<p>বরগুনার বেতাগীতে রাতের আঁধারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রেস ক্লাবের ভবন। লুট করে নেওয়া হয়েছে ইট, ‍সুরকি ও রড। অভিযোগের তীর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপূল সিকদারের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন ও বরগুনা জেলা প্রশাসক এবং ইউএনওর কাছে এর প্রতিকার চাওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে মানববন্ধন করেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।</p> <p>জানা গেছে, গত শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতের আঁধারে শারদীয় দুর্গোৎসবের জাতীয় বন্ধের সময় বেতাগী পৌর শহরস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন বেতাগী প্রেস ক্লাবের ভবন গুড়িয়ে তার ইট, সুরকি ও রড লুটে নেওয়া হয়। এতে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অপূরণীয় এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠার নয়।</p> <p>এর প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ঝড় উঠে। এ ঘটনার পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপূল সিকদারের বোধদয় না হওয়ায় এবং তার সঙ্গে একাধিকবার মুঠেফোনসহ নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে না পাওয়ায় অপেক্ষার প্রহরগুনে অবশেষে স্থানীয় সাংবাদিকরাও সোচ্চার হয়। সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলমের সাথে বেতাগী প্রেস ক্লাবের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে এর প্রতিকার দাবি করেন, এ সময় তিনি এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।</p> <p>গতকাল সোমবার সকাল থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপজেলা সহকারী কমিশনারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাক্ষাত মেলেনি। অবশ্য নাম না প্রকাশের শর্তে উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মচারী বলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপূল সিকদারের পদোন্নতি হওয়ায় তিনি শনিবার জাতীয় বন্ধের দিনেও রাত অবধি এ উপজেলায় শেষ কর্মদিবস করে ৬ মাসের প্রশিক্ষণে ঢাকায় চলে যান।</p> <p>এর আগে রবিবার দুপুরে বেতাগী প্রেস ক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয় সভা ডেকে এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন প্রেস ক্লাবের ভঙ্গুর জায়গায় গণমাধ্যম কর্মী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে এবং পরবর্তীতে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় গিয়ে প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা এ অভিযোগ তুলে ধরেন।</p> <p>প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন স্থানীয় সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্যরাও এই মানববন্ধনে অংশ নেয়।</p> <p>তাছাড়াও এ ঘটনায় বরগুনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তফা কাদের, সাধারণ সম্পাদক জাফর হাওলাদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সালে, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর মৃধা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ করেন।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বাজার থেকে স্বাভাবিকভাবে লোকজন চলে যাওয়ার পর ওইদিন রাতে উপজেলা ভূমি অফিসের জনৈক কর্মচারী পাহারায় থেকে দাঁড়িয়ে লোক লাগিয়ে ভারী ভেকু মেশিন দিয়ে প্রেস ক্লাবের ভবন ভেঙে তছনছ করে ফেলে। এ সময় অন্য কোনো মানুষ ছিল না বলে তিনি এর প্রতিবাদ করেননি।</p> <p>স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, ১৯৮৫ সালে বেতাগী প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন সময়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক, থানা নির্বাহী অফিসার,খাদ্য উপমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দেও সহযোগিতায় বেতাগী খাসকাচারি মাঠের পূর্বপাশে জায়গা বাছাই করে। সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে একটি কাঠের ঘর উত্তোলন করে। সেখান থেকেই স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সহায়তা প্রদান বিশেষ করে মহান ভাষা দিবসে সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে সব কর্মসূচি পালন করতেন।</p> <p>এক পর্যায়ে দুই তলা বিশিষ্ট প্রেস ক্লাবের পাকা ভবন নির্মাণ কাজে হাত দেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনকালে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য, বরগুনা জেলা প্রশাসক, থানা নির্বাহী অফিসার, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>বেতাগী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম সিদ্দিকী বলেন, ‘ভবন পাকা করার পরেও তখনকার সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিশ কিংবা কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হয়নি। এটা কি প্রশাসনের বৈধতা প্রদান ও সম্মতির অংশ নয়? তার পরেও যদি প্রশাসনের সরকারি কাজে জমির প্রয়োজন হয় তবে সাংবাদিকদের ডেকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাতের আঁধারে না করে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে যেভাবে ভবনের কাজ শুরু করা হয়েছে সে ভাবেই করা যেত। তা হলে আজ মানুষের মনে কোনো প্রশ্নের তৈরি হত না। এতে করে সাংবাদিক সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আমরা কোনো প্রতিহিংসার শিকার কিনা এ জন্য ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক মালামাল উদ্ধারের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ ও প্রতিকার দাবি করছি।’</p> <p>বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আহমদ এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জানান, তিনি যতটুকু জেনেছেন রাতের আঁধারে নয় বরং বিকেল থেকেই ভবনটি ভাঙা শুরু হয়। এটি অপসারণে রাত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এর পরিত্যাক্ত মালামালগুলো উদ্ধার করে তা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর যা যা করা দরকার এ বিষয়ে তিনি সব কিছুই করবেন।</p>