<p style="text-align:justify">নরসিংদীর রায়পুরায় মেঘনা নদীতে অবৈধ চুম্বক ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারণে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে বিলীন হয়েছে উপজেলা সাহারখোলা ও আব্দুল্লাহচরের ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার বাঁধসহ জমি। ভাঙন দেখতে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দাদের নদীপাড়ে জড়ো হতে দেখা গেছে।</p> <p style="text-align:justify">বালুমহালের নির্ধারিত এক কিলোমিটারের বাইরে গিয়ে মেঘনার বিভিন্ন স্থান থেকে বালু তোলার কারণে ভাঙন তৈরি হয়েছে বলে জানান জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।</p> <p style="text-align:justify">পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৫ এপ্রিল উপজেলার কাতলার চর মৌজার দক্ষিণ পাশে এক কিলোমিটার চর ড্রেজিংয়ের ইজারা পান আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ হোসেন সরকার। চর ড্রেজিংয়ের নামে তার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আশরাফ হোসেন ট্রেডার্স মেঘনা থেকে বালু তোলার মহাৎসবে মেতেছে। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ে মেঘনায় রাজত্ব চালাচ্ছেন তিনি। শত শত অবৈধ চুম্বক ড্রেজার ও বাল্কহেড দিয়ে বালু তোলার কারণে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু হয় ভাঙন। যা বুধবারও অব্যাহত রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এতে সাহারখোলা ও আব্দুল্লাহচরের ৫০০-৬০০ মিটার অংশ বিলীন হয়ে গেছে। বালুমহালের সীমানা ছড়িয়ে নদীজুড়ে বালু তোলা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। তবে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা। ভাঙনরোধ ও বালু তোলা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মেঘনাপাড়ের বাসিন্দারা।</p> <p style="text-align:justify">সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তারা জানান, ভাঙনে বিলীন হওয়া জমির মালিক দেশের একটি শিল্পগোষ্ঠী। পাশের মেঘনা নদী থেকে চুম্বক ড্রেজার দিয়ে তোলা বালুতে ভরাট করা হয়েছিল ওই শিল্পগোষ্ঠীর কয়েক শত বিঘা জমি।</p> <p style="text-align:justify">নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তিরা জানান, কোম্পানির মালিকের কাছে নদীর বালু বিক্রি করে চক্রটি শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে। নদীপাড় ঘেঁষে বিরাট এলাকা জুড়ে বালু তোলার কারণে ভাঙন দেখা দেয়। এতে করে হুমকিতে রয়েছে উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের মাঝেরচর, রায়পুরা ইউনিয়নের সাহারখোলা ও শ্রীনগর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহচর। বালু তোলা অব্যাহত থাকলে এলাকাগুলো বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।</p> <p style="text-align:justify">এ ব্যাপারে কাতলারচর বালুমহালের ইজারাদার আশরাফ হোসেন সরকারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এ কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।</p> <p style="text-align:justify">ভাঙনের খবর শুনে ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি দেখে নদী থেকে ড্রেজার ও বাল্কহেডগুলো সরিয়ে নেন আশরাফ হোসেন সরকারের লোকজন।</p> <p style="text-align:justify">বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার কেন্দ্রীয় বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহসম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল বলেন, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানোর পরও বালু তোলা বন্ধে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি। উপজেলার সাহারখোলা, মির্জাচরসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। এখনই বন্ধ করা না গেলে ভাঙন ঠেকানো যাবে না।</p> <p style="text-align:justify">নরসিংদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী প্রকৌশলী শাহাবুদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, কাতলার চর মৌজার দক্ষিণ পাশের এক কিলোমিটার চর ড্রেজিংয়ের জন্য পাউবোর পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল। যা রিপোর্টে বলা আছে। পরে আমরা সীমানা নির্ধারণ করে দেয়। চর ড্রেজিংয়ের ইজারা নিয়ে সীমানা অতিক্রম করে নদীজুড়ে বালু উত্তোলন করে আসছিল ইজারাদার। রাতের বেলাও সেখানে ড্রেজিং হচ্ছে। ভাঙনের জন্য নদী থেকে বালু তোলাকে দায়ী করেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, আজ বুধবার পাউবোর একটি টিম ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।</p> <p style="text-align:justify">রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান জানান, ভাঙনে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ডিসি স্যার নিদের্শনা দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে। ভাঙনের জন্য যদি বালু উত্তোলন দায়ী হয়ে থাকে, তবে উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া কথা জানান তিনি।</p>