<p>গর্জনিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ পদের দাবিদার দুজন। যখন বোর্ডের কোনো পরীক্ষা আসে তখন শিক্ষার্থীদের ওই দুজন অধ্যক্ষের কাছেই দৌড়াতে হয়। একজনের হাতে রেজিস্ট্রেশন কার্ড আর অন্যজনের হাতে থাকে পরীক্ষা হলের প্রবেশপত্র! দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলছে ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।</p> <p>মাদরাসাটির অধ্যক্ষের দাবিদার দুজন হলেন ওবায়দুল হালিম ও আবদুল হামিদ। এ দুজনকে ঘিরে মাদরাসার শিক্ষকদের মধ্যেও স্পষ্টতই দুটি গ্রুপ কাজ করছে। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত পৌঁছলেও দৃশ্যমান কোনো সমাধান হয়নি। মাঝখানে শিক্ষার মান ও শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি অধ্যক্ষ পদের এই টানাপড়েনের শিকার হয়ে মাদরাসায় বর্তমানে আলিম প্রথম বর্ষে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি। এই প্রতিষ্ঠান থেকে আগামী ২০২৬ সালের আলিম পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থীই অংশ নিতে পারবে না।</p> <p>এমন সব অভিযোগ তুলে ধরে মাদরাসাটিকে রক্ষার আবেদন জানিয়েছেন মাদরাসার দাতা সদস্য ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। গত শুক্রবার কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরেন মাদরাসাটির প্রাক্তন ছাত্র এবং বর্তমানে চট্টগ্রামের জামেয়া ইসলামিয়া মাদরাসার সুপার জুলফিকার বিন তাহের, প্রাক্তন ছাত্র ও বর্তমানে কক্সবাজার তানযিমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসার শিক্ষক মুফিজুর রহমান। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্ব্বয়ক আতিক উল্লাহ ও মো. রিদুয়ান। বেঁচে থাকা একমাত্র দাতা সদস্য হাজি আবুল কাশেমও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। </p> <p>সংবাদ সম্মেলনের আগে তাঁরা কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের হাতে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।</p> <p>প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মতে, কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গর্জনিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা। ১৯৯৫ সাল থেকে এই মাদরাসায় অধ্যক্ষ নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত হয়। দীর্ঘদিন পার হলেও অধ্যক্ষ সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি। </p> <p>তাঁরা জানান, এখন থেকে প্রায় তিন যুগ আগে মাদরাসার অধ্যক্ষ ওবায়দুল হালিমকে পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে কয়েকজন অধ্যক্ষ নিয়োগ হলেও তাঁর কারণে একজন অধ্যক্ষও দীর্ঘদিন মাদরাসায় টিকতে পারেননি। এরপর আবদুল হামিদকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ওবায়দুল হালিম উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে আবারও মাদরাসার অধ্যক্ষ পদে ফিরে আসেন। </p> <p>এ নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে চলতে থাকে টানাপড়েন। ওবায়দুল হালিম ও আবদুল হালিম দুজনই নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে চেয়ার দখল করে রাখতে চান। তাঁরা নিজেদের পক্ষে পৃথক বাহিনীও তৈরি করেন। সর্বশেষ ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অধ্যক্ষের চেয়ারটিও আরেক দফা দখল হয়। ৭ আগস্ট আবদুল হামিদ অধ্যক্ষের পদ জবরদখল করেছেন।</p> <p>প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি তুলেছেন। নিজেদের প্রাণের প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। </p> <p>তাঁদের দাবি, অধ্যক্ষের দাবিদার দুজনকেই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী প্রভাষক সাইফুল ইসলামকেও পদত্যাগ করে আগের দায়িত্বে ফিরে যেতে হবে। নিরপেক্ষ একজন অধ্যক্ষ নিয়োগ করতে হবে।</p>