার হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ।</p> <p>স্থানীয় সূত্র জানায়, সপ্তাহ খানেক আগে আব্দুল মতিন নামের একজনের কাছে থেকে বাড়ি ভাড়া নিয়ে অফিসের সাইনবোর্ড ঝুলান তারা। হঠাৎ দুই একদিন আসা যাওয়া করেন তারা। রবিবার গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার দিনে তারা আসবাবপত্র নিয়ে উধাও হয়েছেন। তবে তাদের কখনো কেউ দেখতে পাননি বলে জানান এলাকাবাসী। পরে বাড়ির মালিক এনজিও সাইনবোর্ডটি খুলে দেন।</p> <p>এনজিওটির সদস্য নতুন মদনাডাঙ্গা গ্রামের সীমা খাতুন জানান, তিন লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে তার কাছে থেকে ১৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। রবিবার তার ঋণের তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা কিন্তু সকালে অফিসে এসে দেখতে পান অফিসে কেউ নেই। আসবাবপত্রও নেই।</p> <p>তিনি আরো বলেন, তার স্বামীকে গোপন করে এই টাকা দিয়েছেন তিনি। তার স্বামী জানতে পারলে তাকে বাড়িতে উঠতে দেবে না। এখন পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।</p> <p>একই গ্রামের হেলাল জানান, তার সঙ্গেও তিন লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার কথা বলে ১৮ হাজার টাকা নিয়েছে এনজিও কর্মকর্তারা।</p> <p>নাজমা খাতুন, হাফিজুল ইসলামসহ মদনাডাঙ্গা গ্রাম থেকে ৯ জন দিয়েছেন ১ লাখ টাকা। এসময় তাদের কাছে সংস্থাটি পাসবই দেয় বলে জানান তারা।</p> <p>কুতুবপুর গ্রামের সাজেদা খাতুন দিয়েছেন ১০ হাজার টাকা, মর্জিনা খাতুন পাঁচ হাজার টাকা, হিরা খাতুন সাত হাজার টাকা, আনোয়ার হোসেন সাত হাজার টাকা, শ্যামপুরের ভ্যান চালক মাসুম হোসেন দিয়েছেন ১২ হাজার টাকা। অফিস উধাওয়ের খবর পেয়ে তারাও ছুটে আসেন অফিসে।</p> <p>এ ছাড়া সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে গ্রাহকরা এসে অফিসে কাউকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং সেখানে অবস্থান নেন।</p> <p>মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রাহকদের শান্ত করে। এনজিও কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া কথা বলে তারা। </p> <p>জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী কাদের ফজলে রাব্বী বলেন, সিডার নামের কোনো এনজিওর অনুমোদন মেহেরপুরে নেই। প্রতারকরা নাম সর্বস্ব এনজিও খুলে মানুষের কাছে থেকে টাকা নিয়ে উধাও হচ্ছে। এদের থেকে সচেতন থাকতে হবে। তাদের কাছে টাকা দেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের কাগজপত্র যাচাই করে নিতে হবে।</p> <p>জেলা সমবায় অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিডার ফাউন্ডেশন নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন তাদের দপ্তরেও নেই।</p> <p>বাড়ির মালিক আব্দুল মতিন জানান, কয়েক দিন আগে সিডার এনজিও সংস্থার মেহেরপুর শাখার ম্যানেজার হিসেবে আশরাফুল আলম নামের একজন ১৪ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া চুক্তিতে বাসা ভাড়া নেন। ১০ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও ম্যানেজারের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।</p>